বলছে হিন্দুস্তান টাইমস
ইন্ডিয়া গেটের কাছেই হাসিনার বাংলো, আছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা

ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে গত আগস্ট মাসের শুরুতে শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে চলে যান। এরপর থেকে তিনি ভারতেই অবস্থান করছেন। তবে দেশটির ঠিক কোথায় তিনি অবস্থান করছেন সেটি এখনও অজানা।
এবার শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে একই তথ্য জানিয়েছে আরেক ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, নয়াদিল্লির ইন্ডিয়া গেট ও খান মার্কেটের কাছেই একটি বাংলোতে অবস্থান করছেন শেখ হাসিনা। অত্যন্ত সুরক্ষিত সেই বাংলোতে আছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, প্রায় দুই দশক ধরে শেখ হাসিনা ঢাকার কেন্দ্রস্থলে ৩৬০০ বর্গ মিটার বিস্তৃত ম্যানিকিউর বাগানে ঘেরা একটি বিস্তীর্ণ প্রাসাদে বাস করতেন এবং এটি মূলত রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের থাকার জন্য নির্মিত হয়েছিল।
তবে ৭৭ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী এখন দিল্লির ইন্ডিয়া গেট এবং খান মার্কেটের কাছে দিল্লির প্রাণকেন্দ্রে একটি সুরক্ষিত বাংলোতে বসবাস করছেন। বিষয়টি সম্পর্কে জানেন এমন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে হিন্দুস্তান টাইমস এই তথ্য সামনে এনেছে।
ওই কর্মকর্তারা বলেছেন, বাংলাদেশের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ওই বাংলোতে বেশ কয়েকটি স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছেন। কারণ প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় বিভিন্ন নৃশংসতার পাশাপাশি গণহত্যা সংঘটনের অভিযোগসহ বহু মানুষের কাছ থেকে মৃত্যুর হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার ওই কর্মকর্তারা বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে শেখ হাসিনা হিন্দন বিমান ঘাঁটিতে আশ্রয় নেন এবং সেখান থেকে স্থানান্তরিত হওয়ার পর থেকে তিনি দিল্লির লুটিয়েনস বাংলোতে বসবাস করছেন। এর আগে গত মাসে ফিনান্সিয়াল টাইমসের একটি প্রতিবেদনেও বলা হয়েছিল, তাকে (হাসিনাকে) লোধি গার্ডেনে দেখা গেছে।
উপরে উদ্ধৃত ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেছেন, হাসিনার নতুন এই বাসভবনটি আসলে ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন কাউন্টার-ইন্টেলিজেন্স সংস্থা “ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর (আইবি)” একটি সেফহাউস। তবে হাসিনার জীবনের প্রতি হুমকির কথা উল্লেখ করে তারা এই বাসভবনের সঠিক অবস্থান প্রকাশ না করতে বলেছেন।
দ্বিতীয় একজন কর্মকর্তা বলেছেন, হাসিনাকে হিন্দন বিমান ঘাঁটি থেকে দিল্লিতে আনার পর দিল্লি পুলিশের একজন সাব-ইন্সপেক্টরকে (এসআই) কয়েকদিনের জন্য আইবি এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে হাসিনার নিরাপত্তা প্রোটোকলে যুক্ত করা হয়েছিল।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে দ্বিতীয় ওই কর্মকর্তা বলেন, “সাব-ইন্সপেক্টরকে খুব স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল— গোপন এই কর্মকাণ্ড এবং সেফ হাউসের ঠিকানা সম্পর্কে তার ব্যক্তিগত এবং পেশাগতভাবে চেনাশোনা কাউকেই যেন এটি না জানানো হয়। এসআইকে বলা হয়েছিল, দিল্লি পুলিশ প্রধান বা তার তত্ত্বাবধায়ক কর্মকর্তাদের কেউ এটি জিজ্ঞাসা করলেও এ বিষয়ে তার কোনও তথ্য প্রকাশ করা উচিত নয়।”
ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি) এবং ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করায় ওই এসআইকে দুই বা তিন দিন পরে নিরাপত্তা প্রোটোকল থেকে প্রত্যাহার করা হয়।
দ্য প্রিন্ট বলছে, ভারত সরকারের মন্ত্রী, জ্যেষ্ঠ এমপি ও শীর্ষ কর্মকর্তাদের জন্য বরাদ্দকৃত বাড়ির মতো লুটিয়েনসের বাংলোতে শেখ হাসিনাকে তার মর্যাদা অনুযায়ী একটি বাড়ি দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনার গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য দ্য প্রিন্ট বাড়িটির সঠিক ঠিকানা অথবা রাস্তার বিবরণ প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে।
শেখ হাসিনা যথাযথ প্রোটোকল-সহ মাঝে মাঝে দিল্লির লোধি গার্ডেনে হাঁটাহাঁটি করেন বলে একাধিক সূত্র দ্য প্রিন্টকে নিশ্চিত করেছে। একটি সূত্র বলেছে, “শেখ হাসিনার জন্য কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। নিরাপত্তা কর্মীরা তাকে সার্বক্ষণিক সাদা পোশাকে পাহারা দেন। একজন সম্মানিত ব্যক্তি হিসাবে তিনি এই স্তরের সুরক্ষা পাচ্ছেন।”
সূত্রটি বলেছে, “তিনি (শেখ হাসিনা) দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে ওই এলাকায় বসবাস করছেন। এখানে তার থাকার সব ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
আপনার মতামত লিখুন