পাঁচ বছর স্কুলে না গিয়েও নিয়মিত বেতন ভাতা তোলেন প্রধান শিক্ষক

দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে প্রায় পাঁচ বছর ধরে স্কুলে না গিয়েও নিয়মিত বেতন ভাতা তোলার অভিযোগ উঠেছে একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার রাজাপুর বুড়িহাট দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসগর আলী স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে পাঁচ বছর ধরে স্কুলে না গিয়েও অফিস সহকারি ও সহকারি প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে হাজিরা খাতা বাসায় নিয়ে গিয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন বলে জানা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদ্যালয়টি ১৯৯৪ সালে স্থাপিত হয় এমপিও ভুক্ত হয় ২০০০ সালে।
বর্তমানে বিদ্যালয়ের মোট ছাত্র ছাত্রী সংখ্যা ৬০ জন। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্টাকালীন সময় হতে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন আসগর আলী। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি প্রধান শিক্ষকের আপন বড় ভাই আহসান হাবিব ও তার আপন ভাতিজা সহকারি প্রধান শিক্ষক মামুনুর রশিদ। ২০১৮ সালে স্কুলের পাশে দূর্গা পুজা মন্দির কমিটির সাথে প্রধান শিক্ষকের ব্যক্তিগত জমি নিয়ে বিরোধের পর থেকে আর স্কুলে আসে না তিনি। সরেজমিনে স্কুলটিতে গিয়ে দেখা যায়, জরা-জীর্ণ অবস্থায় রয়েছে ক্লাস রুমগুলো। নেই বিদ্যালয়ের কোন সাইনবোর্ডও। বিদ্যালয়ের ৬ষ্ট শ্রেনির ক্লাসে রুমে গিয়ে মেলেনি শিক্ষকের দেখা। ক্লাসে বসে গল্প করছে ১০ থেকে ১২ জন ছাত্র-ছাত্রী। ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে তাদের প্রধান শিক্ষক স্কুলে আসেন কিনা জানতে চাওয়া হলে তারা বলে স্যারকে কোন দিন স্কুলে দেখি নাই। তবে স্যারকে আমাদের বাসার ওইদিকে দেখতে পাই নিয়মিত। এসময় তাদের ক্লাস রোল জানতে চাওয়া হলে তারা বলতে পারে নি।তারা জানায় তাদের রোল দেয়া হয়নি। তাদের হাজিরাও নেয়া হয় না। এসময় অফিস রুমে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে দেখা করতে চাইলে সহকারি এক শিক্ষক জানান প্রধান শিক্ষক স্কুলে আসেননি। কেন স্কুলে আসেনি জানতে চাইলে বলেন আমরা কিছু জানি না।
প্রধান শিক্ষকের হাজিরা খাতা দেখতে চাইলে হাজিরা খাতা নাই বলে জানান শিক্ষকরা। বিদ্যালয়ের ৬ষ্ট শ্রেনির ছাত্রী জুঁই আক্তার বলে, আমার বাড়ির কাছেই হেড স্যারের বাসা। কিন্তু স্যারকে কোন দিন স্কুলে দেখি নাই। খালি জানি আসগর আলী স্যার আমাদের স্কুলের হেড স্যার। জুঁই আক্তারের কাছে তার ক্লাস রোল জানতে চাওয়া হলে তার ক্লাস রোল বলতে পারেনি। সে বলে আমাদের তো রোল দেয় নাই। আর আমরা যে স্কুলে আসি আমাদের হাজিরা হয় না। একই শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী শির্মল সরেন বলেন, হেড স্যারকে আমরা স্কুলে কখনো আসতে দেখি নাই। বাহিরে দেখি কিন্তু স্কুলে আসে না কি কারনে স্কুলে আসে না আমরা তো জানি না। বিদ্যালয়ের দপ্তরি মহেশ্বর রায় বলেন, হেড স্যার দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ে আসে না কি কারো আসে না তা আমি বলতে পারব না। বিদ্যালয়ের সহকারি হিন্দু ধর্মীয় শিক্ষক শচীন বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেশ কয়েক বছর ধরে বিদ্যালয়ে আসে না। কারন হিসেবে তিনি বলেছেন বিদ্যালয়ের পাশে স্থানিয় দূর্গা পুজা মন্দির কমিটির সাথে প্রধান শিক্ষকের ব্যক্তিগত জমি নিয়ে বিরোধের পর ভিভিন্ন মামলা হয়।
তার পর থেকে আর স্কুলে আসে না। বিদ্যালয়ের নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক সহকারি শিক্ষক বলেন, মামলার বিষয়টি সামনে আনে উনি স্কুলে আসে না কারন স্কুলের সভাপতি তার আপন বড় ভাই, সহকারি প্রধান শিক্ষক তার ভাতিজা হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে স্কুলে না আসলেও তার বিরুদ্ধে কেউ কোন ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারেনি। রাজাপুর বুড়িহাট দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক আসগর আলী বলেন, স্কুলের পাশে আমার ব্যক্তিগত জমি নিয়ে কয়েক বছর আগে বিদ্যালয়ের পাশে দূর্গা পুজা মন্দির কমিটির সাথে বিবাদ হলে বিভিন্ন মামলা হয় ।সে সময় আামার বিরুদ্ধে তারা মূর্তি ভাঙ্গার মামলা দেয়।বিদ্যালয়ের পাশে মন্দির হওয়ায় তারা বিভিন্ন ভাবে আমাকে হুমকি দেয় যে স্কুলে আসলে আমর বিরুদ্ধে তারা আরো মূর্তি ভাঙ্গার মামলা দিবে তাই আমি স্কুলে না গেলেও স্কুলের যাবতীয় কাজ করি।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি প্রধান শিক্ষকের আপন বড় ভাই আহসান হাবিবের মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেনি। স্থানিয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজি ইকবাল হোসেন বলেন, রাজাপুর বুড়িহাট দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে। শিক্ষক ও কয়েকজন অভিভাবক আমাকে বিষয়টি অবগত করেন ।পরে বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারি ঠিকই প্রধান শিক্ষক ২০১৮ সাল থেকে স্কুল আসে না।কিন্তু নিয়মিত বেতন তুলেন। পরে বিষয়টি নিয়ে উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে বলেছিলাম পরে বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারি ঠিকই প্রধান শিক্ষক ২০১৮ সাল থেকে স্কুল আসে না।কিন্তু নিয়মিত বেতন তুলেন। পরে বিষয়টি নিয়ে উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে বলেছিলাম পরে উনি বলেছিলেন বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।
কিন্তু কি যে ব্যবস্থা নিলো প্রধান শিক্ষক স্কুলে আসে না। চিরিরবন্দর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ফজলে এলাহি বলেন, ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আমার অফিসে স্কুলে প্রয়োজনীয় কাজে নিয়মিত আসে দেখা হয় ।উনি যে ২০১৮ সাল হতে স্কুল করে না সে বিষয়ে আমাকে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। স্থানিয় ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় বিষয়টি নিয়ে আপনাকে অবগত করেছিলেন তখন কি কোন ব্যবস্থা নিয়েছিলেন এ বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ফজলে এলাহি বলেন, সে বিষয়টি নিয়ে তখন গুরুত্ব দেয়া হয়নি কারন স্থানিয় ভাবে এসব মতবিরোধ থাকতে পারে তাই সেটা তখন তদন্ত করে দেখা হয়নি। এখন বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন