বীরগঞ্জে চিকিৎসা শেষে আকাশে ডানা মেলল ৮ শকুন

চার মাসের চিকিৎসা ও পরিচর্যা শেষে প্রকৃতির মাঝে অবমুক্ত করা হলো আটটি শকুন। দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার সিংড়া জাতীয় উদ্যানে দেশের একমাত্র শকুন উদ্ধার ও পরিচর্যা কেন্দ্র থেকে এসব শকুনদের একে একে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ সময় সেই দৃশ্য দেখতে ভিড় করেন দর্শনার্থী ও আশেপাশের এলাকার মানুষ।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টায় দিনাজপুর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বশিরুল আল মামুন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এসব শকুন অবমুক্ত করেন। এছাড়াও সেখানে উপস্থিত ছিলেন আইইউসিএন দুজন প্রতিনিধি। চার মাস আগে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে অসুস্থ ও মৃতপ্রায় শকুনগুলোকে নিয়ে আসা হয় বীরগঞ্জ উপজেলার সিংড়া জাতীয় উদ্যানে। মহাবিপন্ন শকুন রক্ষায় দিনাজপুরের বীরগঞ্জে গড়ে তোলা হয়েছে দেশের একমাত্র এই শকুন উদ্ধার ও পরিচর্যা কেন্দ্র। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে উদ্ধার হওয়া শকুনকে নিয়ে আসা হয় এখানে। নিবিড় পরিচর্যা ও চিকিৎসার পর শুকুনগুলো সুস্থ্য ও সবল হলে অবমুক্ত করা হয় প্রকৃতিতে। শকুনের পাশাপাশি অন্যান্য বন্য প্রাণী রক্ষায় কেন্দ্রটির পরিসরে বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
মহাবিপন্ন বন্যপ্রাণী শকুন রক্ষায় ২০১৪ সালে আইইউসিএন এর যৌথ উদ্যোগে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার সিংড়া জাতীয় উদ্যানে গড়ে তোলা হয় এ পরিচর্যা কেন্দ্র। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শকুন আটক বা উদ্ধারের খবর পেলেই সেখানে ছুটে যান কেন্দ্রের কর্মকর্তারা। এরপর সেই শকুনকে পরিচর্যা কেন্দ্রে নিয়ে এসে চলে সেবা ও চিকিৎসা। সাধারনত চার থেকে পাঁচ মাস চিকিৎসা শেষে প্রকৃতিতে অবমুক্ত করা হয় শকুনগুলো।
কেন্দ্রটির কেয়ারটেকার মো. বেলাল হোসেন বলেন, ‘কেন্দ্রটি চালু হবার পর থেকেই শকুনের পরিচর্যা করছি। একদিন পর পর খাবার দেওয়া হয়। শকুনগুলো ছাড়ার সময় অনেক মায়া লাগে।’ সিংড়া জাতীয় উদ্যানের বিট কর্মকর্তা গয়া প্রসাদ পাল বলেন, ‘বিভিন্ন এলাকা থেকে আটক হওয়া শকুনগুলো উদ্ধার করি। এরপর পরিচর্যা কেন্দ্রে নিয়ে আসি। এরপর সেবা করে সুস্থ্য করে তুলি।’
সংশ্লিষ্টদের আশা, কেন্দ্রটির অবকাঠামো বৃদ্ধি করা হলে বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণী রক্ষায় গুরম্নত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে কেন্দ্রটি। দিনাজপুরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বশির আল মামুন বলেন, ‘দেশের একমাত্র এই শকুন উদ্ধার ও পরিচর্যা কেন্দ্রে এ বছর ১০টি হিমালিয়ান জাতের শকুন উদ্ধার করে সুস্থ্য করে তোলা হয়েছে। এগুলোকে আগামী এপ্রিল মাসের শুরম্নতে অবমুক্ত করা হবে। এ কেন্দ্রটি শকুন রক্ষায় যুগান্তকারী ভূমিকা রাখছে। এবছর এখানে বন্যপ্রাণী রক্ষা কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। এর ফলে শকুনসহ বন্যপ্রাণী পরিচর্যার দুয়ার খুলে যাবে।’
কেন্দ্রটির পরিধি আরো বৃদ্ধির আশ্বাস দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্যও। দিনাজপুর১ আসনের সংসদ সদস্য মো. জাকারিয়া বলেন, ‘এ পরিচর্যা কেন্দ্রটি আরো বড় করা হবে। বিলুপ্তপ্রায় শকুনকে আবারো প্রকৃতির মাঝে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’ কেন্দ্রটি যাত্রা শুরু পর থেকে এ পর্যন্ত ১৫৬ টি শকুন উদ্ধার ও পরিচর্যা করে অবমুক্ত করা হয়েছে।
উত্তরের কণ্ঠ/পিআর/জিতু
আপনার মতামত লিখুন