পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করো, তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয়ই আমার আজাব বড় কঠিন।’ (সুরা ইবরাহিম: ৭)
প্রসন্ন হৃদয়ে, বিনয়-নম্রতার সঙ্গে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের বিশেষ প্রতিদান হলো- আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। মহান রবের সন্তুষ্টিতে কৃতজ্ঞ বান্দাদের জীবন সুখময় হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘…শিগগিরই আল্লাহ শোকর আদায়কারীদের প্রতিদান দেবেন।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৪৪)
রাসুল (স.) একবার মুআজ (রা.)-কে বলেছেন, হে মুআজ, আল্লাহর শপথ! আমি তোমাকে ভালোবাসি। (এভাবে ভালোবাসার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে) এরপর বললেন, হে মুআজ, আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি যে তুমি প্রত্যেক সালাতের শেষে এই দোয়া পাঠ করবে—‘আল্লাহুম্মা আইন্নি আলা জিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনে ইবাদাতিকা।’ অর্থ: হে আল্লাহ, তুমি আমাকে তোমার জিকির, শুকরিয়া (কৃতজ্ঞতা) এবং ইবাদত করতে সাহায্য করো। (আবু দাউদ: ১৫২৪)
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ মুমিনের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। নবীজির পছন্দের আমল। পরকালীন সমৃদ্ধির পাশাপাশি দুনিয়ার জীবনেও আল্লাহর পক্ষ থেকে অধিক পরিমাণ নেয়ামত লাভের মাধ্যম। রাসুল রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- খেয়ে যে আল্লাহর শোকর আদায় করে সে ধৈর্যশীল রোজাদার ব্যক্তির সমান পুরস্কার লাভ করবে। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৭৬৫)
আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। যেমন—
১. অন্তরে শুকরিয়া আদায় করা। এর পদ্ধতি হলো- আল্লাহকে ভয় করা, তাঁর অবাধ্যতার মানসিকতা না থাকা এবং তাকওয়া অবলম্বন করা।
২. ভাষার মাধ্যমে শুকরিয়া আদায় করা। অর্থাৎ মুখে নেয়ামতের শুকরিয়া প্রকাশ করা, গণনা করা ইত্যাদি। বুজুর্গ ব্যক্তিরা জবান দিয়ে দিন-রাত আল্লাহর প্রশংসা ও শুকরিয়া আদায় করেছেন। ফুজাইল ইবনে আয়াজ (রহ.) ও ইবনে উয়াইনা (রহ.) একবার রাতে আল্লাহর প্রশংসা করার জন্য বসেছিলেন। তাঁরা আল্লাহর প্রশংসা করতে করতে সকাল করে ফেললেন।
৩. অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে শুকরিয়া আদায় করা। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে শুকরিয়া হলো- সালাত আদায় করা ও বেশি বেশি নেক আমল করা। রাসুল (স.) জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে কার্যকারণ পরিবর্তনের সঙ্গে নতুন নতুন পরিস্থিতিতে আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা আদায় করতেন। যেমন—তিনি ঘুম থেকে উঠে বলতেন, সব প্রশংসা মহান আল্লাহর, যিনি আমাদের মৃত্যু দেওয়ার পর আবার জীবন দান করেছেন। আর তাঁর কাছেই তো আমাদের একত্র করা হবে। (সহিহ বুখারি: ৩১১২)
৪. নেয়ামতের সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে শুকরিয়া আদায় করা। আল্লাহর দেওয়া নেয়ামতের অপব্যবহার করলে, অবাধ্যতা ও সীমালঙ্ঘন করলে তা নিশ্চিতভাবেই আল্লাহর নেয়ামতের অকৃতজ্ঞতা হবে। তাই আল্লাহর যেকোনো নেয়ামতের অপব্যবহার যেন না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের বিশেষ দোয়া
নবীজি (স.) উম্মতকে আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায়ের একটি দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন, যা সকাল-সন্ধ্যায় পড়লে সারাদিনের শুকরিয়া আদায়ের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে। দোয়াটি মুখস্থ রাখা উত্তম। সেই দোয়াটি হলো- اللَّهُمَّ مَا أَصْبَحَ بِي مِنْ نِعْمَةٍ أَوْ بِأَحَدٍ مِنْ خَلْقِكَ فَمِنْكَ وَحْدَكَ لا شَرِيكَ لَكَ ، لَكَ الْحَمْدُ وَلَكَ الشُّكْرُ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা মা আসবাহা বী মিন নি’মাতিন আও বিআহাদিম মিন খালকিকা ফামিনকা ওয়াহদাকা লা শারীকা লাকা, লাকাল হামদু ওয়ালাকাশ-শোকরু।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! এই সকালে আমার মাঝে বা আপনার যেকোনো সৃষ্টির মাঝে যা কিছু নেয়ামত, সব আপনারই তরফ থেকে। আপনি একক, আপনার কোনো শরিক নেই। সুতরাং আপনারই প্রশংসা, আপনারই কৃতজ্ঞতা।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৫০৭৩; সহিহ ইবনে হিববান: ২৩৬১; আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলা, ইবনুস সুন্নি: ৪২)
অতএব, জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করা মুমিন বান্দার কর্তব্য। বিশেষ নেয়ামত লাভ করলে তা একান্ত কর্তব্য ও দায়িত্ব। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।