
বিদ্যালয়ের প্রায় তিন কোটি টাকা লুটপাট করে ছাত্রজনতার বিপ্লবের পর গা ঢাকা দিয়েছে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি। ঘটনাটি ঘটেছে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার মাঝিড়া মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে।
বিগত সরকারের আমলে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মাধ্যমে উক্ত বিদ্যালয়ে বার বার সভাপতির দায়িত্বে থাকেন উপজেলা আওয়ামি স্বেচ্ছাসেবকলীগে সাধারণ সম্পাদক ও মাঝিড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (পালাতক) নুরুজ্জামান। তার আমলেই অবৈধ ভাবে নিয়োগ পান বর্তমানে পালিয়ে থাকা প্রধান শিক্ষক মির্জা দিলরুবা লাকী। নিয়োগ পরীক্ষায় সকল প্রার্থীকে ফেল দেখিয়ে শুধুমাত্র মির্জা দিলরুবা লাকীকেই পাস দেখানো হয়। যা নিয়োগ বিধিমালার পরিপন্থী। বিভিন্ন সুত্রে জানাযায় এই অবৈধ নিয়োগ পেতে মির্জা দিলরুবা লাকী কে গুনতে হয় লক্ষ লক্ষ টাকা।
তার স্বামী হান্নানুর রহমান শাজাহানপুর উপজেলা আওয়ামিলীগের সহ সভাপতি হওয়ার নিজের প্রক্সি প্রার্থী ছাড়া কাউকেই আসতে দেয়া হয়নি নিয়োগ পরীক্ষার কেন্দ্রে। নিয়োগ পাওয়ার পরই সভাপতির সাথে যোগসাজশে দূর্নীতিতে বেপরোয়া হয়ে উঠে প্রধান শিক্ষক লাকি। দুর্নীতির শুরু করেন সরকারি বই বিক্রির মধ্য দিয়ে। ২০২১সালে মাঝিড়া মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে গচ্ছিত উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের গোডাউন হতে প্রায় ৮লক্ষ টাকার সরকারি বই বিক্রি করেন তিনি। সে সময় এই চুরির ঘটনা ফলাও করে প্রচারিত হয় দেশের স্বনামধন্য পত্র পত্রিকায়। বিষয়টি জানাজানি হলে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়।
স্বামী আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি হান্নানুর রহমান এবং প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সেক্রেটারি নুরুজ্জামানের হস্তক্ষেপে সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিম ও সহকারী শিক্ষক আব্দুস সালামকে ফাঁসিয়ে দিয়ে নিজের নাম কাটান প্রধান শিক্ষক লাকী। এরপর আসে সবচেয়ে বড় লোপাটের সুযোগ।
এশিয়ান হাইওয়ের জমি অধিগ্রহণ করার সময় বিদ্যালয়ের মার্কেট বিল্ডিং সহ ৬শাতাংশ জায়গা সরকারি ভবে অধিগ্রহণ হয়। যার বাজার মুল্য ২কোটি ৯০ হাজার টাকা। সমস্ত টাকা স্কুলের একাউন্টে টাকা জমা হলেও ২০২১সালের জুন মাস থেকে বিভিন্ন সময়ে সুযোগ বুঝে প্রধান শিক্ষক মির্জা দিলরুবা লাকী এবং সভাপতি নুরুজ্জামানের যৌথ স্বাক্ষরে উত্তলন করা হয়। যার কোন হিসাব প্রতিষ্ঠানে নেই।
আদালতে মামলা দায়ের করে নিজ জমি দাবী করা চার ব্যাক্তি প্রতিষ্ঠানের দখলে থাকা মার্কেটের জমি অধিগ্রহণের টাকা উত্তোলন করে। অভিযোগ আছে, জমিটি স্কুলের না মর্মে আদালতে না দাবী দিয়ে টাকা উত্তলনে সহযোগীতা করেছে প্রধান শিক্ষক মির্জা দিলরুবা লাকী। এছাড়াও পরীক্ষার ফিস, টিউশন ফিস সহ বিদ্যালয়ের লক্ষ লক্ষ টাকার হিসাব নেই কোন খাতায়।
প্রাধন শিক্ষক পালিয়ে থাকায় এসব সরকারি অর্থের কোন সুরাহা হচ্ছেনা। প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে ও সহকারি প্রধান শিক্ষকের অসুস্থ্যতার কারনে ৫আগস্টের পর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহসিয়া তাবাসসুম স্কুলের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখতে জৈষ্ঠতার ভিত্তিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেন সিনিয়র শিক্ষক আব্দুল হালিম দুদু কে।
সার্বিক বিষয়ে তার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের সমস্ত আলমারির চাবি নিয়ে গা ঢাকা দেয়ায় আমরা প্রতিষ্ঠানে প্রকৃত ভাবে কত টাকা লোপাট হয়েছে তা সঠিক ভাবে বলতে পারছিনা। তাছাড়া তিনি নিজেকে বাঁচাতে আত্মগোপনে থেকে বিভিন্ন শিক্ষকের উপর দোষ চাপাচ্ছেন যা একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে বেমনান।
প্রধান শিক্ষক মির্জা দিলরুবা লাকীর ব্যক্তিগত ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নাই। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মাহবুবুল হোসেন জানান, বিদ্যালয়টি নিয়ে অনেক অভিযোগ আছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।