অনানুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতারা শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসেনি। এমতাবস্থায় ১ জুলাই থেকে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করা হবে বলে জানা গেছে।
রোববার (২২ জুন) শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের এক সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ অবস্থায় আসন্ন জুলাই মাসের শুরু থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ হয়ে অচল অবস্থার মধ্যে পড়তে যাচ্ছে দেশের অর্ধশতাধিক উচ্চশিক্ষার এসব প্রতিষ্ঠান।
গ্রীষ্মকালীন ও ঈদের দীর্ঘ ছুটির পর শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরতে শুরু করলেও ক্লাস-পরীক্ষা না হওয়া নিয়ে রয়েছেন দুশ্চিন্তায়। আবার অনেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট ফিরতে পারে বলে মনে করছেন।
জানা যায়, গত বছরের আগস্টে চালু হওয়া সর্বজনীন পেনশনে নতুন প্রত্যয় স্কিম যুক্ত করেছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। গত ১৩ মার্চ এ নিয়ে দু’টি পৃথক প্রজ্ঞাপনে প্রত্যয় স্কিমের রূপরেখা ঘোষণা করা হয়। পরে ২০ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নতুন এ স্কিমের বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়। এরপর তিন দাবিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করে।
তাদের তিনটি দাবি হলো, গত ১৩ মার্চ অর্থমন্ত্রণালয় কর্তৃক জারি করা প্রত্যয় স্কিমের পেনশন বিষয়ক বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন।
এ তিনটি দাবির কোনোটি সরকার থেকে এখন পর্যন্ত মানা হয়নি। তাই শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন আন্দোলন চলমান রেখেছে।
তিন দাবিতে বিবৃতি দেওয়া, গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, মানববন্ধন, স্মারকলিপি দেওয়া এবং অবস্থান কর্মসূচির মতো শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হলেও এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। দু’পক্ষের অনড় অবস্থানের কারণে অচল অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে।
শিক্ষকদের দাবি, প্রস্তাবিত প্রত্যয় স্কিম বাস্তবায়ন হলে বর্তমান শিক্ষার্থী যারা আগামী দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় আসতে আগ্রহী, তারাই এর ভুক্তভোগী হবেন। তাই তাদের চলমান আন্দোলন আগামী দিনের তরুণ সমাজের স্বার্থরক্ষা তথা উচ্চ শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের চক্রান্তের বিরুদ্ধে।
গত ৪ জুন দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ডাকা অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালিত হয়। এদিন দুপুরে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন শেষে হাবিপ্রবির নতুন একাডেমিক ভবনে শিক্ষক সমিতির নেতারা ২৪ জুন পর্যন্ত সরকারকে সময় বেঁধে দেন।
ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ২৫, ২৬ ও ২৭ জুন অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করবেন শিক্ষকরা। এছাড়া ৩০ জুন শিক্ষকরা পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করবেন। তবে, পরীক্ষা কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে। দাবি আদায় না হলে আগামী ১ জুলাই থেকে দেশের সবকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালিত হবে।
হাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. সাদেকুর রহমান বলেন, আমরা আগামী ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যাচ্ছি। এসময় সকল দফতরের দাফতরিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। লাইব্রেরির কার্যক্রমও এর আওতায় থাকবে।
এদিকে, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া নবীন শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারাও।