রাজধানীর বাজারগুলোতে গরু ও খাসির মাংসের দাম অনেকটাই আকাশছোঁয়া। এদিকে মাছের বাজারেও দামের উত্থান-পতনে মধ্য ও নিম্নবিত্ত শ্রেণিতে একমাত্র স্বস্তির জায়গা হয়ে উঠেছে মুরগির বাজার। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান বাজারে ব্রয়লার, সোনালি কিংবা দেশি সব ধরনের মুরগির দাম তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকায় ভোক্তাদের বড় অংশ এখন মুরগিতেই নির্ভর করছেন। কেউ কেউ আবার বেশি করে কিনে ফ্রিজে সংরক্ষণও করছেন।
শুক্রবার (২৩ মে) সকালে রাজধানীর বনশ্রী, রামপুরা এবং মালিবাগ এলাকার বাজার ঘুরে এবং বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আজকের বাজারে গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খাসির মাংস মিলছে ১,২৫০ টাকায় এবং ছাগলের মাংস ১,১০০ টাকা কেজি। এসব দামে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা। অনেকে বাজারে এসে গরুর মাংসের দোকান ঘুরে শেষ পর্যন্ত ফিরে যাচ্ছেন মুরগির দিকে।
আজকের বাজারে একটু স্বস্তিজনক অবস্থা বিরাজ করছে মুরগির মাংসে। আজকের বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, সোনালি ২৫০–২৬০ টাকা, সাদা ও লাল লেয়ার ২৫০–২৬০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৫০–৬০০ টাকা এবং হাঁস প্রতি পিস ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে আজকের বাজারে মাছের দামে কিছুটা বৈচিত্র্য দেখা গেছে। কিছু মাছের দাম পূর্বের ন্যায় স্থিতিশীল থাকলেও কিছু মাছের দামে উত্থান-পতন রয়েছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, তেলাপিয়া আর পাঙাশ ছাড়া অধিকাংশ মাছের দাম এখনও উচ্চ। বাজারে প্রতি কেজি রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, কাতল বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, চিংড়ি ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা, টেংরা ৬০০-৭০০ টাকা, চাষের শিং ৪০০-৪৫০ টাকা, চাষের কৈ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, তেলাপিয়া ১৫০ থেকে ২২০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০ থেকে ২২০ টাকা এবং কোরাল মাছ ৭৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়াও আজকের বাজারে প্রতি কেজি বোয়াল ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, পোয়া ৪০০ টাকা, আইড় ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, দেশি কৈ ৮০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা ও দেশি শিং ১০০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রামপুরা বাজারে বাজার করতে আসা হাসিবুর রহমান নামক এক ক্রেতা বলেন, ছেলে-মেয়েরা রুই মাছ খুব পছন্দ করে, কিন্তু এখন তো রুইও ৩৫০ টাকা! তেলাপিয়াতেই ফিরতি পথ খুঁজে নিতে হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্রেতারাই দেখবেন কমদামি মাছের দোকানগুলোতেই ভিড় বেশি। এছাড়া তো কিছু করার নেই।
তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই মাছে-ভাতে বড় হয়েছি, এখন মাছ কিনতে গেলে মাসের বাজেট উল্টে যায়। দেশে মাছের উৎপাদন বাড়লেও দাম কমছে না, বরং দিনে দিনে আরও নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এখন কথা হলো,দেশে এত মাছ চাষ হয়, তাও দাম কমে না কেন? এই প্রশ্নের উত্তর কে দেবে?
পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা চাকরিজীবী ফারজানা ইয়াসমিন বলেন, খুচরা বিক্রেতারা একসময় কম দামে গরুর মাংস বিক্রি করলেও এখন ‘সিন্ডিকেটের চাপে’ পেছিয়ে গেছেন। আর খুচরা বিক্রেতারা দায় দিচ্ছেন পাইকারদের কাঁধে।
তিনি বলেন, এক কেজি গরুর মাংস নিয়েছি ৮০০ টাকায়। দাম কিছুটা বেশিই মনে হচ্ছে। কিন্তু কিছু তো করার নেই। কিছুদিন পরই ঈদ আসছে, জানি না দাম এখানেই থাকে, নাকি আরও বেড়ে যায়।
রফিকুল ইসলাম নামক আরেক ক্রেতা বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে মুরগির দাম এখনও সহনীয়। গরুর মাংসের দিকে তাকাতেও পারি না। তাই একটু বেশি করে মুরগির মাংস কিনে নিয়েছি। আমার মতো আরও অনেকেই নিচ্ছে। বলা তো যায় না, ঈদ উপলক্ষ্যে হয়ত আবারও দাম বেড়ে যাবে।
এদিকে খুচরা পর্যায়ের বিক্রেতারা বলছেন, দাম বাড়া-কমার পেছনে তাদের কোনো অবদান নেই। পাইকারি বাজার থেকে কমে কিনতে পারলে কমেই বিক্রি সম্ভব, যার প্রমাণ ব্রয়লার মুরগি।
মোহাম্মদ আলী নামক এক মুরগি বিক্রেতা বলেন, মুরগির মাংস এখন ভরসার জায়গা। দামও কম, তাই চাহিদা বেশি। মাসখানেক আগেও ব্রয়লার ২০০ টাকার বেশি বিক্রি করেছি। কিন্তু এখন বিক্রি করতে হচ্ছে ১৭০ টাকাতে। কেজিতে দাম ৩০/৪০ টাকা পর্যন্ত কমে গেছে। প্রতি মুরগিতে কোন রকম খরচটা উঠতেছে।
গরুর মাংসের বেশি দাম প্রসঙ্গে মাংস বিক্রেতা আজাহার আলী বলেন, আমরা নিজেরা তো দাম বাড়াই না। পাইকারি বাজার থেকে যদি কমে আসতো, আমরাও কমিয়ে দিতাম। মানুষ ভাবে আমরাই দাম বাড়াই এটা ভুল ধারণা।
মাছ বিক্রেতা জসিম উদ্দিন জানান, মাছের বাজারে খুব বেশি পার্থক্য নেই। কিছু মাছের দাম কিছুটা কমেছে, আবার ইলিশসহ আরও কিছু মাছের দাম বেড়েছে। তবে সবমিলিয়ে ভালোই বিক্রি হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন