বাজেটের প্রভাব নেই নিত্যপণ্যের বাজারে

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে বৃহস্পতিবার (৬ জুন)। বাজেট পেশ হলেও অন্য বছরের মতো প্রস্তাবিত বাজেটের পর নিত্যপণ্যের বাজারে কোনো প্রভাব পড়েনি। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবজি, মাছ-মাংসসহ সব ধরনের পণ্যের দাম আগের মতোই আছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, অনেক পণ্য আগের কেনা রয়েছে তাই বাজেটের প্রভাব বুঝতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত রমজান মাস থেকেই মূলত দ্রব্যমূল্যের বাজার ঊর্ধ্বগতির দিকে। তাছাড়া বাজেট ঘোষণার আগেই অনেক পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এজন্য ঘোষণার পর পণ্যের দাম বাড়ার আর কিছু থাকে না। তারপরও কিছু জিনিসে এর প্রভাব পড়তে পারে, যা হয়তো আগামী সপ্তাহের বাজারে দেখা যাবে।
বাড্ডা পাঁচতলা বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. সামছুল হক বলেন, আজকের বাজারে পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, যা পূর্বে ছিল ৮০ টাকা। বরবটি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়, যা ছিল ৮০ টাকা। গাজর ১২০ টাকা, যা ছিল ১৬০ টাকা। শসা বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই ৮০ টাকা। এছাড়াও ঢ্যাঁড়স ৫০ টাকা, যা গতকালও বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা। প্রতিকেজি করলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, যা ছিল ৫০ টাকা। এছাড়াও বেগুন বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৮০ থেকে ৬০ টাকা।
আরেক সবজি বিক্রেতা সায়েদুল ইসলাম বলেন, কিছু জিনিসের দাম শুক্রবার এলে এমনিতেই বেড়ে যায়। যেমন, শসা, টমেটো আর গাজর শুক্রবার আসলে এই জিনিসগুলোর চাহিদাও বাড়ে, দামও বাড়ে।
অন্যান্য সবজি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাজারে সবজির সরবরাহ কমে যাওয়ায় দামটা একটু বাড়তি। গরম কমলে সামনে দাম কিছুটা কমতে পারে।
এদিকে বাজার করতে আসা মওদুদ আহমেদ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, গতকাল বাজেট হয়েছে দেখলাম, যদিও বাজেটের সাথে আমাদের মতো শ্রেণিপেশার মানুষের কোনো সম্পর্ক নেই। এই ধরনের বাজেটে সাধারণ মানুষের জন্য কিছু থাকে না। বাজেট কম হোক বা বেশি হোক, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কখনোই কমবে না বরং উল্টো বাড়তেই থাকবে। যেকারণে বাজেটকেন্দ্রিক খুব বেশি একটা আগ্রহ নেই।
তিনি বলেন, বাজারে প্রায় প্রতিটি পণ্যেরই দাম ঊর্ধ্বমুখী। যেকারণে মাসের খাবার খরচ বেড়েছে প্রায় অর্ধেক। কিন্তু আমাদের আয় তো বাড়েনি। ২টা টিউশনি করিয়ে আগে যা পেতাম, এখনও তাই পাই। কিন্তু যেভাবে সবকিছুর দাম বাড়ছে, তাতে আমাদের মতো মানুষদের কিছুই কিনে খাবার উপায় নেই।
জসিম উদ্দিন নামে এক বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, আমাদের স্বল্প বেতনে প্রতিদিন মাছ বা মাংস খাওয়া যায় না। কিন্তু সবজির দামও যদি এমন বাড়তি যায় তাহলে এটা খাওয়াও কমিয়ে দিতে হবে।
তিনি বলেন, বাজারে সব ধরনের সবজিতে ভরপুর। কোনো সংকট নেই। তারপরও ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে দাম বাড়িয়ে দেয়। আমরা আসলে যাবো কোথায়? এভাবে একটা দেশ চলতে পারে?
প্রসঙ্গত, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে বৃহস্পতিবার (৬ জুন)। জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। দেশের ইতিহাসের ৫৪তম বাজেট এটি। এর আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। আর ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা।
নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি পরিস্থিতিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। এজন্য বিশেষ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে অন্তত ২৭টি প্রয়োজনীয় পণ্য ও খাদ্যশস্য সরবরাহের ওপর উৎসে কর কমানো হচ্ছে। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এসব পণ্যে উৎসে কর ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হচ্ছে। পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে— পেঁয়াজ, রসুন, মটর, ছোলা, চাল, গম, আলু, মসুর, ভোজ্যতেল, চিনি, আদা, হলুদ, শুকনা মরিচ, ডাল, ভুট্টা, ময়দা, আটা, লবণ, গোলমরিচ, এলাচ, দারচিনি, লবঙ্গ, খেজুর, তেজপাতা, পাট, তুলা, সুতা এবং সব ধরনের ফলসহ ২৭ পণ্য।
আপনার মতামত লিখুন