হবিগঞ্জের বানিয়াচং থানা পুলিশের উদ্ধার করা এক অজ্ঞাত কিশোরীর লাশের পরিচয় সনাক্ত করিয়ে দিলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর ফেইসবুক।
থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়,গতকাল ৬মে (মঙ্গলবার) উপজেলার ১৫নং পৈলারকান্দী ইউনিয়নের বিজয়পুর হাওরের রাস্তার পাশে সন্ধ্যার পূর্ব মুহূর্তে একটি অজ্ঞাত তরুণীর(২২)লাশ দেখতে পায় এলাকাবাসী। তাৎক্ষণিক এই বিষয়টি বানিয়াচং থানা পুলিশকে অবগত করা হয়।
এদিকে থানা পুলিশ লাশের মেসেজটি সাথে সাথে বিথঙ্গল পুলিশ ফাঁড়ির (আইসি) কে জানালে ফাঁড়ি পুলিশের কাছে ঘটনাস্থলটি বেশি দূরে না হওয়ায় ফাঁড়ি (আইসি) এসআই রেজাউল হক এর নেতৃত্বে এএসআই আব্দু রহমানসহ একদল পুলিশ সন্ধ্যার দিকে পৈলারকান্দী,ইউনিয়নের বিজয়পুর হাওরের পাশে রাস্তায় পড়ে থাকা অজ্ঞাত কিশোরীর লাশ উদ্ধারে ঘটনাস্থলে রওয়ানা হয়। সেখানে উপস্থিত স্হানীয় এলাকাবাসীর সামনে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরী করে কিশোরীর লাশটি উদ্ধার করে ফাঁড়িতে নিয়ে যায় পুলিশ।
পরে উদ্ধার করা অজ্ঞাত কিশোরীর ছবি সহকারে বানিয়াচং থানার সেকেন্ড অফিসার (এসআই)আমিনুল ইসলাম এর মোবাইল নাম্বার সংযুক্ত করে ইন্টারনেটের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম”ফেইসবুক”ও বিভিন্ন মিডিয়ার গণমাধ্যম কর্মীদের সহযোগীতা নিয়ে একটি পোস্ট করা হয়। মুহূর্তের মধ্যে কিশোরীর লাশ উদ্ধারের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ “ফেইসবুক” ভাইরাল হয়। আর এই ফেইসবুক পোস্টের ঘন্টা খানেকের ভিতরে নিহত অজ্ঞাত কিশোরীর আপন ভাই আক্তার হুসেন এর নজরে পড়ে নিহত বোনের পোস্টটি। হঠাৎ করে তার “ফেইসবুক”এর সামনে ভেসে ওঠে তার হারিয়ে যাওয়া মানসিক বাক প্রতিবন্ধী বোন জাহানারা খাতুন(২২) এর নিহত হয়ে রাস্তার পাশে পড়ে থাকা ছবিটি। যাহা অজ্ঞাত কিশোরীর লাশ উদ্ধারের ছবি হিসেবে সংযুক্ত করা হয়েছিলো পোস্টে। বোনের এমন মৃত্যুর পোস্ট দেখে প্রথমে বাকরুদ্ধ হয়ে যান ভাই আক্তার হুসেন। এর কিছুক্ষণ পর নিজেকে সামলে নিয়ে নিখোঁজ হারিয়ে যাওয়া বোনের বিষয়টি পরিবারকে অবগত করেন। বানিয়াচং থানা পুলিশ তার নিহত বোনকে উদ্ধার করে ফাঁড়িতে রাখা হয়েছে বলে পরিবারের সবাইকে জানায় আক্তার হোসেন। অজ্ঞাত কিশোরীর লাশের পরিচয় সনাক্তে ফেইসবুক পোস্টে থানার সেকেন্ড অফিসার (এসআই) আমিনুল ইসলাম এর মোবাইল নাম্বার দেওয়া হয়েছিলো। এই নাম্বারে ফোন করে থানায় বোনের নাম ঠিকানা পরিচয় নিশ্চিত করেন আপন বড় ভাই।
নিহত তার বোন হলো আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কাকাইলছে ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের ওহাব মিয়ার কন্যা জাহানারা খাতুন(২২)। জন্মের পর থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন বাক প্রতিবন্ধী পাগলের মতো ছিলো। গত ৫মে সোমবার হঠাৎ করে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। পরিবারের লোকজন জাহানারাকে এলাকাসহ বিভিন্ন স্হানে খোজাখোজি করেন এবং ৬মে (মঙ্গলবার) বিভিন্ন এলাকায় খোজাখুজি করেন পরিবারের লোকজন। কোন সন্ধান পান নাই বোন জাহানারার। আক্তার হোসেন তার মোবাইলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তার “ফেইসবুক”ডুকে সময় কাটাচ্ছেন। হঠাৎ তার চোখের সামনে নিখোঁজ হওয়া বোনের লাশ উদ্ধারের ছবি সহ একটি পোস্ট চোখে পড়লো। আর এই পোস্টের ছবি দেখেই হারানো বোনকে চিনতে পেরেছিলেন ভাই আক্তার হুসেন। এ ব্যাপারে ৬মে মঙ্গলবার থানার সেকেন্ড অফিসার আমিনুল ইসলাম এর সাথে রাত সাড়ে ১১টার দিকে যোগাযোগ করে তিনি এসবের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান,রাত বেশি হওয়ায় লাশটি বিথঙ্গল পুলিশ ফাঁড়িতে রয়েছে। এবং রাতেই নিহত জাহানারা খাতুন এর পরিবারের লোকজন আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কাকাইলছে ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রাম থেকে বিথঙ্গল পুলিশ ফাঁড়ির উদ্যেশে রওয়ানা দিয়ে আসতেছেন বলেও জানান তিনি।
এছাড়াও এই বিষয়ে কোন প্রয়োজন মনে করলে (ফাঁড়ি) পুলিশের দায়িত্বরত (আইসি) ও এক সহকারী দারোগার মুঠোফোন নাম্বার দিয়ে যোগাযোগ করার জন্য বলেন। এ ব্যাপারে বিথঙ্গল ফাঁড়ি (আইসি) এসআই রেজাউল হক এর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে ব্যস্ততা থাকায় তার সাড়া পাওয়া যায় নাই। পরে এএসআই আব্দু রহমান এর সাথে ৭মে(বুধবার)রাত ১টা ১৬মিনিটে যোগাযোগ করে লাশের বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি জানান নিহত জাহানারা খাতুন(২২) এর পরিবারের লোকজন ফাঁড়িতে এসেছেন এবং পোস্টমর্টেম ছাড়া তারা মরদেহটি নেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। বর্তমানে এই বিষয়ে (আইসি) স্যারের রোমে আলোচনা করছেন সবাই। এর বেশি কিছু তিনি বলতে পারবেননা বলে জানান। এদিকে ৭মে(বুধবার) সকালে লাশের সর্বশেষ আপডেট জানতে বিথঙ্গল পুলিশ ফাঁড়ির (আইসি) এসআই রেজাউল হক এর মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার ফোন করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। পরে সকাল ১০টার দিকে তার মোবাইল নাম্বারের হোয়াটস্যাপে একটি মেসেজ দিয়ে রাখা হলে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিনি ফোন করে জানান, গতকাল রাতেই নিহত জাহানারা খাতুন এর আপন দু’ বড় ভাই,দু’ মামাসহ পরিবারের অনেক আত্মীয় স্বজন আসেন। তারা জানিয়েছেন জাহানারা জন্মের পর থেকে ঐ মানসিক ভারসাম্যহীন বাক প্রতিবন্ধী একটা পাগল। বোনের মৃত্যু নিয়ে পরিবারের কোন রকম অভিযোগ নেই। এমনকি ভবিষ্যতে বোনের মৃত্যু নিয়ে কোন মামলা মোকদ্দমা করবেননা। তাদের বিষয়টি বানিয়াচং থানার ওসি স্যারকে অবগত করা হয়। ৭মে(বুধবার)আনুমানিক দুপুর ১২টার দিকে পরিবারের সদস্যদের নিকট মরদেহটি ময়না তদন্ত ছাড়াই হস্তান্তর করা হয়েছে। তারা বিথঙ্গল পুলিশ ফাঁড়ি থেকে মরদেহ নিয়ে আজমিরীগঞ্জের উদ্যেশে রওয়ানা দেওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করে বলেন,লাশ উদ্ধারের ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন