বীরগঞ্জে মহাসড়কে আলু ফেলে প্রতিবাদ কৃষকদের

হিমাগার ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে মহাসড়কে আলু ফেলে অবরোধ কৃষক ও ব্যবসায়ীদের। আজ বৃহস্পতিবার দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার শহীদ মিনারের সামনের পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কে। ছবি: উত্তরের কণ্ঠ
দিনাজপুরের বীরগঞ্জে কোল্ড স্টোরেজ মালিকদের ভাড়া বাড়ার প্রতিবাদ সমাবেশ ও মহাসড়ক অবরোধ করেছে আলু চাষী ও আলু ব্যবসায়ী সমিতি লিঃ। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০ সাড়ে ১০ দিকে ঢাকা-পঞ্চগড় মহাসড়কের পৌর শহরের শহীদ মিনার চত্বরে আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমিতির ব্যানারে মানববন্ধন হয়। পরে ১ঘন্টা সড়ক অবরোধ করে রাখে, এতে ওই মহাসড়কে যান চলাচল ব্যাহত হয়।
এ সময় দাবি পূরণে রাস্তায় আলু ফেলে গড়াগড়ি করে কৃষকরা। মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হলে বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলে এলাহী ও থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল গফুর এসে জেলা প্রশাসক কে অবহিত করেন। সমাধানের আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন। পরবর্তী সময়ে কৃষকেরা চলে গেলে আবারও যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এসময় কৃষক বাঁচাও, দেশ বাঁচাও এই স্লোগানে চাষিরা ৭দিনের মধ্যে সমাধান না হলে মহাসড়ক আবারও অবরোধ করার সিদ্ধান্ত দেন। ক্ষুব্ধ কৃষকেরা জানান, প্রতি কেজি আলু সংরক্ষণের জন্য আগে হিমাগারগুলোকে চার টাকা ভাড়া দিতে হতো। এখন বৃদ্ধি করে ৮ টাকা করা হয়েছে। ভাড়া দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই তাঁরা দ্রুত আগের ভাড়া নির্ধারণের দাবি জানান। তাঁদের এই কর্মসূচির সঙ্গে স্থানীয় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বিএনপির নেতা ও বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারী প্রতিনিধিরা একাত্মতা ঘোষণা করেন।
আলুচাষি ও বীরগঞ্জ আলু ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল মালেক বলেন, সিন্ডিকেট করে হিমাগারে আলু রাখার ভাড়া অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে। যা আলু ব্যবসায়ী ও চাষিদের জন্য অমানবিক। বিদ্যুৎ বিলের অযৌক্তিক অযুহাতে এ উপজেলায় ৪ টি হিমাগারে অন্যায়ভাবে আলু রাখার ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। হিমাগারে চাষিদের বস্তা প্রতি ভাড়া কমানোর জন্য সংশ্লিষ্ট মহলের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
সাধারণ সম্পাদক হরিসুন্দর বর্মণ বলেন, চলতি মৌসুমে আলু চাষে বেশি খরচ পড়েছে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি তাঁরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু কোনো সমাধান না পাওয়ায়, বাধ্য হয়ে আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা রাস্তায় নেমেছেন।
বীরগঞ্জ উপজেলা আলু চাষী ও আলু ব্যবসায়ী সমিতি লিঃ আয়োজনে আলু চাষী ও আলু ব্যবসায়ী সমিতি লিঃ এর সভাপতি আব্দুল মালেক এর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন আলু চাষী ও আলু ব্যবসায়ী সমিতি লিঃ এর সহ সভাপতি শফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক হরি সুন্দর বর্মন, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাকির হোসেন ধলু, ইরফান আলী, আলহাজ্ব লুৎফর রহমান, এনামুল হক, আনারুল, সাইফুল ইসলাম সহ আরও অনেকে।
আলুচাষিদের দাবিগুলো হলো হিমাগারের প্রতি বস্তা আলু সংরক্ষণে ন্যায্য ভাড়া নির্ধারণ, হয়রানি বন্ধ, আলু শুকানোর জন্য শেড চার্জ ফ্রি বা নামমাত্র করা, আলু সংরক্ষণের জন্য হিমাগার মালিকেরা যে ঋণ দেন, তা ব্যাংকের সুদের হারের চেয়ে ২ শতাংশের বেশি নির্ধারণ না করা এবং সংরক্ষিত আলু পচে গেলে বা হিমাগার কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে নষ্ট হলে তৎকালীন বাজার অনুযায়ী সংরক্ষণকারীকে মূল্য পরিশোধ করা।
শাহী হিমাগার লিঃ (৪) শীতলাই এর ম্যানেজার মোঃ আরজু রহমান হিরু বলেন, বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ এসোসিয়েশনের নির্দেশে এবার প্রতি কেজি ৮ টাকা করা হয়েছে। গত বছর ৭ টাকা প্রতি কেজি আলু নির্ধারণ ছিল। বর্তমানে সব কিছুর দাম বৃদ্ধি যেমন বিদ্যুৎ, শ্রমিক লেবারসহ সব কিছুরই দাম বেশি। আন্দোলনকারীরা বলছেন আমরা নাকি প্রতি কেজি দ্বিগুণ ভাড়া বৃদ্ধি করেছি। কিন্তু আমরা গতবছর ৭ টাকা এ বছর ৮ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ এসোসিয়েশন।
বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফজলে এলাহী বলেন, হিমাগার মালিক সমিতি যে দাম বাড়িয়েছে, তা অন্যায্য। বিষয়টি জানার পর তাৎক্ষণিক জেলা প্রশাসককে জানিয়েছি। জেলা প্রশাসক বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কনফারেন্সে উপস্থাপন করবেন। আশা করি কেন্দ্রীয়ভাবে বিষয়টি সুরাহা হবে। যদি সুরাহা না হয়, বীরগঞ্জের জন্য স্থানীয়ভাবে সুরাহা করব। আপনারা যে উদ্দেশ্যে আন্দোলন করেছেন, সেটি সমাধান করে সেই অবস্থান ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
উত্তরের কণ্ঠ/পিআর/নাজমুল ইসলাম
আপনার মতামত লিখুন