
বোরো ধান চাষে বিঘাপ্রতি খরচ পড়ে অন্তত ১৪ হাজার টাকা। কিন্তু নদীর বুকে চাষে খরচ মাত্র চার হাজার টাকা। তাই বীরগঞ্জের ভূমিহীনরা শুকনো মৌসুমে নদীর বুকে ধান চাষে ঝুঁকছেন। এর মাধ্যমে নদীতীরের দরিদ্র পরিবারের কয়েক মাসের খাবার জোগান হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বীরগঞ্জের ঢেপা নদীতে প্রতিবছর এই সময়ে নদীর পানি আটকে রাখা হয়। যার ফলে চর সৃষ্টি হয়। আর এই সুযোগে তীরবর্তী ভূমিহীনরা চাষাবাদ করে। নদীর সামান্য পানিতে তাদের সেচ চলে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রোপণ-পরবর্তী পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা। নদীতে ধানের সবুজ চারাগাছ বাতাসে দোল খাচ্ছে। চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিজস্ব জমি না থাকায় তারা ফসল চাষাবাদ করতে পারে না। তাই নদীর চরকে ফসল ফলানোর জন্য বেছে নিয়েছে।
অন্যদিকে সেচ দেওয়া পানির চেয়ে নদীর সামান্য পানি দিয়ে বোরো চাষে অনেক বেশি উপকারী হচ্ছেন কৃষকরা। এতে সার ও সেচসহ সব কিছুতে সাশ্রয় হয়। বিশেষত ভূমিহীন চাষিরা ১০-১২ বছর ধরে এই চরে বোরো ধান চাষ করছে। নভেম্বর থেকে পানি কমে গেলে চরের জায়গা দখলে নিয়ে চাষের উপযোগী করে তোলার জন্য কাজে নেমে পড়ে। মাস দুয়েক পরিশ্রম করে বেদা ও কোদাল দিয়ে আইল বেঁধে পানি আটক করা হয়। ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে জমি সমান করার পর ধান রোপণ করা হয়।
চাষিরা জানায়, নদীতে বোরো ধান চাষে বিঘাপ্রতি খরচ হয় প্রায় চার-পাঁচ হাজার টাকা। বিপরীতে এক বিঘা জমিতে ধান আসে ২৫ থেকে ৩০ মণ। আগাম ধান লাগানোর কারণে জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথম সপ্তাহে ফসল ঘরে তুলতে পারে চাষিরা। আর সমতলে বিঘাপ্রতি ১৪-১৬ হাজার টাকা খরচ করে ৩০ থেকে ৩৫ মণ ধান পাওয়া যায়।
বীরগঞ্জের স্লুইচগেট বাজারের ভূমিহীন মালেক ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কোনো জমি-জায়গা নেই। তাই বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ঢেপা নদীর এক বিঘার মতো জমিতে বোরো ধান চাষ করেছি। এই ধান থেকেই আমার চার সদস্যের পরিবারের কয়েক মাসের খাবারের জোগান হয়।’
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মো. শরিফুই ইসলাম জানান, তীরবর্তী দরিদ্র জনগোষ্ঠী নদীতে বোরো চাষ করছে। আগে এসব চর পতিত থাকত। এখন চাষ করে চাষিদের কয়েক মাসের খাবারের জোগান হচ্ছে। সেই সঙ্গে এই মৌসুমে কৃষকদের পাশাপাশি নদীতে চাষ করা বোরো সাধারণ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রায় সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।