
দিনাজপুরের বীরগঞ্জের ঘোষ ডেইরী খামারের ৪৬টি গবাদি পশুর মৃত্যুর কারণ ক্ষুরা রোগ বলে জানিয়েছেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। বৃহস্পতিবার দুপুরে বীরগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে এক প্রেস বিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন জেলা ভেটেরিনারি অফিসার ডাঃ আশিকা আকবর তৃষ্ণা। প্রেস বিফিংয়ে তিনি বলেন, খামারে এতোগুলি গবাদি পশুর মৃত্যুর পাঁচটি কারণ চিহিৃত করেছেন ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম। রোগের ইতিহাস, খামার পরিদর্শন, রোগের লক্ষণ, ময়না তদন্ত এবং ল্যবরেটরি টেস্টের ফলাফলের ভিত্তিত্বে গবাদি পশুর মৃত্যুর মূল কারণ ক্ষুরা রোগ এর সেরোটাইপ-০ এবং এশিয়া-১ ভাইরাস। খামারের ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত নাজুক বিধায় আক্রান্ত অবস্থায় ক্ষুরারোগের টিকা প্রয়োগ জনিত ধকলের কারণে পাস্টুরেলা মাল্টোসিডা নামক সুবিধাদি ব্যাক্টেরিয়ার দ্বিতীয় পর্যায়ে সংক্রমণের মাধ্যমে হেমোরেজিক সেপ্টিসেমিয়া গবাদি পশুর মৃত্যুকে তরান্বিত করেছে।
ক্ষুরারোগ ভাইরাস ও পাস্টুরেলা মাল্টোসিডা ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমন, অপর্যাপ্ত পানি সরবরাহের ব্যবস্থাপনার কারণে পানি শুন্যতায় অধিক মৃত্যু সংগঠিত হয়েছে বলে চিহিৃত করেছে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম। এ ঘটনায় ৯টি সুপারিশমালার কথা উল্লেখ করে আগামী দিনে এ ধরণের বিপর্যয় প্রতিরোধে গৃহিত পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, খামারিদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং খামারগুলিতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের যথাযথ রোধ নির্ণয় ও চিকিৎসায় গত ৫দিন ধরে খামারে গবাদি পশুর মৃত্যু হয়নি। এ ধরণের সংক্রমণে শতভাগ মৃত্যুর আশঙ্কা থাকলেও সকলের সহযোগিতা দ্রুত সময়ে খামারের গবাদি পশুর মৃত্যুহার শুণ্যের কোটায় চলে আসা এবং খামারের ব্যবস্থাপনা নাজুক থাকা সত্বেও ৫০ভাগ গবাদি পশুর মৃত্যু আটকে গেছে। এটিকে প্রাণিসম্পদ দপ্তরের একটি সফলতা বলে উল্লেখ করেন তিনি।
প্রেস বিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ গোলাম কিবরিয়া, কাহালোর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আবু সরফরাস হোসেন, বীরগঞ্জ উপজেলা প্রানিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ ওসমান গনি এবং উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জন ডাঃ শামীমা বেগম। এ ঘটনায় ৮০লক্ষ টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে অর্থিক সহায়তার আবেদনে উল্লেখ করেছেন ক্ষতিগ্রস্থ খামারি। উল্লেখ, উপজেলার সাতোর ইউনিয়নের প্রাননগর ঘোষপাড়ার বাসিন্দা মৃত গীরেন্দ্রনাথ ঘোষের ছেলে গোপাল ঘোষ ও গোবিন্দ ঘোষের গরু খামারের শতাধিক গরু আক্রান্ত হয়। ৫ডিসেম্বর হতে একের পর এক আক্রান্ত গরু মারা যেতে থাকে। ঘটনার পর থেকে ১৬ডিসেম্বর পর্যন্ত মৃত্যুর মিছিলে যোগ হয় ২টি মহিষসহ খামারের মোট ৭০টি গবাদি পশু।
অজানা রোগে এতোগুলি গবাদি পশুর মৃত্যুর ঘটনা এটি বাংলাদেশে প্রথম বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর। ঘটনার পর মৃত গবাদি পশুর নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকার কাজী আলাউদ্দিন রোডে অবস্থিত কেন্দ্রিয় রোগ অনুসন্ধান গবেষণাগারে প্রেরণ করা হয়। পরীক্ষা-নীরিক্ষা শেষে ২১ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার জেলা উপজেলার গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিক রোগের রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়।
উত্তরের কন্ঠ /এ,এস, জলিল