কামানের গোলায় ১৩ জনকে হত্যা
সাক্ষী না থাকায় ২৭ বছর ধরে ঝুলে আছে বিচার

বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্ধকারতম অধ্যায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। এদিন ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এ সময় খুনিদের ছোড়া কামানের গোলায় মোহাম্মদপুরের শেরশাহ সুরি রোডে শিশু ও নারীসহ ১৩ জন নিহত হন। আহত হন আরও ৪০ জন। এ ঘটনার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার বিচার শেষ হয়েছে। কিন্তু একই দিন কামানের গোলায় ১৩ জন নিহতের ঘটনায় দায়ের করা মামলার বিচার ২৭ বছরেও শেষ হয়নি।
সাক্ষ্য দিতে আসেন না সাক্ষী
পুলিশের প্রতিবেদনে তথ্য-বিভ্রাট
মামলাটি বর্তমানে ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত- ১৩ এ বিচারাধীন। আদালত সূত্রে জানা যায়, এ মামলার আসামিদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কোনো কোনো আসামির দণ্ড কার্যকর হয়েছে। সে বিষয়ে একটি প্রতিবেদনের আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। আদালত ওই আবেদন মঞ্জুর করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপারকে কোন কোন আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে এবং কেউ মৃত্যুবরণ করেছেন কি না, এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। পরে এক আসামির বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। কিন্তু তথ্য-বিভ্রাট থাকায় পুনরায় প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দেন আদালত। প্রতিবেদন দাখিল না হওয়ায় মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ হচ্ছে না। আগামী ১ অক্টোবর প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য রয়েছে।
শেষ ইচ্ছা পূরণ হলো না বাদীর
তিনি বলেন, দুই বছর আগে আমার স্বামী মারা গেছেন। তার ইচ্ছা ছিল মামলার বিচার দেখে যাওয়ার। বিচার যেন দ্রুত শেষ হয় এ প্রত্যাশা এখন আমাদের।
গোলার বিকট শব্দে প্রকম্পিত হয় মোহাম্মদপুরের শেরশাহ সুরি রোড
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে আক্রমণের সময় সেনা সদস্যরা কামানের গোলা ছুড়লে তা গিয়ে মোহাম্মদপুরের শেরশাহ সুরি রোডের ৮ ও ৯ এবং ১৯৬ ও ১৯৭ নম্বর বাড়ির (টিনশেড বস্তি) ওপর পড়ে। ওই ঘটনায় নারী ও শিশুসহ ১৩ জন মারা যান। প্রায় ৪০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে কয়েকজন সারাজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করেন।
নিহতরা হলেন- রিজিয়া বেগম ও তার ছয় মাসের মেয়ে নাসিমা, কাশেদা বেগম, ছাবেরা বেগম, সাফিয়া খাতুন, আনোয়ারা বেগম (প্রথম), ময়ফুল বিবি, আনোয়ারা বেগম (দ্বিতীয়), হাবিবুর রহমান, আবদুল্লাহ, রফিজল, সাহাব উদ্দিন আহম্মেদ ও আমিন উদ্দিন আহম্মেদ।
১৭ আসামি হলেন- লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সৈয়দ ফারুক রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) সুলতান শাহরিয়ার রশিদ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মহিউদ্দিন আহমেদ, মেজর (অব.) বজলুল হুদা, তাহের উদ্দিন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) খন্দকার আব্দুর রশীদ (পলাতক), লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) শরিফুল হক ডালিম (পলাতক), লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী ইবি (পলাতক), লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) আব্দুল মাজেদ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) এ এম রাশেদ চৌধুরী (পলাতক), মেজর (অব.) রাশেদ চৌধুরী (পলাতক), মেজর (অব.) এ কে এম মহিউদ্দিন আহম্মেদ, মেজর (অব.) আহম্মদ শরিফুল হোসেন ওরফে শরিফুল ইসলাম (পলাতক), ক্যাপ্টেন (অব.) কিসমত হোসেন (পলাতক), ক্যাপ্টেন (অব.) নাজমুল হোসেন আনসার (পলাতক), রিসালদার (অব.) মোসলেহ উদ্দিন (পলাতক), দফাদার মারফ আলী শাহ (পলাতক) ও এলডি মোহাম্মদ আবুল হাসেম মৃধা (পলাতক)।
২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। তারা হলেন- লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সৈয়দ ফারুক রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) সুলতান শাহরিয়ার রশিদ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মহিউদ্দিন আহমেদ, মেজর (অব.) বজলুল হুদা ও মেজর (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ। এ পাঁচজন ছাড়া এ মামলায় সাবেক অর্থমন্ত্রী তাহের উদ্দিন ঠাকুরকে (প্রয়াত) গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছিল। ২০২০ সালের ১২ এপ্রিল ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল মাজেদেরও ফাঁসি কার্যকর হয়। এখনও পলাতক বাকি ১০ আসামি।
আপনার মতামত লিখুন