
তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা, মহাপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের দাবিতে আজ থেকে লালমনিরহাটে শুরু হচ্ছে ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি। ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন এ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে। এই অবস্থান কর্মসূচিতে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও অংশগ্রহণ করেছেন।
মঙ্গলবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে ১১টি পয়েন্টে অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন তারা। হাতীবান্ধা ফকিরপাড়া মহিলা কলেজ, হাতীবান্ধা এস এস বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, গড্ডিমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বড়খাতা ডিগ্রি কলেজসহ বিভিন্ন বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা যোগ দেন এই কর্মসূচিতে।
১১৫ কিলোমিটার তিস্তা নদীর তীরে আন্দোলনকারীরা অবস্থান করছেন। অবস্থানে রাত্রিযাপনসহ সেখানেই রান্না ও লোকসংগীতের আয়োজন করবেন আয়োজকরা। এ ছাড়া তারা তিস্তার অবস্থা বিশ্ববাসীকে জানাতে রাতে হাজার হাজার মশাল জ্বালাবেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, বর্ষায় আমাদের অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া চালাতে হয়। দীর্ঘদিন থেকে আমাদের পরিবারসহ বাবা-মায়েরা দাবি করে আসছেন। কিন্তু কোনোভাবেই বিগত দিনের সরকার তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এ কারণে এই আন্দোলনের সঙ্গেই আমরা অংশ নিয়েছি।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, এই আন্দোলনের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারকে বুঝিয়ে দিতে চাই। শিক্ষার্থীরা চাইলে দেশ পাল্টে দিতে পারে। যার উদাহরণ এই সরকার। যে কারণে এই আন্দোলনের সঙ্গে তরুণ সমাজও যুক্ত হয়েছে।
রংপুর বিভাগের অন্য জেলাগুলোর মতো লালমনিরহাট জেলার তিনটি স্থানে অবস্থান নেবে মানুষ। এর মধ্যে রয়েছে সদর উপজেলার তিস্তা সেতু এলাকা, মহিপুর তিস্তা সেতু এলাকা ও দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ এলাকা। ৪৮ ঘণ্টার প্রথম দিন সকাল থেকে বিভিন্ন পয়েন্টে মানুষ আসতে শুরু করেছে। অনেকে দলে দলে মিছিল নিয়েও আসছেন।
তিস্তা পাড়ে দুই দিন অবস্থানের জন্য তৈরি হয়েছে মঞ্চ, রাত্রিযাপনের জন্য প্যান্ডেলসহ রয়েছে নানা আয়োজন। রয়েছে পদযাত্রা, আলোচনা, তিস্তায় দাঁড়িয়ে মশাল প্রদর্শন, ডকুমেন্টরি প্রদর্শনসহ নানা আয়োজন। বিকেলে তিস্তা সেতু এলাকা পয়েন্টের আয়োজনে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফফরুল ইসলাম আলমগীর।
তিস্তাপাড়ের মানুষ এ আন্দোলনে অংশ নিয়ে নদীটির করুণ কাহিনি বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে চান, চান পানির ন্যায্য হিস্যাসহ তিস্তায় বাঁধ ও খনন।
তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন সমন্বয়ক ব্যারিস্টার হাসান রাজীব প্রধান বলেন, সকাল থেকে বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ মন্ত্রস্থলে আসা শুরু করেছে। আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। এই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের। ৪৮ ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচিতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন। সেখান থেকেই তিস্তা আন্দোলনের নির্দেশনা আসবে বলেও জানান তিনি।
ফকিরপাড়া মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী তাবাসসুম বলেন, ছোট থেকে বর্ষাকালে ভিজে আমরা স্কুলে গিয়েছি। অনেক সময় নৌকায় পার হয়ে কলেজে ভর্তি হয়েছি। এসব কখনোই ভুলে যাওয়ার মতো নয়। তাই আমরা এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি।
বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, আমরা বিশ্বাস করতে পারছি না সর্বস্তরের মানুষ এভাবে এ আন্দোলনের সঙ্গে শরিক হবেন। আমার বিশ্বাস এই আন্দোলনে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন সফল হবে। এই আন্দোলনে আমাদের কেন্দ্রীয় নেতারাও অংশগ্রহণ করছেন। শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানিয়ে দুলু বলেন, শিক্ষার্থীরা নিজ ইচ্ছায় এ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। যার ফলে আমাদের এ আন্দোলনের উৎসাহ আরও বেড়ে গেছে। আমরা চাই তরুণ সমাজের মাধ্যমে এ আন্দোলন আরও বেগবান হোক। সফল হোক তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন।