খুঁজুন
শুক্রবার, ২৩শে মে, ২০২৫, ৯ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২

উপ-সম্পাদকীয়

শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানভীতি দূর করতে ড. আহাদের শিক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচী

ইয়াহিয়া নয়ন প্রকাশিত: বুধবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৩, ১০:৪৯ অপরাহ্ণ
শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানভীতি দূর করতে ড. আহাদের শিক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচী

প্রশিক্ষিত শিক্ষকদের মাঝে ড.আহাদ

এক জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশের গ্রামের শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান পড়তে চায়না। বিজ্ঞানে তাদের আগ্রহ কম। কিন্তু তাদেরকে যদি পদার্থ, রসায়ন,উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিষয়ে জ্ঞান বাড়ানো যায় তবে তা জাতীয় জীবনে অনেক কাজে লাগবে। পাশাপাশি তাদের প্রণিসম্পদ বিষয়ে সাধারন জ্ঞান দিতে পারলেও তা তারা নিজেদের বাস্তব জীবনে কাজে লাগাতে পারবে। আর এই জ্ঞান ধারণা দিতে হবে শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক পর্যায় থেকে। কিন্তু কিভাবে তাদের বিজ্ঞানে আগ্রহী করে তোলা যায়।

এই চিন্তা থেকে বিজ্ঞানের বিষয়গুলোকে সহজ পাঠ্য করেছেন একজন শিক্ষাগুরু। তিনি সহজ করে নিজেস্ব জ্ঞান ধারণা দিয়ে বিজ্ঞানের বিষয়গুলোকে তৈরি করেছেন। শিক্ষার্থীদের মাঝে তা প্রয়োগের জন্য তিনি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। ইতোমধ্যেই তিনি ১২৬ জন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রশিক্ষিত করে তুলেছেন। তার পুরো কাজটাকে প্রশংসিত করেছেন দেশের বরেণ্য শিক্ষাগুরুরা। পদস্থ সরকারি শিক্ষা কর্মকর্তারা বিষয়টিকে ইতিবাচক এবং ব্যপক সম্ভাবনাময় বলে মতামত দিয়েছেন।

প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকদেরকে জাতীয় শিক্ষা বোর্ডের সিলেবাস অনুযায়ী ৯ম ও ১০ম শ্রেনির পাঠ্য পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন এবং জীব বিজ্ঞান সমন্ধে পাঠদান করা হয়। এছাড়া ভেটেরিনারি সায়েন্স বিষয়ে প্রাথমিক জ্ঞান দেওয়া হয়।

বেশ কয়েক বছর পূর্বে ড. আহাদ প্রথম অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন আমেরিকান একজন নাগরিক সালমান খানের মাধ্যমে। তার পূর্ব পুরুষ বাংলাদেশের নাগরিক। তিনি আমেরিকায় ২০০৮ সালে “খান একাডেমি” নামক একটি স্থাপনা প্রতিষ্ঠা করেন। এই একাডেমিটি একটি অলাভজনক শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান এবং এর মূলমন্ত্র ছিল “পৃথিবীর যেকোন স্থানে, যে কাউকে বিনা মূল্যে বিশ্বমানের শিক্ষা প্রদান করা”। সত্যিকার অর্থে এই বাক্যটি ড.আহাদকে হৃদয়ে মর্মে স্পর্শ করে। তিনি তখন চিন্তা করা শুরু করলেন, সালমান খানের মতো আমাদের দেশের জন্য কিছু করার। প্রাথমিক ভাবে তিনি তার নিজ গ্রাম থেকে কাজটি শুরু করার জন্য চিন্তা করলেন।

তিনি ভাবলেন, কিভাবে তাঁর গ্রামের লোকজন কে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান করা যায়। এর প্রথম ধাপ হিসেবে, তিনি অনুভব করলেন গ্রামের মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষকদের মাধ্যমে তরুণ ছাত্র-ছাত্রীদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করা এবং জনসাধারণের নিকট আগ্রহ সৃষ্টি করা যায় কিনা তা পরীক্ষা করা।

ড.আহাদ চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রবায়োলজি ও ভেটেরিনারি পাবলিক হেলথ বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। তার ২২ বছরের চেয়েও বেশি শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি মনে করলেন, যদি স্কুল শিক্ষকদের প্রশিক্ষিত করা যায় এবং ঐ প্রশিক্ষিত শিক্ষক তার চাকুরির ২০-৩০ বছরের মধ্যে অনেক ছাত্র-ছাত্রীর সম্মুখীন হবেন। যার ফলে প্রশিক্ষিত শিক্ষকের মাধ্যমে পরবর্তী কিছুটা সুবিধাবঞ্চিত গ্রামের স্কুল ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষা বিষয়ে উপকৃত হবে। তিনি সেই মোতাবেক কোন প্রকার সম্মানী ব্যাতিরকেই নবম – দশম শ্রেণির স্কুল শিক্ষকদের কে প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য পরিকল্পনা করেন।

তিনি তার চিন্তা-ভাবনা আবু খালেদ মো. ছাইফ উল্লাহ কে অবহিত করেন। যিনি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর অফিসে উপ-পরিচালক হিসেবে নিয়োজিত। ড.আহাদ এবং আবু খালেদ মো. ছাইফ উল্লাহ একই এলাকাতে বসবাস করেন। যা বাংলাদেশের দক্ষিন প্রান্তের লক্ষীপুর জেলায় অবস্থিত। তার পক্ষে প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে এলাকার স্কুল শিক্ষকের যোগাযোগ সহজতর ছিল। কারণ, তিনি সেই এলাকার একজন সম্মানিত ব্যাক্তি এবং স্থায়ী বাসিন্দা। জনাব আবু খালেদ মো. ছাইফ উল্লাহ প্রশিক্ষানার্থী শিক্ষকদের উৎসাহের জন্য কিছু আর্থিক সম্মানীর ব্যবস্থা করতে বললেন। তা না হয় হয়তো এই প্রশিক্ষণ তেমন ফলপ্রসূ হবে না। ড.আহাদ এতে কিছুটা হতাশাগ্রস্থ হলেন। কারণ তার পক্ষে নিজের অর্থে প্রশিক্ষণ দেয়াটা দূষ্কর ছিল। কিন্তু তিনি তার স্বপ্ন ভঙ্গ হতে দিলেন না। তিনি মনে করলেন একদিন হয়তো তার এই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।

তিনি তার এই চিন্তা ভাবনাটি তার কিছু সহকর্মী/বন্ধু/ আত্মীয়-স্বজন কে জানালেন। কিছু লোক তার ধারণাটিকে প্রশংসা করলেন এবং কেউ বললেন, এটি হয়তো সম্ভব হবে না। মনে হলো যেন নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতো অবস্থা। ড.আহাদকে ২০১৯ সালের ফেব্রæয়ারি মাসে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের ২ বছরের মেয়াদের জন্য ডীনের দায়িত্বে নিয়োগ দেয়া হয়। সেই সময় তিনি আন্তর্জাতিক ভেটেরিনারি মেডিকেল কাউন্সিল (আমেরিকান ভেটেরিনারি অঙ্গসংস্থার একটি প্রতিষ্ঠান) থেকে একটি প্রকল্পের আহবান পান। প্রকল্পের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল গ্রামে ভেটেরিনারি শিক্ষার প্রসার করা। লেখক এই সুযোগটিকে কাজে লাগালেন। তিনি তার চিন্তা ভাবনার সাথে ভেটেরিনারি শিক্ষা কে যোগ করে একটি প্রকল্প তৈরি করেন এবং যথাযথ কতৃপক্ষের নিকট দাখিল করেন। দূর্ভাগ্য বশত তার সেই প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়নি।

তিনি পুরো ঘটনাটি বিস্তারিত ভাবে তার এক শিক্ষাগুরু অধ্যাপক মোহাম্মদ শওকত আনোয়ারকে অবহিত করলেন। তিনি আমেরিকার TUFTS Cummings School of Veterinary Medicine বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী-ডিন হিসেবে কর্মরত। আমেরিকার অধ্যাপকের নিকট ঘটনাটি অত্যান্ত হৃদয়গ্রাহী হল। তিনি ড.আহাদকে আশ্বাস দিলেন যে একটি পাইলট প্রকল্পের পরিচালনা করার জন্য অনুদান সংগ্রহ করে দিবেন।

২০২০ সালে কোভিড-১৯ (SARS-CoV2) ভাইরাসজনিত বিশ্ব মহামারীর কারণে মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত পৃথিবীর প্রায় বেশিরভাগ দেশ আক্রান্ত হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনেকদিন যাবত বন্ধ ছিলো। লকডাউনের কারণে জনসাধারণকে নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করতে বলা হয়েছিলো। ড.আহাদ এই সুযোগটিকে কাজে লাগালেন। এই অপ্রত্যাশিত ছুটির দিনে তিনি নবম-দশম শ্রেণীর জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম এবং বোর্ডের অনুমোদিত জীববিজ্ঞান এবং রসায়ন বইটি ইংরেজী ভাষায় নতুনভাবে লিপিবদ্ধ করেন। পদার্থবিজ্ঞান বিষয়টি তিনি আরেকজন ব্যক্তির উপর ন্যস্ত করেন। এই বই দুটিতে তিনি অত্যন্ত সংক্ষিপ্তভাবে ছাত্রদের নিকট বিষয়টি সহজভাবে বোধগোম্য করার জন্য ইন্টারনেট থেকে অনেক ছবি ডাউনলোড করেন।

তিনি আন্তরিকভাবে ঐ সমস্ত জনসাধারণের কাছে কৃতজ্ঞ, যারা তাদের বিষয়গুলো ইন্টারনেটে আপলোড করেছেন এবং ব্যবহারকারীদের জন্য সুযোগ করে দিয়েছেন। ড.আহাদ জীববিজ্ঞান বইটি ইংরেজীতে লিপিবদ্ধ করার পর তিনি তার শ্রদ্ধেয় বড় ভাইকে বইটিকে বাংলায় অনুবাদ করতে অনুরোধ করেন। তার বড়ভাই সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ রোগ-তত্ত্ব এবং বীজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে নিয়োজিত। এই বইটি দ্বারা নবম-দশম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীরা উপকৃত হবে, এবং স্কুলের শিক্ষকদের জন্যও পাঠদানে সহায়তা করবে।

দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে ড.আহাদের কর্মসূচী সর্ব মহলে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। এখন প্রয়োজন সরকারের সহযোগিতা। প্রশিক্ষিত শিক্ষকদের কাজে লাগিয়ে এই কর্মসূচী সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে সরকারের সহযোগিতার প্রয়োজন, এই অভিমত দেশের শিক্ষানুরাগীদের।

 

উত্তরের কণ্ঠ/পিআর/এসআর

প্রকৃতির ভাষা ও প্রাণের চাহিদা বোঝা বাজেট

এম জাকির হোসেন খান
প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৩ মে, ২০২৫, ১:৫৯ অপরাহ্ণ
প্রকৃতির ভাষা ও প্রাণের চাহিদা বোঝা বাজেট

মায়ের কোলে ঘুমিয়ে থাকা শিশুর নিঃশ্বাসে হয়তো ধুলাবালি নেই, হয়তো নেই নদী হারানোর দীর্ঘশ্বাস। কিন্তু তার ভবিষ্যৎ কি আমরা নিশ্চিত করে দিচ্ছি? হয়তো নয়। কারণ আমাদের জাতীয় বাজেটে প্রকৃতির কোনো স্বর নেই, নেই নদীর জন্য বরাদ্দ, বনাঞ্চলের কান্না বা একটি তপ্ত শহরের শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার সুযোগ।

২০২৪-২৫ অর্থ বছরের বাজেট আলোচনায় জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কিংবা নবায়নযোগ্য জ্বালানির কথা উঠে এসেছে-তবে গণমাধ্যমে। বাস্তবে, যে দেশ প্রতিবছর ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয় ঘূর্ণিঝড়ের কারণে, যে দেশে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার মানুষ শুধু পরিবেশ দূষণের কারণে অকালে মৃত্যুবরণ করে, সেই দেশের বাজেটে জলবায়ু ও পরিবেশ খাতে বরাদ্দ জিডিপির মাত্র ০.৭০৬ শতাংশ-এ কি উপহাস নয়?

এ অবস্থার পেছনে রয়েছে একটি ‘উন্নয়ন-বিনাশ ফাঁদ’ (Development-Destruction Trap)। উন্নয়নের নামে প্রকৃতি ধ্বংস হচ্ছে, অথচ প্রকৃতির উপর নির্ভর করেই টিকে আছে কৃষি, খাদ্য, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা। এ সংকট সমাধানে শুধুমাত্র খাতভিত্তিক বাজেট নয়, প্রয়োজন ন্যায্যতা ও অধিকার ভিত্তিক বাজেট কাঠামো, যেখানে প্রকৃতি ও জনগণের অধিকার সম্মান পায়।

চট্টগ্রামের উপকূলীয় এক গ্রামে ঘূর্ণিঝড় রেমালের পর একজন মাঝবয়সী নারী বলেছিলেন, ‘ঘর গেছে, জমি গেছে, এখন ছেলেমেয়েকে নিয়ে শুধু চাই—জীবনটা যেন একটু নিরাপদ হয়।’ কিন্তু বাজেট সেই নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিতে পারেনি।

বাংলাদেশের বাজেট প্রণয়ন ধারণাটি এখনো প্রকৃতিকে বোঝে না। প্রকৃতিকে ‘ব্যয়যোগ্য’ হিসেবে দেখা হয়, সংরক্ষণ নয়।

পানি উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ কমেছে; স্বাস্থ্য খাতে বাড়লেও তা নগণ্য; দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বরাদ্দ কমেছে মূল্যস্ফীতির হিসাব কষলে। আশ্চর্যজনক হলো, সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল যেমন রংপুর ও সুনামগঞ্জে জনপ্রতি বরাদ্দ সবচেয়ে কম, বরিশালের তুলনায় প্রায় ৯ গুণ কম। এই বৈষম্য কেবল অর্থনৈতিক নয়, এটি নৈতিক ব্যর্থতাও।

বাংলাদেশের বাজেট প্রণয়ন ধারণাটি এখনো প্রকৃতিকে বোঝে না। প্রকৃতিকে ‘ব্যয়যোগ্য’ হিসেবে দেখা হয়, সংরক্ষণ নয়। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন এজেন্সির মতে, $১ বিনিয়োগ করলে পরিবেশগত প্রতিরক্ষা থেকে $৩০ পর্যন্ত আর্থিক সুবিধা আসে—ব্যবসা ভাষায় যাকে বলে বিনিয়োগের রিটার্ন।

আমাদের মাটি, জল, বাতাস আর জীববৈচিত্র্য আজ বিনষ্ট। এ বিনাশের খরচ কেবল সরকারি হিসাব নয়, প্রতিটি পরিবারের নিত্য জীবনের ভোগান্তি। সুস্থ বাচ্চা জন্ম দিতে না পারা এক মায়ের কান্নায়, গর্ভবতী নারীর ফুসফুসে জমে থাকা ধুলোয়, মাছের খাঁচা ভেসে যাওয়া একজন মৎস্যজীবীর অসহায়তায় সেই খরচ ধরা পড়ে।

তাহলে কেমন হওয়া উচিত প্রকৃতি-পরিবেশ বান্ধব বাজেট?

আমাদের প্রস্তাব একটি কাঠামোগত সংস্কারের দৃষ্টিভঙ্গি:

ক) প্রকৃতিকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি: বাংলাদেশের উচ্চ আদালতের নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে প্রদত্ত রায়কে মেনে সরকারের দ্রুত সমুদ্র, বন, পাহাড়কে ‘জীবন্ত সত্তা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ‘প্রাকৃতিক অধিকার আইন’ প্রণয়ন করুন, যা প্রকৃতি ন্যায্যতাও। শুধু প্রকল্প বা কর্মসূচিতে প্রকৃতি নয়, প্রকৃতির নিজস্ব অস্তিত্বকে স্বীকার করুন এবং প্রাকৃতিক আইন মেনে অর্থায়ন করুন।

খ) ভূমি ও নদী ব্যবস্থাপনায় ন্যায্যতা: ঝুঁকির ভিত্তিতে অগ্রাধিকার দিন। সুনামগঞ্জ, রংপুর, কুড়িগ্রামের মতো জেলাগুলোয় পৃথক ‘ঝুঁকি সামলানো তহবিল’ গঠন করা দরকার।

গ) রাজস্ব উৎস হিসেবে সবুজ কর: কার্বন কর, দূষণ ফি ও পরিবেশ সংরক্ষণ ফি থেকে বছরে ৩ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব আনা সম্ভব।

  • ইটভাটা, সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক, দূষণকারী পণ্য ও পরিবহন ও জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর পরিবেশ সুরক্ষা কর এবং কার্বন করারোপ করুন। মাত্র ১০ শতাংশ হারে এ ধরনের করারোপে প্রায় এক থেকে দেড় বিলিয়ন ডলার জোগান দেওয়া সম্ভব

(সূত্র: চেইঞ্জ ইনিশিয়েটিভ স্টাডি, ২০২৪)।

  • বরাদ্দের পরিমাণ: পরিবেশ, জলবায়ু ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে প্রকৃত বা পরিবেশ ও প্রকৃতির ক্ষয়-ক্ষতি বাদে প্রাক্কলিত নেট জিডিপির অন্তত ২০ শতাংশ বরাদ্দ দিতে হবে প্রকৃতির সুরক্ষা এবং কমিউনিটি নেতৃত্বাধীন রেজিলিয়েন্স নিশ্চিতে-

–               কৃষি খাতে: জিডিপির ৫ শতাংশ

–               পানি খাতে: ৫ শতাংশ

–               জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও পুষ্টি খাতে: ৫ শতাংশ

–               প্রাকৃতিক সুরক্ষা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়: ৫ শতাংশ

সুস্থ বাচ্চা জন্ম দিতে না পারা এক মায়ের কান্নায়, গর্ভবতী নারীর ফুসফুসে জমে থাকা ধুলোয়, মাছের খাঁচা ভেসে যাওয়া একজন মৎস্যজীবীর অসহায়তায় সেই খরচ ধরা পড়ে।

এই মুহূর্তে প্রশ্ন একটাই: আমরা কাকে বাঁচাতে চাই?

শুধু দালান, সড়ক আর মেগা প্রকল্পে কষ্টার্জিত বিনিয়োগ করলেও পানি, নিচে মাটি থাকবে তো? নদী কি থাকবে? মাছ এবং বীজ কি মাইক্রোপ্লাষ্টিক মুক্ত থাকবে?

প্রকৃতিকে বাদ দিয়ে তথাকথিত ধ্বংসাত্মক উন্নয়নকে বেছে নিলে পরিণতি কী হয় তা জানার জন্য সভ্যতাগুলো হারিয়ে যাওয়ার ইতিহাস পড়া উচিত ‘আমি সব জানি’ নীতিনির্ধারক এবং বিশেষজ্ঞদের।

প্রকৃতি প্রদত্ত সুজলা সুফলা বাংলাদেশের সাড়ে বারোশো নদী থেকে মাত্র ২৫০ এর মতো নদী বেচে থাকা, নির্মল বাতাসের ঢাকাকে বৈশ্বিক বায়ু দূষণের কেন্দ্রে পরিণত করা, নদীগুলো বিষের উৎসে পরিণত করাকে যারা উন্নয়ন হিসেবে দেখছেন সে সময় বেশি দূরে নয় যে, তাদের সামনে ভূতুরে অবকাঠামো দাঁড়িয়ে থাকবে-ঝড়ের মুখে, পানির সংকটে, বাতাসের বিষে প্রতিনিয়ত জীবন সংহার হবে।

একটি ন্যায্য, সহনশীল এবং প্রাকৃতিক অধিকার সুরক্ষাবান্ধব বাজেট বাজেট শুধু মানুষের নয়, প্রকৃতি ন্যায্যতা এবং স্থায়িত্বশীলতাও নিশ্চিত করবে।

এম জাকির হোসেন খান ।। প্রধান নির্বাহী, চেইঞ্জ ইনিশিয়েটিভ এবং প্রকৃতির সার্বভৌমত্ব, প্রাকৃতিক অধিকারভিত্তিক শাসন কাঠামার প্রণেতা

ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই নির্বাচন, এদিক-সেদিক যাওয়ার সুযোগ নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৩ মে, ২০২৫, ১:৫৬ অপরাহ্ণ
ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই নির্বাচন, এদিক-সেদিক যাওয়ার সুযোগ নেই

পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে। এই সময়সীমার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।

শুক্রবার (২৩ মে) দুপুরে রাজধানীতে একটি প্রোগ্রাম শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা জানান।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ইতোমধ্যে পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি বলেন, আমি প্রথম থেকেই বলে এসেছি যে উনি (প্রধান উপদেষ্টা) একটা সময় দিয়েছেন—ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তার একদিনও এদিক-সেদিক হওয়ার কোনো সুযোগ আমাদের পক্ষ থেকে নেই। কাজেই এগুলো নিয়ে অন্য ধরনের কোনো কথা বলারও কোনো সুযোগ হওয়া উচিত নয়।

ড. ইউনূসের পদত্যাগ নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় রিজওয়ানা হাসান বলেন, এখন কিছু কিছু গুরু দায়িত্ব আছে, সেগুলো পালনের সঙ্গেও তো মাসের একটা সম্পর্ক থাকতে পারে। যদি কোনো কিছু বলার থাকে, আমি নির্বাচনের প্রশ্নেও বলেছি, দায়িত্ব পালনের প্রশ্নেও বলেছি—ওটা আপনারা ওনার (প্রধান উপদেষ্টার) কাছ থেকেই শুনবেন।

চাপের প্রসঙ্গে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ধরুন, প্রত্যাশার একটা চাপ হচ্ছে যে আমরা পারফর্ম করতে পারছি কি না। আমাদের বিবেচনায় ওটাই একমাত্র চাপ। এর বাইরে আর কোনো চাপ নেই।

তিনি আরও বলেন, আপনি এখন এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় মিটিংয়ে যাবেন—সচিবালয় থেকে যমুনা—যেতে পারবেন না, রাস্তা বন্ধ। কেন রাস্তা বন্ধ? এরকম অনেক সমস্যা আছে, যেগুলো আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করা যায়। চাপ হচ্ছে আমাদের নিজেদের পারফরম্যান্সের। আমরা পারফর্ম করতে পারছি কি পারছি না।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমরা যদি আমাদের দায়িত্ব পালন করতে পারি, তাহলে আমাদের দায়িত্ব থাকাটা প্রাসঙ্গিক। আমরা যদি দায়িত্ব পালন করতে না পারি, আমাদের যার যার নিজস্ব কাজ আছে, তাহলে দায়িত্ব পালন করার আর প্রাসঙ্গিক থাকলো কি না?

আপনার কি দায়িত্ব পালন করতে পারছেন? এমন প্রশ্নের জবাব তিনি বলেন, অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে অনেক দূর এগিয়েছি। সংস্কার কমিশনগুলো তাদের প্রতিবেদন দিয়েছে, সেই প্রতিবেদনের ওপর রাজনৈতিক ঐক্য গড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সব রাজনৈতিক দল সেখানে পার্টিসিপেট করছে। এটা কি পারা না? এটাতো পারা। আমরা একটা নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বলে দিয়েছি যে, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে সেটাও একটা পারা। বিচার ট্রাইব্যুনাল একটা ছিল এখন দুইটা হয়েছে, আগামীকাল থেকে ট্রায়ালার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে, কিন্তু জিনিসগুলা স্মুথ যেতে হবে। এগুলোতে কোনো রকমের প্রতিবন্ধকতা না আসে, সেটা প্রথম থেকে একটা আহ্বান ছিল। এই কাজগুলো আমরা সঠিক প্রক্রিয়াতে শেষ করতে চাই।

‘গতকালকে আমাদের মিটিংয়ের পর অনেকক্ষণ আলোচনা করেছি। মোটা দাগে আমাদের দায়িত্ব তিনটা। তিনটায় কঠিন কঠিন দায়িত্ব। একটা দায়িত্ব হচ্ছে সংস্কার, আরেকটা দায়িত্ব হচ্ছে বিচার, আরেকটা দায়িত্ব হচ্ছে নির্বাচন। শুধুমাত্র নির্বাচন করার জন্য আমরা দায়িত্ব নেইনি।’

তিনি বলেন, আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে যার যত দাবি আছে সবগুলো নিয়ে রাস্তায় বসে যাচ্ছে। রাস্তা আটকে দিচ্ছে, একদম ঢাকা শহর অচল করে দিচ্ছে। সে অচলাবস্থা নিরসনে আমরা কিছু করতে পারছি কি না? আমরা আগেও বলেছি আমরা ক্ষমতার নেইনি দায়িত্বে আছি। এই দায়িত্ব পালন করা তখনই আমাদের জন্য সম্ভব হবে, যখন আমরা সবার সহযোগিতা পাব। প্রত্যাশার বিষয়টা এক, আর দায়িত্ব পালন করার বিষয়টা আরেক। আমরা চিন্তা করেছি আসলে দায়িত্ব পালন করতে পারছে কি না।

গুজবে কান দেবেন না, বিভ্রান্ত হবেন না : সেনাবাহিনী

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৩ মে, ২০২৫, ১:৫৪ অপরাহ্ণ
গুজবে কান দেবেন না, বিভ্রান্ত হবেন না : সেনাবাহিনী

জনগণকে গুজবে কান না দেওয়ার অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

শুক্রবার দুপুরে ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সচেতনতামূলক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে লেখা এক পোস্টে এ আহ্বান জানায় বাহিনী।

সেনাবাহিনী বলছে, সম্প্রতি একটি স্বার্থান্বেষী মহল বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর লোগো ব্যবহার করে একটি ভুয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে, যার মাধ্যমে সাধারণ জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টির পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী ও জনগণের মধ্যে বিভেদ তৈরির অপচেষ্টা চলছে।

পোস্টে আরও লেখা হয়, গুজবে কান দেবেন না, বিভ্রান্ত হবেন না। সত্যতা যাচাই করুন, সচেতন থাকুন।

এ পোস্টের সঙ্গে ভুয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিটির ছবিও জুড়ে দেওয়া হয়।

"> ">
প্রকৃতির ভাষা ও প্রাণের চাহিদা বোঝা বাজেট ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই নির্বাচন, এদিক-সেদিক যাওয়ার সুযোগ নেই গুজবে কান দেবেন না, বিভ্রান্ত হবেন না : সেনাবাহিনী বীরগঞ্জে ভুয়া ফেসবুক আইডি থেকে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন ভারত এই পরাজয় কখনোই ভুলতে পারবে না : শেহবাজ লন্ডনে সালমান এফ রহমানের ছেলে শায়ানের সম্পত্তি জব্দ এখনই রাজনীতিতে আসছেন না ডা. জোবাইদা রহমান ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখেই বাঁচতে চায় মুরসালিম এবার প্রকৃতির তাণ্ডব কাশ্মিরে, তাপমাত্রার রেকর্ড ভাঙল ৫৭ বছরের গরুর মাংসে আগুন-মাছেও অস্বস্তি, মুরগিতে ঝুঁকছেন ক্রেতারা কানের উদ্দেশে রওনা দিলেন আলিয়া বাজারে সবজির দামে কিছুটা স্বস্তি ‘পদত্যাগের’ কথা ভাবছেন ড. ইউনূস, না করার অনুরোধ নাহিদের জুলাই ঐক্য বিনষ্টের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ঢাবিতে বিক্ষোভ উপদেষ্টা মাহফুজের পর হাসনাতেরও ঐক্যের ডাক প্রধান উপদেষ্টাকে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার আহ্বান জামায়াত আমিরের ব্রাইডাল লুকে মুগ্ধতা ছড়ালেন অপু বিশ্বাস না আছে মরার ভয় না আছে হারাবার কিছু : আসিফ মাহমুদ গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পেলেন ট্টাইব্যুনালের তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন নাহিদ ইসলাম সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়াদের পরিচয় প্রকাশ করল আইএসপিআর বীরগঞ্জে বীজ ডিলার ও কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত চলমান আন্দোলনের বিষয়ে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের প্রেস বিজ্ঞপ্তি নাগরিক ছাত্র ঐক্য সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা বীরগঞ্জে ট্রাক-মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৪ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু শেরপুরের বিমলের বাড়িতে মাদকের আখরা, যেন দেখার কেউ নেই! ভবানীপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের উদ্যোগে ফুটবল টুর্ণামেন্ট হবিগঞ্জের থানা পুলিশ অঞ্জাত কিশোরীর লাশ উদ্ধারের পরিচয় সনাক্তে ফেইসবুকে পোস্ট বীরগঞ্জে এনসিপি নেতা হাসনাতের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল নানা কর্মসূচীর মধ্যদিয়ে বীরগঞ্জে আন্তর্জাতিক মহান মে দিবস পালিত