খুঁজুন
শনিবার, ৭ই জুন, ২০২৫, ২৪শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২

শিশুর খাদ্য তালিকায় মধুমাসের ফলের গুরুত্ব

ড. মিহির লাল সাহা প্রকাশিত: শুক্রবার, ৩০ মে, ২০২৫, ৩:১৭ অপরাহ্ণ
শিশুর খাদ্য তালিকায় মধুমাসের ফলের গুরুত্ব

জ্যৈষ্ঠ মাসকে আমরা গ্রীষ্ম মৌসুমের ফলের মাস হিসেবে জানি। অনেক সময় জ্যৈষ্ঠ মাসকে মধুমাস হিসেবেও জানি। মধুমাসে মধুর মধুর রসালো ফল নিয়ে একটু গল্প করা যেতেই পারে। গ্রীষ্মের সময় অনেক রসালো টক-মিষ্টি ফল পাওয়া যায়। এ সময় যে ফলগুলো পাওয়া যায় তার মধ্যে আম, কাঁঠাল, জাম, লিচু অন্যতম।

আমরা জানি, ফল আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। সব ধরনের ফলে রয়েছে নানা রকম ভিটামিন, খনিজ পুষ্টি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট—যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং হজমের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। ভিটামিন আবার এনজাইমের সহায়ক হিসেবে কাজ করে। সে কারণে এনজাইমের কাজ সুষ্ঠুভাবে করার জন্য নিয়মিত ভিটামিন গ্রহণ তথা মৌসুমি ফল খাওয়া খুবই দরকার। বর্তমান প্রজন্ম ফলের চেয়ে ফলের জুস খেতে পছন্দ করে। তবে মনে রাখতে হবে, ফলের জুস থেকে ফ্রেশ বা তাজা ফল খাওয়া বেশি উপকারী। কারণ জুস করলে এর ডায়েটেরি ফাইবার নষ্ট হয়ে যায়। তাই ফ্রেশ ফল খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।

শিশুরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। সেই বিবেচনায় ফল শিশুর খাদ্যতালিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেব মনে করতে হবে। ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে পাকা ফল অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে। শিশুদের বিভিন্ন ধরনের ফল খেতে উৎসাহিত করলে তাদের শক্তিশালী হাড়ের গঠন, তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, সুস্থ বৃদ্ধি ও বিকাশে সহায়তা করবে।

আগামী প্রজন্মের কথা বিবেচনা করে শিশুদের বিভিন্ন ধরনের ফল এবং শাকসবজি খেতে উৎসাহিত করে তাদের স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে যা তাদের সারা জীবন উপকৃত করবে। ইদানীং দেখা যাচ্ছে যে, অনেক ক্ষেত্রে বর্তমান প্রজন্মের শিশুরা ফল খেতে তেমন আগ্রহ দেখায় না। তবে পরিবারের প্রধান হিসেবে আপনার সন্তানকে ফল এবং শাকসবজি খেতে উৎসাহিত করুন।

মনে রাখতে হবে কোনো পরিমাণ না খাওয়ার চেয়ে যেকোনো পরিমাণই খাওয়া ভালো। এক্ষেত্রে পরামর্শ হলো যে, যদি আপনি স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করেন, তাহলে আপনার সন্তানও আপনার পথ অনুসরণ করবে। কখনো ভাববেন না যে, আপনার সন্তান কোনো নির্দিষ্ট ফল বা শাকসবজি অপছন্দ করে। পরেরবার যখন আপনি সেটি খেতে দেবেন তখনই হতে পারে যেদিন তারা সেটি খাওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে। বয়সের সাথে সাথে শিশুদের রুচিও পরিবর্তিত হয়। মনে রাখবেন শিশু আপনার এবং দেশের ভবিষ্যৎ। ছোট্ট শিশুকে ফলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব আপনার। এজন্য সবচেয়ে সহজ উপায় হলো ফলের বড় ছবি সম্বলিত একটি বই কেনা অথবা বাজার থেকে ছবি সম্বলিত একটি ফলের চার্ট সংগ্রহ করা।

আনারস কৃমিনাশক হিসেবেও কাজ করে। আনারস ও দুধ একসাথে খাওয়া নিয়ে ভীতি আছে। আনারস একটি অম্ল জাতীয় খাবার আর দুধ হলো অ্যালকালাইন বা ক্ষার। দুধ যদি পাস্তুরিত না হয়, তবে কাঁচা দুধ ও আনারসের সমন্বয়ে শরীরে বিক্রিয়া হতে পারে।

কাজটি আরও সহজভাবে করতে পারেন তা হলো A4 আকারের সাদা শিটে নিজেই ফলের ছবি আঁকুন এবং তারপর বাজার থেকে সেই নির্দিষ্ট ফলটি শিশুকে এনে দিয়ে পরিচয় করে দিতে পারেন। এভাবে আমদের মৌসুমি ফলগুলোর সাথে শিশুদের পরিচয় ঘটিয়ে খাদ্যাভ্যাসে পরিণত করতে সাহায্য করবে।

মধুমাসের প্রধান ফল আম। আমকে বলা হয় ‘ফলের রাজা’। কাঁচা অবস্থায় আমের রং সবুজ এবং পাকা অবস্থায় হলুদ হয়ে থাকে। তথ্যানুসারে এদেশে প্রায় ৩৫০ প্রকার আমের জাত আছে। পাকা আম ক্যারোটিনে ভরপুর। এছাড়া এতে প্রচুর পরিমাণে খনিজ পদার্থ থাকে। আম যকৃতের জন্য উপকারী। তবে ডায়াবেটিসের রোগীদের ক্ষেত্রে পাকা আম খাওয়ার উপর অল্পস্বল্প বিধিনিষেধ রয়ে গেছে। বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনায় নিবেন।

আম বেশি খেয়ে ফেললে একটু বেশি হেঁটে সেটি খরচ করে ফেলাই উত্তম। আয়ুর্বেদ ও ইউনানি পদ্ধতির চিকিৎসায় পাকা ফল ল্যাকজেটিভ, রোচক ও টনিক বা বলকারকরূপে ব্যবহৃত হয়। রাতকানা ও অন্ধত্ব প্রতিরোধে পাকা আম মহৌষধ। কথিত আছে আম খেলে ঘুম ভালো হয়। ঘুম ভালো হলে মন ভালো থাকে। আর মন ভালো থাকলে কাজে মনোনিবেশ ঘটে।

লিচু মধু মাসের আরেকটি ফল। লিচু ফলের বাকল পাতলা, শাঁস নরম ও মিষ্টি। দেশের বৃক্ষজাত ফলের মধ্যে আমের পরই লিচুর স্থান। ফলটির বহিরাবরণ অমসৃণ ও আকর্ষণীয় লালচে গোলাপি বর্ণের। আবরণটির ভেতরে থাকে সুমিষ্ট রসালো শাঁস। লিচু শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়।

লিচুতে ভিটামিন ‘সি’ আছে, যা ত্বক, দাঁত ও হাড়ের জন্য উপকারী। ফ্ল্যাভানয়েডস নামের একটি উপাদান থাকে লিচুতে, যা স্তন ক্যানসার প্রতিরোধ করে বলে মনে করা হয়। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় ও বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে।

অন্যদিকে লিচুতে হাইপোগ্লাইসিন নামের এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যা শরীরে শর্করা তৈরি হতে বাধা দেয়। যে কারণে শিশুরা খালি পেটে অনেকগুলো লিচু খেয়ে ফেললে শরীরের শর্করা কমে শিশুর বমি ও খিঁচুনি হয় এবং অনেক সময় তা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। ডায়াবেটিসের রোগী যদি মাত্রাতিরিক্ত লিচু খেয়ে ফেলেন, তাহলে তাদের শরীরে গ্লুকোজ কমে গিয়ে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

মধু মাসের আরও একটি ফল জাম। অন্য সব মৌসুমি ফলের তুলনায় জামের স্থায়িত্ব কম হলেও এর পুষ্টিগুণ অতুলনীয়। জাম সাধারণত তাজা ফল হিসেবে ব্যবহৃত হলেও এ থেকে রস, স্কোয়াশ ও অন্যান্য সংরক্ষিত খাদ্য তৈরি করা যায়। জাম ফলের গা কালো এবং খুব মসৃণ পাতলা আবরণ দিয়ে ঢাকা। ফলের বহিরাবরণের ঠিক নিচ থেকেই গাঢ় গোলাপি রঙের টক মিষ্টি শাস। টক মিষ্টি সুস্বাদু এই ফলটি বেশ জনপ্রিয়।

ছোট বেলায় আমাদের গ্রামে তিন ধরনের জাম দেখেছি। বড় জাম (কম মিষ্টি ও রসাল শাস), মেঝো জাম (বড় জামের চেয়ে বেশি মিষ্টি এবং কম রসাল শাস) এবং ক্ষুদি জাম (ছোট আকৃতির মিষ্টি স্বাদের)। জাম বেশি খেলে জিহ্বা এবং মুখের ভেতরটা রঙিন হয়ে যায়। এই প্রসঙ্গে পল্লী কবি জসীমউদ্‌দীনের বিখ্যাত “মামার বাড়ি” কবিতার “পাকা জামের মধুর রসে রঙিন করি মুখ” চরণটি মনে পড়ে গেল। হজমের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, মাড়ির প্রদাহ ইত্যাদি রোগে জাম ব্যবহৃত হয়। জামে বেশি পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘সি’ আছে। জামকে অনেক সময় রক্ত পরিষ্কারক বলা হয়। জামের বীজ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

কাঁঠাল একটি সুস্বাদু রসালো ফল। পাকা কাঁঠাল দুই ধরনের: গালা ও খাজা। গালা কাঁঠালের কোষগুলো রসালো হয়। খাজা কাঁঠালের কোষগুলো ততটা রসালো নয়। এ দুটি জাত ছাড়াও কাঁঠালের আরও জাত আছে। গালা ও খাজা কাঁঠালের মাঝামাঝি বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হিসেবে রয়েছে ‘রসখাজা’ কাঁঠাল। আমের আমসত্ত্ব হয় কিন্তু গালা কাঁঠালের আমসত্ত্ব হয় না। কাঁঠালের হয় কাঁঠালসত্ত্ব। নানান পুষ্টিগুণে ভরপুর কাঁঠাল।

কাঁঠালের বিটা ক্যারোটিন দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখে। এছাড়াও আছে ভিটামিন ‘এ’, ‘সি’, ‘বি-১’, ‘বি-২’, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামসহ নানা রকমের পুষ্টি ও খনিজ উপাদান। এই সকল উপাদান দাঁত ও হাড় সুস্থ রাখে এবং ত্বক সুন্দর করতে সাহায্য করে। কাঁঠাল কার্বোহাইড্রেটের একটি অন্যতম উৎস। এই ফল আঁশালো হওয়ায় কোষ্ঠকাঠিন্যও দূর করে।

ফাইবার ও কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেটের কারণে এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। ফলে এটি ওজন না বাড়িয়েই যোগাতে পারে অনেক শক্তি। কাঁঠাল বিচির প্রোটিন অত্যন্ত উপকারী। কাঁঠালের বিচিতে রয়েছে ভিটামিন ‘বি-১’, ‘বি-১২’, ‘এ’, ‘সি’, থায়ামিন, নায়াসিন, আইসোফ্ল্যাভোন এবং স্যাপোনিনের মতো মানব দেহের উপকারী ফাইটো ক্যামিক্যালস।

আনারস গ্রীষ্ম মৌসুমি ফলের মধ্যে অন্যতম। এর আদি জন্মস্থল দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ। পাইনগাছের শক্ত, শুষ্ক ফল অর্থাৎ ‘কোন’-এর সঙ্গে ইউরোপবাসী আনারসের সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছিল। সে কারণে দক্ষিণ আমেরিকায় ইউরোপের অভিযাত্রীরা প্রথম এই ফল দেখে নাম রেখেছিল Pineapple (Pine+Apple)। আনারসে রয়েছে ব্রোমেলিন যা হজমশক্তিকে উন্নত করতে সাহায্য করে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘সি’, ভিটামিন ‘বি’ কমপ্লেক্সের নানা উপাদান, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাস।

এসব উপাদান আমাদের দেহের পুষ্টির অভাব পূরণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। আছে পেকটিন নামক গুরুত্বপূর্ণ ডায়েটরি ফাইবার যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। সাধারণ ফ্লুতে আনারস খেলে উপশম হয় তবে গর্ভবতী নারীদের গর্ভপাত ঘটায় বিধায় সতর্ক থাকতে হবে।

আনারস কৃমিনাশক হিসেবেও কাজ করে। আনারস ও দুধ একসাথে খাওয়া নিয়ে ভীতি আছে। আনারস একটি অম্ল জাতীয় খাবার আর দুধ হলো অ্যালকালাইন বা ক্ষার। দুধ যদি পাস্তুরিত না হয়, তবে কাঁচা দুধ ও আনারসের সমন্বয়ে শরীরে বিক্রিয়া হতে পারে। দুধের সঙ্গে আনারসের সঠিক সমন্বয় না হলে শারীরিক সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে দুধ এবং আনারস একসাথে না খাওয়াই শ্রেয়।

এই মৌসুমের আরেকটি ফল হলো জামরুল। জামরুল সাদা এবং লাল দুই রকমের হয়ে থাকে। জামরুলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ যেটি ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখে। জামরুলে পর্যাপ্ত পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার থাকায় এটি হজম ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। জামরুলে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ থাকায় এই ফল চোখের জন্য উপকারী। জামরুলে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম আছে যেটি হাড় ও দাঁতের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়ামের উৎস হতে পারে।

তীব্র গরমে জামরুলের পটাশিয়াম শরীরের ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। পানি, ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ বিধায় শরীরে আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। বাজারে এখন থাই জামরুলের প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে। সব মিলিয়ে গ্রীষ্মের প্রখর রৌদ্রে পানি শূন্যতা এবং খনিজ লবণের ঘাটতি পূরণে জামরুলের কোনো তুলনা নেই।

গ্রীষ্মকালীন ফলগুলো সঠিক মৌসুমে এবং ভালোভাবে পাকলেই খাওয়া উচিত। আম সাধারণত এপ্রিলের শেষ থেকে জুনের মাঝামাঝি, লিচু মে-জুন, কাঁঠাল জুন-জুলাই মাসে সর্বাধিক পাওয়া যায়। ফল নিয়মিত খাওয়ার জন্য সকাল অথবা দুপুরের খাবারের মাঝে খাওয়া উত্তম মনে করা হয়। কারণ তখন শরীরে পুষ্টি দ্রুত শোষিত হয়।

মৌসুমি ফলের সাথে একটু দই খেলে ফলের আঁশ প্রিবায়োটিক এবং দইয়ের উপকারী প্রোবোয়োটিক ব্যাকটেরিয়া মিলে অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। তাই সুস্বাস্থ্য এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বা immunity boost up-এ প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় বিভিন্ন ধরনের মৌসুমি ফল আর সাথে একটু দই রেখে খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে সকলে ভালো থাকার চেষ্টা করি।

খাদ্য, পুষ্টি, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের প্রাকৃতিক উৎস হলো ফল। বিচিত্র বর্ণ, আকর্ষণীয় স্বাদ ও গন্ধের জন্য মৌসুমি ফল এদেশের মানুষের প্রিয় খাদ্য। মানুষের শারীরিক বৃদ্ধি, মেধার বিকাশ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা এবং রপ্তানি আয় বৃদ্ধিতে মৌসুমি ফলের রয়েছে উল্লেখযোগ্য অবদান। কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে মৌসুমি ফলের ভূমিকাকে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।

গ্রীষ্মকালীন ফলগুলো সঠিক মৌসুমে এবং ভালোভাবে পাকলেই খাওয়া উচিত। আম সাধারণত এপ্রিলের শেষ থেকে জুনের মাঝামাঝি, লিচু মে-জুন, কাঁঠাল জুন-জুলাই মাসে সর্বাধিক পাওয়া যায়। ফল নিয়মিত খাওয়ার জন্য সকাল অথবা দুপুরের খাবারের মাঝে খাওয়া উত্তম মনে করা হয়।

সুস্থ থাকার জন্য একজন সাধারণ মানুষের প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম ফল খাওয়া উচিত। সে হিসেবে দেশে ফলের প্রয়োজন কমপক্ষে ১ কোটি ৪৬ লাখ টন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাবে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে ৫৬ ধরনের ১ কোটি ১০ লাখ টন ফল উৎপাদিত হয়। দৈনিক গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম করে ফল খাওয়ার মতো পর্যাপ্ত ফল দেশে উৎপাদিত হলেও পুষ্টি সম্পর্কে সচেতনতার অভাবে আমরা দৈনিক গড়ে ফল গ্রহণ করছি মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ গ্রাম। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ফল চাষে গুরুত্ব দিতে হবে।

গ্রীষ্মকালীন ফল বাংলাদেশের কৃষি ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। ২০২৫ সালে প্রায় ২,০৫,০৩৪ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে এবং রেকর্ড ২৭ লাখ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানা যায়। এ বছর প্রায় ৫ হাজার টন আম রপ্তানির পরিকল্পনাও রয়েছে। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে ফল চাষে কৃষকেরা আগের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

বাংলাদেশ প্রতি বছর প্রায় ৩৮টি দেশে আম রপ্তানি করে। ২০২৫ সালে প্রথমবারের মতো চীনে রপ্তানি শুরু হতে যাচ্ছে। এই আম রপ্তানির ফলে বাংলাদেশের কৃষি আমদানি চাহিদা পূরণে স্বনির্ভর হচ্ছে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। কাঁঠালের ক্ষেত্রেও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা রয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশ থেকে প্রায় ১,০০০ টন কাঁঠাল রপ্তানি করা হয়েছে।

বিশেষ করে হবিগঞ্জের বড় কাঁঠাল কাতার, ওমান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় কাঁঠাল প্রক্রিয়াজাত পণ্য (যেমন, চিপস, বীজ গুঁড়া) ইউরোপে রপ্তানি শুরু হয়েছে। প্রায় ২৬,০০০ হেক্টর জমিতে বছরে প্রায় ২ লাখ টন লিচু উৎপাদিত হয়। চাহিদামতো লিচুর সরবরাহ নিশ্চিত করতে দিনাজপুর, রাজশাহী, পাবনা, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে লিচু বাগান রয়েছে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে জুড়ে ১১২ টন লিচু রপ্তানি হয়েছে। সম্প্রতি দিনাজপুরের একটি বাগান থেকে প্রথমবারের মতো ফরাসিতে ৩০০ কেজি লিচু সরাসরি রপ্তানি করা হয়েছে। এই রপ্তানির ফলে স্থানীয় চাষিদের উৎসাহ বাড়বে। বিশেষ করে বাংলাদেশ বছরে প্রায় ২ লক্ষ টন আনারস উৎপাদন করে। রপ্তানি বাড়ার সাথে সাথে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হবে এবং চাষিরা লাভবান হবেন। স্থানীয় বাজারে ফলের চলন বেড়ে গেলে কৃষি ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান ও রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে। ফলে অর্থনীতি সুদৃঢ় হবে। আসুন, নিয়মিত মৌসুমি ফল খেয়ে সুস্থ থেকে ফল উৎপাদনকারীদের উৎসাহিত করে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করি।

অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা ।। চেয়ারম্যান, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বীরগঞ্জে দুর্নীতি নিরসনে বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৫ জুন, ২০২৫, ১১:৫৯ অপরাহ্ণ
বীরগঞ্জে দুর্নীতি নিরসনে বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ

দিনাজপুরের বীরগঞ্জে এক দিনব্যাপী একটি বিজ্ঞান উৎসব পালিত হয়েছে। বিজ্ঞান উৎসবে বিতর্ক, তাৎক্ষণিক কুইজ ও বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের আয়োজন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (০৫ জুন) সকালে Future Pulse of Bangladesh (FPB) ‘শিক্ষার্থীদের একাডেমিক, সহপাঠ্যিক ও ব্যক্তিগত ডেভেলপমেন্টের জন্য একটি অরাজনৈতিক সংগঠন’ এর আয়োজনে এবং বর্ণমালা ডিবেট ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও কুয়েট ছাত্র ইফতেহার আহাম্মেদ তৌফিকের সভাপতিত্বে “শিক্ষা উৎসব-২০২৫” বীরগঞ্জ পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের হলরুমে অনুষ্ঠিত হয়।

“তরুণ চিন্তায় গড়ে উঠুক আগামীর বাংলাদেশ” এই বিষয়ের উপরে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বীরগঞ্জ উপজেলার সকল উচ্চ বিদ্যালয় এর ছাত্র-ছাত্রীরা অংশগ্রহণ করে। পরে চূড়ান্তভাবে পক্ষে বীরগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও বিপক্ষে বীরগঞ্জ পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, পক্ষে ইব্রাহিম মেমোরিয়াল শিক্ষা নিকেতন এবং বিপক্ষে বীরগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় অংশগ্রহণ করে।

“দুর্নীতি নিরসনে রাজনৈতিক স্বদিচ্ছাই মুখ্য ভুমিকা রাখতে পারে,”-শীর্ষক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বীরগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় বিজয়ী হয়েছে। সেরা বক্তা নির্বাচিত হয়েছে জারিন আনজুম অথৈ।

এসময় প্রতিযোগিতায় অলিম্পিয়াড, সনাতনী বাংলা বিতর্ক, তাৎক্ষণিক কুইজ পর্ব শেষে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। বির্তক প্রতিযোগিতার মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী শায়লা শরাফী। বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর ছাত্র ইশতিয়াক আহমেদ নিলয়, কুয়েটের সিভিল বিভাগের ছাত্র তায়াস,হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মামুন ইসলাম।

উক্ত অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন চুয়েটের সিভিল বিভাগের ছাত্র ও (FPB) সহ-সভাপতি হামিম ইকবাল এবং রুয়েট ছাত্র ও (FPB) এর জেনারেল সেক্রেটারি ইফতেখার হাসনাত রাহি।

সাবেক যুবদলের সেক্রেটারি সুলতান এর মাতার ইন্তেকাল

শাজাহানপুর বগুড়া প্রতিনিধি
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৫ জুন, ২০২৫, ১:১৪ অপরাহ্ণ
সাবেক যুবদলের সেক্রেটারি সুলতান এর মাতার ইন্তেকাল

বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও মাঝিড়া  ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট হাইওয়ে হোটেল ব্যবসায়ী  সুলতান আহমেদের মাতা ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গতকাল বুধবার রাতে তুমি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। তিনি তিন পুত্র ৩, কন্যা, নাতি -নাতনি সহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। আজ সকাল ১০ টায় নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

জানাজা নামাজে উপস্থিত ছিলেন বগুড়া জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম, বগুড়া জেলা যুবদলের সভাপতি সিপার আল বখতিয়ার, জেলা যুবদলের সাবেক সেক্রেটারি মিজানুর রহমান রাজা, শাজাহানপুর উপজেলা বিএনপির রহমান বিদ্যুৎ,, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিরুল ইসলাম শাহজাহানপুর উপজেলা বিএনপির যুব বিষয়ক সম্পাদক আতাহার আলী কাইয়ুম, শহর বিএনপি নেতা মাহবুব হাসান লিমন সহ স্থানীয় বিএনপি নেতৃবৃন্দ এবং এলাকার গণ্যমান্য ধর্মপ্রাণ মুসল্লিবৃন্দ জানাজায় উপস্থিত ছিলেন।

চন্দনাইশে জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী পালন

উপজেলা প্রতিনিধি, চন্দনাইশ
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৩ জুন, ২০২৫, ১০:৩৫ অপরাহ্ণ
চন্দনাইশে জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী পালন

স্বাধীনতার ঘোষক, সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের (বীর উত্তম) ৪৪তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে চন্দনাইশ পৌরসভা বিএনপি, যুবদল ও অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে খতমে কুরআন, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৩ জুন) বিকালে চন্দনাইশ সদরস্থ দলীয় কার্যালয়ে দিবসটি পালন করা হয়। চন্দনাইশে পৌরসভা বিএনপি’র সাবেক আহবায়ক মাহামুদুর রহমান মাহাদুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক নুরুল আনোয়ার চৌধুরী, প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদুর রহমান ।

চন্দনাইশ পৌরসভা যুবদলের সদস্য সচিব শহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন পৌর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব মাহাবুবুর রহমান মাহবু। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, পৌরসভা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক যথাক্রমে সিরাজুল মোস্তফা, ওসমান গণি, মিজান, আলমগীর, আইনুল হুদা।

বিএনপি নেতাআবু ছাদেক শিবলু, নুরুল হুদা বাবর, নুরুল কবির, যুবদল নেতা আল মাহামুদ হিরু, জয়নাল আবেদীন, কুদ্দুস, নুরুজ্জামান, আমিন, খালেক, মোজাম্মেল, বেলাল, নাজিম সও., দিদার, আবুল কালাম, ইসমাইল, জাফর, মুজিব, প্রমূখ।

"> ">
বীরগঞ্জে দুর্নীতি নিরসনে বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ সাবেক যুবদলের সেক্রেটারি সুলতান এর মাতার ইন্তেকাল চন্দনাইশে জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী পালন কাহারোলে বিশ্ব দুগ্ধ দিবস উদযাপন উপলক্ষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মিল্ক ফিডিং বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত শেরপুরে কলেজের গভর্নিংবডির সভাপতি পূণঃবহাল করলেন- চেম্বার আদালত বীরগঞ্জে প্রকাশ্যে ধুমপান করায় ৩ জনকে জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমান আদালত  বীরগঞ্জে বিশ্ব তামাক দিবস উদযাপন ‘বিসিবিতে ক্রিকেট ছাড়া সব হচ্ছে, আগ্রহ কমছে মানুষের’ সব গণতান্ত্রিক দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চায় : ১২ দলীয় জোট সব দলই চায় ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন : এলডিপি মহাসচিব আইনি বিপাকে আরশাদ ওয়ারসি ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ট্রাকসহ ২০ লাখ টাকার সয়াবিন তেল ছিনতাই কাপ্তাই হ্রদে নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফিরছেন পবনদীপ পাকিস্তানি কাশ্মিরের লোকজন স্বেচ্ছায় এবং শিগগিরই ভারতে ফিরবেন জাপানি কোম্পানিগুলোকে আরও বিনিয়োগের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার টিকিট পরিবর্তনের ফি মওকুফের জন্য সব এয়ারলাইন্সকে চিঠি বিদেশে বসে বিএনপির বিরুদ্ধে বদনাম করছেন ড. ইউনূস : মির্জা আব্বাস জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের ৬ সমঝোতা স্মারক সই শিশুর খাদ্য তালিকায় মধুমাসের ফলের গুরুত্ব নিম্নচাপটি দুর্বল হলেও এখনো উত্তাল বঙ্গোপসাগর দিনাজপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত-৪ সেনাবাহিনীর হাতে এনসিপি নেতা তরিকুল আটক নোয়াখালীতে ২৪ ঘণ্টায় ২৮৫ মি.মি. বৃষ্টিপাত, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে জাপানের প্রধানমন্ত্রী রেলপথের জন্য ১.০৬৩ বিলিয়ন ডলার দেবে জাপান ভারী বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে হালদায় ডিম ছেড়েছে মা মাছ বীরগঞ্জ মডেল প্রোসক্লাবের সাথে সুধী সমাজের মতবিনিময় সভা প্রকৃতির ভাষা ও প্রাণের চাহিদা বোঝা বাজেট ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই নির্বাচন, এদিক-সেদিক যাওয়ার সুযোগ নেই