
চলতি আইসিসি বিশ্বকাপের সবচেয়ে আলোচিত ও হাইভোল্টেজ ম্যাচে আজ (শনিবার) মুখোমুখি হবে বিশ্ব ক্রিকেটের দুই পরাশক্তি ভারত ও পাকিস্তান। আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় দুপুর আড়াইটায় শুরু হবে ম্যাচটি।
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই রোমাঞ্চের বারুদে ঠাসা এক দ্বৈরথ। আর দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর সাক্ষাত যদি হয় বিশ্বকাপের মঞ্চে, তাহলে তো কথাই নেই। ক্রিকেটপ্রেমীদের উন্মাদনা থাকে তুঙ্গে।
সেই বাড়তি আগ্রহ আবার সীমাহীন চাপ হয়েও জেঁকে বসে খেলোয়াড়দের ওপর। কারণ ম্যাচটিকে মর্যাদার লড়াই হিসেবে অভিহিত করেন দুই দেশের ভক্তরা। আর সেখানে হারের কোনো স্থান নেই।ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই অন্যরকম এক উত্তেজনা
দিল্লিতে রোহিতের রেকর্ডে মোড়ানো বিধ্বংসী সেঞ্চুরিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বড় জয়ের পর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ভারতের অধিনায়কের কাছে আসন্ন পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে প্রশ্ন রাখা হয়।
তিনি জবাব দেন, ‘আমাদের জন্য যেটা গুরুত্বপূর্ণ- আমরা যেন বাইরের কোনোকিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা না করি, যেন সেই জিনিসগুলোর দিকে মনোযোগী থাকি যেগুলো আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। আমাদের কেবল মাঠে নামতে হবে এবং ভালো খেলতে হবে।’ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই যেনো অন্যরকম এক উত্তেজনা
বহুল প্রতিক্ষিত এই ম্যাচের আগে বার্তা সংস্থা এএফপি দুই দলের মধ্যকার চার লড়াইকে সামনে নিয়ে এসেছে-
বিরাট কোহলি বনাম হারিস রউফ
গত বছর মেলবোর্নে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বড় রান তাড়া করতে গিয়ে হারিস রউফের সাথে বিবাদে জড়িয়েছিলেন বিরাট কোহলি। পাকিস্তানের দেয়া ১৬০ রানের টার্গেট তাড়া করতে গিয়ে ভারতের সামনে জয়ের জন্য ১৮ বলে ৩১ রানের প্রয়োজন ছিল। রউফের ওভারে দুটি বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে কোহলি এমসিজের স্টেডিয়াম ভর্তি পাকিস্তানী দর্শকদের নিশ্চুপ করে দিয়েছিলেন। এর মধ্য প্রথমটি ছিল গুড লেন্থের বল যেটাতে কোহলি স্ট্রেট খেলেছিলেন। এরপর ফাইন লেগ দিয়ে ফ্লিক করে পরের ওভার বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ভারতের জয় নিশ্চিত করেন।
পরবর্তীতে কোহলি বলেছিলেন ছক্কাগুলো ছিল ‘সহজাতপ্রবৃত্তি’। কিন্তু তারপর থেকেই রউফের সাথে কোহলির একটি ঠান্ডা লড়াই চলে আসছে যা আহমেদাবাদেও দেখার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাবর আজম বনাম জাসপ্রিত বুমরাহ সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত ২০২১ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানী অধিনায়ক বাবর আজমের ক্ষমতা সম্পর্কে ভালই অবগত হয়েছেন জসপ্রিত বুমরাহ। ভারতীয় পেস আক্রমনে ‘ইয়র্কার কিং’ হিসেবে পরিচিত বুমরাহসহ অন্যান্য পেসারদের অনায়াসেই খেলে গেছেন বাবর। সাবলীল ব্যাটিং দিয়ে দুবাইয়ে তিনি ও মোহাম্মদ রিজওয়ান মিলে পাকিস্তানকে ১০ উইকেটের জয় উপহার দিয়েছিলেন।
কিন্তু দুই বছর পর বুমরাহ ও তার সতীর্থরা মিলে বাবর বাহিনীকে ভালই শিক্ষা দিয়েছে। এশিয়া কাপের সুপার ফোরে ২২৮ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে পাকিস্তানের ইনিংস ১২৮ রানেই গুটিয়ে যায়। কলম্বোর ম্যাচটিতে বুমরাহর বেশ কয়েকটি ডেলিভারিতে বাবর খেলতে ব্যর্থ হয়েছে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য পাকিস্তানী অধিনায়ককে সাজঘরের পথ দেখিয়েছিলেন হার্ডিক পান্ডিয়া।
ইফতিখার আহমেদ বনাম কুলদ্বীপ যাদব মিডল অর্ডার পাকিস্তানী ব্যাটার ইফতিখার আহমেদ মাঝে মাঝেই ব্যাট হাতে তার দক্ষতা দেখাতে পারদর্শী। কিন্তু গত মাসে এশিয়া কাপে ভারতীয় স্পিনার কুলদ্বীপ যাদবের কাছে ২৩ রানে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হন ইফতিখার। নিজের বলে নিজেই ক্যাচ নিয়ে ইফতিখারকে ফেরত পাঠান কুলদ্বীপ। বাঁ-হাতি রিস্ট স্পিনার কুলদ্বীপ ঐ ম্যাচে ২৫ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন।
বোলারদের উপর ভর করে ভারত ১০০ রানের বিশাল জয় তুলে নেয়। সদ্য সমাপ্ত ঐ ম্যাচটির স্মৃতি হয়তোবা ভারত ফিরিয়ে আনতে চাইবে আহমেদাবাদে। আজকের ম্যাচে ইফতিখারের মূল দায়িত্বই হবে মিডল অর্ডারে ভারতীয় স্পিনারদের প্রতিরোধ করা। একইসাথে স্কোরবোর্ডে রানের গতি সচল রাখা।
রোহিত শর্মা বনাম শাহিন শাহ আফ্রিদি সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানের বাঁ-হাতি পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদির গতির সামনে ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা নিজেকে খুব একটা মেলে ধরতে পারেননি। গত মাসে পাল্লেকেলেতে এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে রোহিতের অফ স্টাম্প উড়িয়ে দিয়েছিলেন শাহিন। বাজে ফুটওয়ার্কের কারনে মাত্র ১১ রানে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছিলেন রোহিত।
তবে কলম্বোতে পরের ম্যাচে রোহিত বেশ সাবধানে খেলেছেন। শাহিনের প্রথম ওভারে তার একটি ওভার বাউন্ডারিও ছিল। এই দুইজনের দ্বৈরথ শুরু হয়েছে ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে। দুবাইয়ে শাহিন তার প্রথম ওভারেই পেস ও সুইং দিয়ে রোহিতকে শুন্য রানে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেছিলেন।
উল্লেখ্য, ওয়ানডে বিশ্বকাপে সাতবারের দেখায় পাকিস্তানের কাছে কখনোই হারেনি ভারত। এই রেকর্ড অক্ষুণ্ণ রাখার লক্ষ্য থাকবে রোহিতদের। গত বিশ্বকাপে দুই দলের লড়াইয়ে ডিএলএস পদ্ধতিতে ৮৯ রানের জিতেছিল ভারতীয়রা।
উত্তরের কন্ঠ /এ,এস