নোয়াখালীতে সুপেয় পানির তীব্র সংকট, বাড়ছে পানিবাহিত রোগ

নোয়াখালীতে বন্যার পানি ধীরে ধীরে কমতে থাকায় পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে পানিবন্দি থাকায় বিভিন্ন স্থানে বাড়ছে নানা সংকট। বিশেষ করে টিউবওয়েলগুলো ডুবে যাওয়ায় বন্যাকবলিত এলাকায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। আছে রান্না করার খাবারের সংকটও। এ ছাড়াও বন্যায় চর্মরোগ, ডায়রিয়াসহ নানা পানিবাহিত রোগ বেড়ে গেছে।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, বন্যাকবলিত উপজেলায় ধীরগতিতে পানি কমতে শুরু করেছে। টানা দুই দিন সূর্যের দেখা পাওয়ায় জনমনে স্বস্তি বিরাজ করছে। তবে জেলাজুড়ে দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রাণ দিলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। যাতায়াত ব্যবস্থা না থাকায় দুর্গম এলাকাগুলোতে ত্রাণ পৌঁছানো যাচ্ছে না। জেলায় বেড়েছে ডায়রিয়া ও সাপে কাটা রোগী।
বিভিন্ন উপজেলার ইউনিয়নে ঘুরে দেখা যায়—বেশিরভাগ এলাকার ঘরবাড়ি এখনও কোমরসমান পানির নিচে। নৌকাই এখন যাতায়াতের মাধ্যম। সড়কের পাশের ঘরবাড়িগুলোতেও কোমরসমান পানি। যে কারণে ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। টয়লেট, বাথরুমগুলোও পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে পড়ছে বন্যার পানিতে।
বেগমগঞ্জের বাসিন্দা কামাল উদ্দিন বলেন, বন্যায় ঘরবাড়িতে পানি উঠে যাওয়ায় পানিবন্দি হয়ে একদিকে মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে, অপরদিকে বিশুদ্ধ পানির অভাব এবং সেপটিক ট্যাংকের ময়লা-আবর্জনা পানিতে ছড়িয়ে পড়ায় ডায়রিয়া, চর্মরোগসহ নানা পানিবাহিত রোগে ভুগছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা। যারাই বন্যার পানিতে হাঁটাচলা করছেন, তাদের প্রত্যেকের শরীরে এখন চুলকানি দেখা দিচ্ছে।
সোনাইমুড়ী উপজেলার বাসিন্দা মোরশেদ আলম বলেন, এলাকায় গত বুধবার আরও বেশি পানি ছিল। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রোদ থাকায় পানি কিছুটা কমছে। গত দুই দিনে অনেক পানি নেমে গেছে। তবে বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাবে কিছু কিছু এলাকায় মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত এই দুটি কারণে বন্যাকবলিত এলাকায় এখন চর্মরোগ, ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত নানা রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। তারা বলছেন, যে এলাকায় বন্যা হয়। সেখানে বন্যা-পরবর্তী সময়ে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগ দেখা দেয়। এবার যেহেতু নোয়াখালীতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা হয়েছে। তাই পানিবন্দি এলাকায় এখন পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়বে। ত্রাণসহায়তা প্রদানের পাশাপাশি এখন প্রশাসনকে পানিবাহিত রোগ মোকাবিলায় কাজ করতে হবে।
নোয়াখালী জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার বলেন, প্রতিনিয়ত ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। চর্মরোগীর সংখ্যাও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। ডায়রিয়ার প্রকোপ যাতে মহামারি আকারে ছড়িয়ে না পড়ে, সেজন্য আমরা বন্যাকবলিত এলাকায় পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, খাবার স্যালাইন সরবরাহ করা হচ্ছে। চর্মরোগের চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে। আক্রান্তদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে সেবা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। একই সময়ে নোয়াখালী জেলায় সাপে কাটা রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে।
জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, নোয়াখালী জেলায় পানিবন্দি ২২ লাখ ২০ হাজার ৩০০ জন মানুষ। বানভাসি মানুষের জন্য সরকারিভাবে খোলা হয়েছে ১ হাজার ৩৮৯টি আশ্রয়কেন্দ্র। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ২ লাখ ৫৯ হাজার জন মানুষ। সরকারি ত্রাণ সহায়তা হিসেবে এ পর্যন্ত ১৭১৮ মেট্রিক টন চাল, ৪৫ লাখ টাকা, ১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ৫ লাখ টাকার শিশু খাদ্য ও ৫ লাখ টাকার গো খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন