জমজ সেই মনি-মুক্তা ১৫ বছরে পা দিল

 বিকাশ ঘোষ, প্রতিবেদক
প্রকাশের সময়: সোমবার, ২১ আগস্ট, ২০২৩ । ৮:০৬ অপরাহ্ণ
বাংলাদেশের চিকিৎসক এ আর খানের সাফল্য বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রাকে সম্ভাবনাময় করেছে। আর সাফল্যকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে প্রথম অস্ত্র পাচারের মাধ্যমে জোড়া লাগানো শিশুর সফল পৃথকীকরণ করা হয়। এই সাফল্যের ইতিহাস বীরগঞ্জের জোড়া লাগানো জমজ দুই বোন মনি-মুক্তার।
সেই ইতিহাস ১৫বছর পূবের্র। বাবা মায়ের কোলে নানা চড়াই উতরাই পেরিয়ে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত পল্লীতে বেড়ে উঠা মনি মুক্তা এখন ১৫বছরে পা দিয়েছে। তারা দুজনে স্থানীয় ঝাড়বাড়ী দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশুনা করছে। আজ মঙ্গলবার নিজ বাড়িতে পালন করা হবে মনি-মুক্তার জন্ম দিন। প্রতি বছরের ন্যায় পরিবারের উদ্যোগে আত্মীয় স্বজন, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মনি-মুক্তার বন্ধুবান্ধবসহ প্রতিবেশি এবং গণ মাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতিতে কেক কেটে জম্ম বার্ষিকী পালন করা হবে বলে জানান মনি-মুক্তার বাবা জয় প্রকাশ পাল।
তিনি আরো জানান, মনি মুক্তা সুস্থ এবং ভালো আছে। লেখা-পড়ার পাশাপাশি স্থানীয় ভাবে নাচ শিখছে। উপজেলার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে বেশ কিছু পুরুস্কার অর্জন করেছে, পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বেশ সুনাম অর্জন করেছে তারা। জন্মদিনে দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে মনি-মুক্তা বলেন, আমরা চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করতে চাই। দেশবাসীর দোয়া এবং সহযোগিতা পেলে আমরা অবশ্যই আমাদের স্বপ্ন পুরন করতে পারবো। দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নের পালপাড়া গ্রামের শরৎ চন্দ্র পালের পুত্র জয় প্রকাশ পাল। জয় প্রকাশ পালের স্ত্রী কৃষ্ণা রাণী পালের গর্ভে ২০০৯ সালের ২২ শে আগস্ট পার্বতীপুর ল্যাম্ব হাসপাতালে সিজারিয়ান সেকশনে অস্ত্র পাচারের মাধ্যমে মনি এবং মুক্তা জোড়া লাগা অবস্থায় জন্ম নেয়। পরে রংপুরের চিকিৎসকগণ ঢাকা শিশু হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে যমজ বোনকে অস্ত্র পাচারের মাধ্যমে পৃথক করার পরামর্শ দেন। তাদের পরামর্শ ক্রমে ২০১০ সালের ৩০ জানুয়ারী ঢাকা শিশু হাসপাতালে মনি-মুক্তাকে ভর্তি করা হয়। অতঃপর ২০১০ সালের ০৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা শিশু হাসপাতালে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. এ আর খানের সফল অপারেশনের মাধ্যমে মনি-মুক্তা ভিন্ন সত্ত্ব লাভ করে। বাংলাদেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানে সৃষ্টি হয় এক নতুন ইতিহাস।
মনি-মুক্তার বাবা জয় প্রকাশ পাল জানান, সে সময় গ্রামের মানুষ এটাকে অভিশপ্ত জীবনের ফসল বলে প্রচার করতে থাকে। সমাজের নানা কুসংস্কারে প্রায় এক ঘরে হয়ে পড়ি। সমাজের নানা অপবাদে গ্রামে আসিনি। হতাশার মাঝে স্বপ্ন দেখি মনি-মুক্তাকে নিয়ে। বিভিন্ন চিকিৎসকের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে থাকি তাদের স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাওয়ার জন্য। আমাদের স্বপ্ন বাস্তব হয় ডা. এ আর খানের কারণে। সেই মানুষটির কারণে আমাদের এই দুই সন্তানের নতুন করে বেঁচে থাকা।
মনি-মুক্তার মা কৃষ্ণা রাণী পাল জানান, ২০০৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে প্রথমে ২১ ফ্রেরুয়ারি পার্বতীপুরে বাবার বাড়িতে আসি। কিছুদিন সেখানে থাকার পর নিজগ্রাম বীরগঞ্জ উপজেলার পালপাড়ায় মনি-মুক্তাকে নিয়ে আসি। সৃষ্টি কর্তার আর্শিবাদে এবং ডা. এ আর খানের সাফল্যে আমরা মনি মুক্তাকে স্বাভাবিক ভাবে ফিরে পেয়েছি। আমরা সব কষ্ট ভূলে তাদেরকে চিকিৎসক হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
মনি-মুক্তা এবং পরিবারের জন্য সকলের দোয়া কামনা করেছেন তিনি। মনি-মুক্তার একমাত্র বড় ভাই সজল কুমার পাল জেলার খানসামা কলেজ হতে বাংলা বিভাগে অনার্স পাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন তার বাবা জয় প্রকাশ পাল।
প্রকাশক ও সম্পাদক : মাহাবুর রহমান আঙ্গুর কর্তৃক মাহাবুব মার্কেট, নিচ তলা (রুম-১৬), বীরগঞ্জ, দিনাজপুর থেকে প্রকাশিত ।
ফোন : +৮৮০৯৬৯৬৫৫৫৭৩৯, বিজ্ঞাপন : ০১৭১৬৫০৮৩১৪, ০১৭৮৩২৫৫৭৩৯, ই-মেইল : info@uttarerkantho.com.

প্রিন্ট করুন