শুধু একটা অনুষ্ঠান সঞ্চালনে এত দিন জেল!

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, জবি
প্রকাশের সময়: সোমবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৩ । ৩:৪০ অপরাহ্ণ

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, খাদিজাতুল কুবরাকে বিনা বিচারে ৩৬৫ দিন জামিন না দিয়ে কারাগারে আটক রাখা স্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন। খাদিজার আটকের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করেছে সরকার। এ ভয়ের সংস্কৃতি এতটাই প্রখর হয়েছে যে তার কারণে খাদিজার উপর চলমান অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষকেরা মুখ বন্ধ করে আছে। এটা চলতে পারে না।
তারা আরও বলেন, খাদিজাকে যে অভিযোগের প্রেক্ষিতে মামলা দেওয়া হয়েছে তা কখনোই রাষ্ট্রদ্রোহী হতে পারে না। খাদিজা যে প্রশ্নগুলো করেছিল সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সে প্রশ্নগুলো সকল সাধারণ মানুষের মনের কথা। আমরা আজকে খাদিজার মুক্তি নিয়ে লড়াই করছি, এটা শুধু খাদিজার মুক্তির জন্য নয়, এটা আমাদের সকলের মুক্তির লড়াই।

আজ দেশে যদি বাকস্বাধীনতা থাকতো তাহলে আমার সহপাঠীকে বিনা বিচারে এক বছর কারাগারে থাকতে হতো না। আমরা যদি বাকস্বাধীনতার সুফল না পেয়ে থাকি তাহলে সংবিধান থেকে বাকস্বাধীনতার বিষয়টি তুলে দিতে পারেন।

আরেক শিক্ষার্থী সুমাইয়া সোমা বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অকার্যকর প্রশাসন আছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির কাছে আমরা গিয়েছিলাম। তারা বলেছে- খাদিজাকে নিয়ে যারা কথা বলবে, তারাও রাষ্ট্র বিরোধীতার অপরাধে দোষী হবে। যারা নিজেদের প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষার্থী জেলে থাকলেও নির্লিপ্ত অবস্থান গ্রহণ করে। এ ধরনের প্রশাসন আমাদের দরকার নেই।

এ শিক্ষার্থী প্রশ্ন রাখেন, খাদিজা কি চোর, ডাকাত? সে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী। শিক্ষক হিসেবে আপনাদের কি কোনো লজ্জা নেই? আপনাদের একজন শিক্ষার্থী এক বছর ধরে জেলে আছে। কিন্তু আপনারা তার জন্য কিছুই করতে পারলেন না। এর চেয়ে লজ্জার কিছু হতে পারে না।

মানববন্ধনে খাদিজার মা ফাতেমা খাতুন মোবাইল ফোনে যুক্ত হয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, এক বছর হয়ে গেল খাদিজাকে আমি পাশে নিয়ে ঘুমাতে পারি না। কোন অপরাধে আমার মেয়েকে আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হলো? এটা আমার জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক। আজ সকলেই কিন্তু আছে আমার মেয়ে নেই। আমার মেয়েকে যেন আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, খাদিজা দীর্ঘদিন ধরে কিডনি সমস্যায় আক্রান্ত। আমি আমার মেয়েকে চিকিৎসা করাতেও পারলাম না। খাদিজার চিন্তায় আমি নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়েছি।

মানববন্ধনে খাদিজার বোন সিরাজুম মনিরা বলেন, আমার বোন কী অপরাধ করেছে? আজকে এক বছর ধরে জেলে আছে। জেলে দেখা করতে গেলে খাদিজা জিজ্ঞাসা করে, কেন আমি এত দিন কারাগারে? সে কী এমন অপরাধ করেছে! এত দিন তাকে বিনা বিচারে আটক রাখতে হবে। আমার বোনকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে আগামী নভেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বশরীরে উপস্থিত থেকে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, আমি শিক্ষকদের প্রতিনিধি হয়ে নয়, নিজের তাড়না থেকে আজকের মানববন্ধনে উপস্থিত হয়েছি। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী এভাবে দীর্ঘদিন কারাগারে থাকতে পারে না। একটা শিক্ষার্থী এত দিন কারাগারে আছে, সে মানসিক বিপর্যস্ত ও ট্রমার মধ্যে আছে। অতিসত্বর তাকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

প্রসঙ্গত, অনলাইনে সরকারবিরোধী বক্তব্য প্রচার এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অভিযোগে ২০২০ সালের অক্টোবরে খাদিজাতুল কুবরার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কলাবাগান ও নিউমার্কেট থানায় পৃথক দুটি মামলা করে পুলিশ।

মামলায় অভিযোগে বলা হয়, খাদিজাতুল কুবরা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশের বৈধ সরকারকে উৎখাতের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী, সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মনগড়া, বানোয়াট, মিথ্যা, মানহানিকর অপপ্রচার চালিয়ে আসছিলেন। ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা, বিদ্বেষ সৃষ্টির অপচেষ্টাসহ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের প্রয়াস চালাচ্ছেন তিনি।

প্রকাশক ও সম্পাদক : মাহাবুর রহমান আঙ্গুর কর্তৃক মাহাবুব মার্কেট, নিচ তলা (রুম-১৬), বীরগঞ্জ, দিনাজপুর থেকে প্রকাশিত ।
ফোন : +৮৮০৯৬৯৬৫৫৫৭৩৯, বিজ্ঞাপন : ০১৭১৬৫০৮৩১৪, ০১৭৮৩২৫৫৭৩৯, ই-মেইল : info@uttarerkantho.com.

প্রিন্ট করুন