খুঁজুন
শুক্রবার, ২৩শে মে, ২০২৫, ৯ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২

এবার একটু অন্যরকম শোকের মাস!

ড. রাহমান নাসির উদ্দিন প্রকাশিত: শুক্রবার, ২ আগস্ট, ২০২৪, ৮:৩৮ পূর্বাহ্ণ
এবার একটু অন্যরকম শোকের মাস!

আগস্ট শোকের মাস। বাঙালি জাতির জন্য অত্যন্ত বেদনাবিধুর মাস। জাতির পিতার বিয়োগান্ত হত্যাকাণ্ডের মাস। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, পলিটিক্যাল ক্যাটাগরি হিসেবে বাঙালির স্বতন্ত্র জাতিসত্তার জন্মদাতা, বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন ও সা‍র্বভৌম রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট।

তাই, ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ ইতিহাসের কলঙ্কতম দিন। অবিভক্ত ভারতবর্ষের (১৯৪৭ পর্যন্ত), বিভক্ত পাকিস্তানের (১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত) এবং স্বাধীন বাংলাদেশের (১৯৭১ সালের পরবর্তী) শত বছরের সম্মিলিত রাজনৈতিক ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে নৃশংসভাবে হত্যার মতো কলঙ্কজনক অধ্যায় আর একটিও নেই।

শত বছরের ইতিহাসে যেমন ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ, ১৫১১-এর বঙ্গভঙ্গ রদ, ১৯৩৫-এর ভারত শাসন আইন, ১৯৪০-এর লাহোর প্রস্তাব, ১৯৪৭-এর দেশভাগ, ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬২-এর ছাত্র আন্দোলন, ১৯৬৬-এর ছয় দফা, ১৯৭০-এর জাতীয় নির্বাচন, ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এবং ১৯৭১-এর যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবিতে ২০১৩ সালের গণজাগরণ মঞ্চ প্রভৃতি এতদ অঞ্চলের রাজনৈতিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড এতদ অঞ্চলের বিগত একশো বছরের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কজনক, জঘন্যতম এবং ঘৃণ্যতম হত্যাকাণ্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। জাতির জনকের এ হত্যাকাণ্ড ঘটে কোনো বিদেশি শত্রুর হাতে নয়, বরঞ্চ এদেশেরই কিছু কুলাঙ্গার, এদেশেরই আলো বাতাসে বেড়ে ওঠা কিছু অমানুষ, বাঙালির জাতির পিতাকে হত্যা করে ইতিহাসের এ নৃশংসতম এবং জঘন্যতম কলঙ্কের জন্ম দিয়েছে।

ইতিহাসের এ নৃশংসতাকে মনে রেখে জাতির পিতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধার জায়গা থেকে পুরো আগস্ট মাস আমরা জাতীয়ভাবে শোকের মাস হিসেবে পালন করি। এবারও তাই হবে কেননা জাতি হিসেবে পিতার প্রতি জাতির সম্মান প্রদর্শনের এটা একটি প্রতীকী অনুশীলন।

এবারের শোকের মাসে শোক পালনের দীর্ঘশ্বাস এবং স্বাভাবিক নিঃশ্বাস যেন একটু ভারি ভারি লাগছে। কেননা, জুলাই মাসে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যে অনাকাঙ্ক্ষিত রক্তপাত এবং শতাধিক মানুষের করুণ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, তা আমাদের মনকে, হৃদয়কে এবং বিবেককে গভীরভাবে স্পর্শ করেছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে একবার কোটা সংস্কারের আন্দোলন হয়েছিল। সরকারি চাকরিতে প্রায় ৫৬ শতাংশ কোটা থাকায় মেধাবীদের সুযোগ সংকোচিত হয়—এ ব্যাখ্যা ও যুক্তি দিয়ে কোটার একটা যৌক্তিক সংস্কারের দাবি উঠেছিল। এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে একটি সরকারি পরিপত্র জারির মাধ্যমে ২০১৮ কোটা প্রথা একেবারেই বাতিল করা হয়েছিল।

২০২১ সালে দুইজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালে জুনের ৫ তারিখ ২০১৮ সালে জারিকৃত সরকারি পরিপত্র বাতিল করা হয়। ফলে, সরকারি চাকরিতে কোটা আবার ফিরে আসে। এ কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে সাধারণ শিক্ষার্থীরা পুনরায় আন্দোলন শুরু করে।

এবারের শোকের মাসে শোক পালনের দীর্ঘশ্বাস এবং স্বাভাবিক নিঃশ্বাস যেন একটু ভারি ভারি লাগছে। কেননা, জুলাই মাসে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যে অনাকাঙ্ক্ষিত রক্তপাত এবং শতাধিক মানুষের করুণ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, তা আমাদের মনকে, হৃদয়কে এবং বিবেককে গভীরভাবে স্পর্শ করেছে।

সরকারের পক্ষ থেকেও কোটা সংস্কারের যৌক্তিক দাবিকে সমর্থন করে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। আমি নিজেও কোটা সংস্কারের পক্ষে অবস্থান করি, কিন্তু কোটা প্রথা পুরোপুরি বাতিলের বিপক্ষে। সমাজের বিদ্যমান অসমতা জারি রেখে সুযোগের সাম্যতার বিধান অসম জনগোষ্ঠীর প্রতি অবিচার। তাই, বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থা বাতিল নয়; সংস্কার চাই।

কেননা, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন জনগোষ্ঠী, পিতৃতান্ত্রিক সমাজের নারীর অবস্থান এবং প্রত্যন্ত জেলার সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে সমাজের সুবিধাভোগী এবং সুবিধা সম্পন্ন জনগোষ্ঠীর সাথে এক কাতারে মাপা যাবে না। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা না দিলে সেটা হবে সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠার দর্শনের পরিপন্থী। বাংলাদেশের সংবিধানের ২৯ নম্বর ধারায়ও সেটা বলা আছে।

তাছাড়া, মুক্তিযোদ্ধার কোটাও বাদ দেওয়ার পক্ষে আমি নই কারণ মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। মুক্তিযোদ্ধাদের অসীম ত্যাগের বিনিময়ে আমরা এদেশ স্বাধীন করতে পেরেছি। আজকে আমরা যে একটি মুক্ত, স্বাধীন ও সা‍র্বভৌম দেশে বাস করছি এবং মুক্ত আলো-বাতাস নিতে পারছি সেটা জাতির সূ‍র্যসন্তান এসব মুক্তিযোদ্ধাদেরই জন্য।

তাই, তাদের জন্য কোটা রাখাটা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কাতারে মাপা যাবে না। বরঞ্চ এটাকে দেখতে হবে রাষ্ট্রীয় সম্মান, সামাজিক কৃতজ্ঞতা এবং প্রাজন্মিক শ্রদ্ধার স্মারক ও নিদর্শন হিসেবে। কিন্তু সবমিলিয়ে ৫৬ শতাংশ কোটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটাকে সংস্কার করে একটা যৌক্তিক হারে নামিয়ে আনা উচিত।

অবশেষে সুপ্রিম কো‍র্টের আপিল বিভাগ ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে, ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১ শতাংশ নৃ-গোষ্ঠী এবং ১ শতাংশ বিশেষ চাহিদা-সম্পন্ন ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য বরাদ্দ রাখার নির্দেশনা দিয়ে একটা রায় দেয়। এ রায় সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় কেননা সমাজের সর্বস্তরে এর একটা গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। এমনকি ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ও এ রায়কে স্বাগত জানিয়েছে।

কেন ৪ বছরের আহাদ, ৬ বছরের রিয়া, ১০ বছরের হোসাইন, ১১ বছরের সামির, ১৩ বছরের মোবারক, ১৪ বছরের তাহমিদ, ১৬ বছরের ইফাত এবং ১৬ বছরের নাঈমাকে জীবন দিতে হলো? এসব প্রশ্নের উত্তর জানা জরুরি।

সরকারও দ্রুততম সময়ের মধ্যে পরিপত্র জারি করে আপিল বিভাগের রায়কে সক্রিয়ভাবে কার্যকর করেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আন্দোলনকারী এবং সরকার উভয়েরই যদি একই চাওয়া হয়, তাহলে কেন এত রক্তপাত হলো? কেন এত মানুষকে হত্যা করা হলো? কেন কারফিউ জারি করে সেনাবাহিনী নামিয়ে দেশে একটা ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হলো?

কেন বাংলাদেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিতে হলো? কেন হাজারেরও বেশি লোককে কারাগারে যেতে হলো? কেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের রক্তে রঞ্জিত হলো রাজপথ? কেন পুলিশকে জীবন দিতে হলো? কেন ছয়জন সাংবাদিককে জীবন দিতে হলো?

কেন ৪ বছরের আহাদ, ৬ বছরের রিয়া, ১০ বছরের হোসাইন, ১১ বছরের সামির, ১৩ বছরের মোবারক, ১৪ বছরের তাহমিদ, ১৬ বছরের ইফাত এবং ১৬ বছরের নাঈমাকে জীবন দিতে হলো? এসব প্রশ্নের উত্তর জানা জরুরি। কিন্তু সবচেয়ে বেশি জরুরি হচ্ছে, এসব নির্মম হত্যাকাণ্ডে যখন জুলাই মাসের পুরোটাই ভারাক্রান্ত তখন আগস্ট মাসে এসে অর্থাৎ জাতীয় শোকের মাসে এসে আমাদের মনটা যেন অন্যান্য বছরের চেয়ে অধিকতর ভারাক্রান্ত, আমাদের নিঃশ্বাস যেন অধিকতর ভারি এবং আমাদের বেদনা যেন অধিকতর বেদনাতুর।

তাই, এবারের শোকের মাস যেন অন্যরকম শোকের মাস। এ শোকের মাসে পিতার সাথে সাথে সন্তান-সন্ততির জন্যও যেন আমরা সামান্য শোক বরাদ্দ রাখি।

ড. রাহমান নাসির উদ্দিন ।। নৃবিজ্ঞানী ও অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকৃতির ভাষা ও প্রাণের চাহিদা বোঝা বাজেট

এম জাকির হোসেন খান
প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৩ মে, ২০২৫, ১:৫৯ অপরাহ্ণ
প্রকৃতির ভাষা ও প্রাণের চাহিদা বোঝা বাজেট

মায়ের কোলে ঘুমিয়ে থাকা শিশুর নিঃশ্বাসে হয়তো ধুলাবালি নেই, হয়তো নেই নদী হারানোর দীর্ঘশ্বাস। কিন্তু তার ভবিষ্যৎ কি আমরা নিশ্চিত করে দিচ্ছি? হয়তো নয়। কারণ আমাদের জাতীয় বাজেটে প্রকৃতির কোনো স্বর নেই, নেই নদীর জন্য বরাদ্দ, বনাঞ্চলের কান্না বা একটি তপ্ত শহরের শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার সুযোগ।

২০২৪-২৫ অর্থ বছরের বাজেট আলোচনায় জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কিংবা নবায়নযোগ্য জ্বালানির কথা উঠে এসেছে-তবে গণমাধ্যমে। বাস্তবে, যে দেশ প্রতিবছর ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয় ঘূর্ণিঝড়ের কারণে, যে দেশে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার মানুষ শুধু পরিবেশ দূষণের কারণে অকালে মৃত্যুবরণ করে, সেই দেশের বাজেটে জলবায়ু ও পরিবেশ খাতে বরাদ্দ জিডিপির মাত্র ০.৭০৬ শতাংশ-এ কি উপহাস নয়?

এ অবস্থার পেছনে রয়েছে একটি ‘উন্নয়ন-বিনাশ ফাঁদ’ (Development-Destruction Trap)। উন্নয়নের নামে প্রকৃতি ধ্বংস হচ্ছে, অথচ প্রকৃতির উপর নির্ভর করেই টিকে আছে কৃষি, খাদ্য, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা। এ সংকট সমাধানে শুধুমাত্র খাতভিত্তিক বাজেট নয়, প্রয়োজন ন্যায্যতা ও অধিকার ভিত্তিক বাজেট কাঠামো, যেখানে প্রকৃতি ও জনগণের অধিকার সম্মান পায়।

চট্টগ্রামের উপকূলীয় এক গ্রামে ঘূর্ণিঝড় রেমালের পর একজন মাঝবয়সী নারী বলেছিলেন, ‘ঘর গেছে, জমি গেছে, এখন ছেলেমেয়েকে নিয়ে শুধু চাই—জীবনটা যেন একটু নিরাপদ হয়।’ কিন্তু বাজেট সেই নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিতে পারেনি।

বাংলাদেশের বাজেট প্রণয়ন ধারণাটি এখনো প্রকৃতিকে বোঝে না। প্রকৃতিকে ‘ব্যয়যোগ্য’ হিসেবে দেখা হয়, সংরক্ষণ নয়।

পানি উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ কমেছে; স্বাস্থ্য খাতে বাড়লেও তা নগণ্য; দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বরাদ্দ কমেছে মূল্যস্ফীতির হিসাব কষলে। আশ্চর্যজনক হলো, সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল যেমন রংপুর ও সুনামগঞ্জে জনপ্রতি বরাদ্দ সবচেয়ে কম, বরিশালের তুলনায় প্রায় ৯ গুণ কম। এই বৈষম্য কেবল অর্থনৈতিক নয়, এটি নৈতিক ব্যর্থতাও।

বাংলাদেশের বাজেট প্রণয়ন ধারণাটি এখনো প্রকৃতিকে বোঝে না। প্রকৃতিকে ‘ব্যয়যোগ্য’ হিসেবে দেখা হয়, সংরক্ষণ নয়। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন এজেন্সির মতে, $১ বিনিয়োগ করলে পরিবেশগত প্রতিরক্ষা থেকে $৩০ পর্যন্ত আর্থিক সুবিধা আসে—ব্যবসা ভাষায় যাকে বলে বিনিয়োগের রিটার্ন।

আমাদের মাটি, জল, বাতাস আর জীববৈচিত্র্য আজ বিনষ্ট। এ বিনাশের খরচ কেবল সরকারি হিসাব নয়, প্রতিটি পরিবারের নিত্য জীবনের ভোগান্তি। সুস্থ বাচ্চা জন্ম দিতে না পারা এক মায়ের কান্নায়, গর্ভবতী নারীর ফুসফুসে জমে থাকা ধুলোয়, মাছের খাঁচা ভেসে যাওয়া একজন মৎস্যজীবীর অসহায়তায় সেই খরচ ধরা পড়ে।

তাহলে কেমন হওয়া উচিত প্রকৃতি-পরিবেশ বান্ধব বাজেট?

আমাদের প্রস্তাব একটি কাঠামোগত সংস্কারের দৃষ্টিভঙ্গি:

ক) প্রকৃতিকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি: বাংলাদেশের উচ্চ আদালতের নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে প্রদত্ত রায়কে মেনে সরকারের দ্রুত সমুদ্র, বন, পাহাড়কে ‘জীবন্ত সত্তা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ‘প্রাকৃতিক অধিকার আইন’ প্রণয়ন করুন, যা প্রকৃতি ন্যায্যতাও। শুধু প্রকল্প বা কর্মসূচিতে প্রকৃতি নয়, প্রকৃতির নিজস্ব অস্তিত্বকে স্বীকার করুন এবং প্রাকৃতিক আইন মেনে অর্থায়ন করুন।

খ) ভূমি ও নদী ব্যবস্থাপনায় ন্যায্যতা: ঝুঁকির ভিত্তিতে অগ্রাধিকার দিন। সুনামগঞ্জ, রংপুর, কুড়িগ্রামের মতো জেলাগুলোয় পৃথক ‘ঝুঁকি সামলানো তহবিল’ গঠন করা দরকার।

গ) রাজস্ব উৎস হিসেবে সবুজ কর: কার্বন কর, দূষণ ফি ও পরিবেশ সংরক্ষণ ফি থেকে বছরে ৩ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব আনা সম্ভব।

  • ইটভাটা, সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক, দূষণকারী পণ্য ও পরিবহন ও জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর পরিবেশ সুরক্ষা কর এবং কার্বন করারোপ করুন। মাত্র ১০ শতাংশ হারে এ ধরনের করারোপে প্রায় এক থেকে দেড় বিলিয়ন ডলার জোগান দেওয়া সম্ভব

(সূত্র: চেইঞ্জ ইনিশিয়েটিভ স্টাডি, ২০২৪)।

  • বরাদ্দের পরিমাণ: পরিবেশ, জলবায়ু ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে প্রকৃত বা পরিবেশ ও প্রকৃতির ক্ষয়-ক্ষতি বাদে প্রাক্কলিত নেট জিডিপির অন্তত ২০ শতাংশ বরাদ্দ দিতে হবে প্রকৃতির সুরক্ষা এবং কমিউনিটি নেতৃত্বাধীন রেজিলিয়েন্স নিশ্চিতে-

–               কৃষি খাতে: জিডিপির ৫ শতাংশ

–               পানি খাতে: ৫ শতাংশ

–               জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও পুষ্টি খাতে: ৫ শতাংশ

–               প্রাকৃতিক সুরক্ষা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়: ৫ শতাংশ

সুস্থ বাচ্চা জন্ম দিতে না পারা এক মায়ের কান্নায়, গর্ভবতী নারীর ফুসফুসে জমে থাকা ধুলোয়, মাছের খাঁচা ভেসে যাওয়া একজন মৎস্যজীবীর অসহায়তায় সেই খরচ ধরা পড়ে।

এই মুহূর্তে প্রশ্ন একটাই: আমরা কাকে বাঁচাতে চাই?

শুধু দালান, সড়ক আর মেগা প্রকল্পে কষ্টার্জিত বিনিয়োগ করলেও পানি, নিচে মাটি থাকবে তো? নদী কি থাকবে? মাছ এবং বীজ কি মাইক্রোপ্লাষ্টিক মুক্ত থাকবে?

প্রকৃতিকে বাদ দিয়ে তথাকথিত ধ্বংসাত্মক উন্নয়নকে বেছে নিলে পরিণতি কী হয় তা জানার জন্য সভ্যতাগুলো হারিয়ে যাওয়ার ইতিহাস পড়া উচিত ‘আমি সব জানি’ নীতিনির্ধারক এবং বিশেষজ্ঞদের।

প্রকৃতি প্রদত্ত সুজলা সুফলা বাংলাদেশের সাড়ে বারোশো নদী থেকে মাত্র ২৫০ এর মতো নদী বেচে থাকা, নির্মল বাতাসের ঢাকাকে বৈশ্বিক বায়ু দূষণের কেন্দ্রে পরিণত করা, নদীগুলো বিষের উৎসে পরিণত করাকে যারা উন্নয়ন হিসেবে দেখছেন সে সময় বেশি দূরে নয় যে, তাদের সামনে ভূতুরে অবকাঠামো দাঁড়িয়ে থাকবে-ঝড়ের মুখে, পানির সংকটে, বাতাসের বিষে প্রতিনিয়ত জীবন সংহার হবে।

একটি ন্যায্য, সহনশীল এবং প্রাকৃতিক অধিকার সুরক্ষাবান্ধব বাজেট বাজেট শুধু মানুষের নয়, প্রকৃতি ন্যায্যতা এবং স্থায়িত্বশীলতাও নিশ্চিত করবে।

এম জাকির হোসেন খান ।। প্রধান নির্বাহী, চেইঞ্জ ইনিশিয়েটিভ এবং প্রকৃতির সার্বভৌমত্ব, প্রাকৃতিক অধিকারভিত্তিক শাসন কাঠামার প্রণেতা

ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই নির্বাচন, এদিক-সেদিক যাওয়ার সুযোগ নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৩ মে, ২০২৫, ১:৫৬ অপরাহ্ণ
ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই নির্বাচন, এদিক-সেদিক যাওয়ার সুযোগ নেই

পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে। এই সময়সীমার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।

শুক্রবার (২৩ মে) দুপুরে রাজধানীতে একটি প্রোগ্রাম শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা জানান।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ইতোমধ্যে পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি বলেন, আমি প্রথম থেকেই বলে এসেছি যে উনি (প্রধান উপদেষ্টা) একটা সময় দিয়েছেন—ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তার একদিনও এদিক-সেদিক হওয়ার কোনো সুযোগ আমাদের পক্ষ থেকে নেই। কাজেই এগুলো নিয়ে অন্য ধরনের কোনো কথা বলারও কোনো সুযোগ হওয়া উচিত নয়।

ড. ইউনূসের পদত্যাগ নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় রিজওয়ানা হাসান বলেন, এখন কিছু কিছু গুরু দায়িত্ব আছে, সেগুলো পালনের সঙ্গেও তো মাসের একটা সম্পর্ক থাকতে পারে। যদি কোনো কিছু বলার থাকে, আমি নির্বাচনের প্রশ্নেও বলেছি, দায়িত্ব পালনের প্রশ্নেও বলেছি—ওটা আপনারা ওনার (প্রধান উপদেষ্টার) কাছ থেকেই শুনবেন।

চাপের প্রসঙ্গে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ধরুন, প্রত্যাশার একটা চাপ হচ্ছে যে আমরা পারফর্ম করতে পারছি কি না। আমাদের বিবেচনায় ওটাই একমাত্র চাপ। এর বাইরে আর কোনো চাপ নেই।

তিনি আরও বলেন, আপনি এখন এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় মিটিংয়ে যাবেন—সচিবালয় থেকে যমুনা—যেতে পারবেন না, রাস্তা বন্ধ। কেন রাস্তা বন্ধ? এরকম অনেক সমস্যা আছে, যেগুলো আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করা যায়। চাপ হচ্ছে আমাদের নিজেদের পারফরম্যান্সের। আমরা পারফর্ম করতে পারছি কি পারছি না।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমরা যদি আমাদের দায়িত্ব পালন করতে পারি, তাহলে আমাদের দায়িত্ব থাকাটা প্রাসঙ্গিক। আমরা যদি দায়িত্ব পালন করতে না পারি, আমাদের যার যার নিজস্ব কাজ আছে, তাহলে দায়িত্ব পালন করার আর প্রাসঙ্গিক থাকলো কি না?

আপনার কি দায়িত্ব পালন করতে পারছেন? এমন প্রশ্নের জবাব তিনি বলেন, অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে অনেক দূর এগিয়েছি। সংস্কার কমিশনগুলো তাদের প্রতিবেদন দিয়েছে, সেই প্রতিবেদনের ওপর রাজনৈতিক ঐক্য গড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সব রাজনৈতিক দল সেখানে পার্টিসিপেট করছে। এটা কি পারা না? এটাতো পারা। আমরা একটা নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বলে দিয়েছি যে, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে সেটাও একটা পারা। বিচার ট্রাইব্যুনাল একটা ছিল এখন দুইটা হয়েছে, আগামীকাল থেকে ট্রায়ালার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে, কিন্তু জিনিসগুলা স্মুথ যেতে হবে। এগুলোতে কোনো রকমের প্রতিবন্ধকতা না আসে, সেটা প্রথম থেকে একটা আহ্বান ছিল। এই কাজগুলো আমরা সঠিক প্রক্রিয়াতে শেষ করতে চাই।

‘গতকালকে আমাদের মিটিংয়ের পর অনেকক্ষণ আলোচনা করেছি। মোটা দাগে আমাদের দায়িত্ব তিনটা। তিনটায় কঠিন কঠিন দায়িত্ব। একটা দায়িত্ব হচ্ছে সংস্কার, আরেকটা দায়িত্ব হচ্ছে বিচার, আরেকটা দায়িত্ব হচ্ছে নির্বাচন। শুধুমাত্র নির্বাচন করার জন্য আমরা দায়িত্ব নেইনি।’

তিনি বলেন, আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে যার যত দাবি আছে সবগুলো নিয়ে রাস্তায় বসে যাচ্ছে। রাস্তা আটকে দিচ্ছে, একদম ঢাকা শহর অচল করে দিচ্ছে। সে অচলাবস্থা নিরসনে আমরা কিছু করতে পারছি কি না? আমরা আগেও বলেছি আমরা ক্ষমতার নেইনি দায়িত্বে আছি। এই দায়িত্ব পালন করা তখনই আমাদের জন্য সম্ভব হবে, যখন আমরা সবার সহযোগিতা পাব। প্রত্যাশার বিষয়টা এক, আর দায়িত্ব পালন করার বিষয়টা আরেক। আমরা চিন্তা করেছি আসলে দায়িত্ব পালন করতে পারছে কি না।

গুজবে কান দেবেন না, বিভ্রান্ত হবেন না : সেনাবাহিনী

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৩ মে, ২০২৫, ১:৫৪ অপরাহ্ণ
গুজবে কান দেবেন না, বিভ্রান্ত হবেন না : সেনাবাহিনী

জনগণকে গুজবে কান না দেওয়ার অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

শুক্রবার দুপুরে ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সচেতনতামূলক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে লেখা এক পোস্টে এ আহ্বান জানায় বাহিনী।

সেনাবাহিনী বলছে, সম্প্রতি একটি স্বার্থান্বেষী মহল বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর লোগো ব্যবহার করে একটি ভুয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে, যার মাধ্যমে সাধারণ জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টির পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী ও জনগণের মধ্যে বিভেদ তৈরির অপচেষ্টা চলছে।

পোস্টে আরও লেখা হয়, গুজবে কান দেবেন না, বিভ্রান্ত হবেন না। সত্যতা যাচাই করুন, সচেতন থাকুন।

এ পোস্টের সঙ্গে ভুয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিটির ছবিও জুড়ে দেওয়া হয়।

"> ">
প্রকৃতির ভাষা ও প্রাণের চাহিদা বোঝা বাজেট ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই নির্বাচন, এদিক-সেদিক যাওয়ার সুযোগ নেই গুজবে কান দেবেন না, বিভ্রান্ত হবেন না : সেনাবাহিনী বীরগঞ্জে ভুয়া ফেসবুক আইডি থেকে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন ভারত এই পরাজয় কখনোই ভুলতে পারবে না : শেহবাজ লন্ডনে সালমান এফ রহমানের ছেলে শায়ানের সম্পত্তি জব্দ এখনই রাজনীতিতে আসছেন না ডা. জোবাইদা রহমান ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখেই বাঁচতে চায় মুরসালিম এবার প্রকৃতির তাণ্ডব কাশ্মিরে, তাপমাত্রার রেকর্ড ভাঙল ৫৭ বছরের গরুর মাংসে আগুন-মাছেও অস্বস্তি, মুরগিতে ঝুঁকছেন ক্রেতারা কানের উদ্দেশে রওনা দিলেন আলিয়া বাজারে সবজির দামে কিছুটা স্বস্তি ‘পদত্যাগের’ কথা ভাবছেন ড. ইউনূস, না করার অনুরোধ নাহিদের জুলাই ঐক্য বিনষ্টের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ঢাবিতে বিক্ষোভ উপদেষ্টা মাহফুজের পর হাসনাতেরও ঐক্যের ডাক প্রধান উপদেষ্টাকে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার আহ্বান জামায়াত আমিরের ব্রাইডাল লুকে মুগ্ধতা ছড়ালেন অপু বিশ্বাস না আছে মরার ভয় না আছে হারাবার কিছু : আসিফ মাহমুদ গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পেলেন ট্টাইব্যুনালের তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন নাহিদ ইসলাম সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়াদের পরিচয় প্রকাশ করল আইএসপিআর বীরগঞ্জে বীজ ডিলার ও কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত চলমান আন্দোলনের বিষয়ে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের প্রেস বিজ্ঞপ্তি নাগরিক ছাত্র ঐক্য সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা বীরগঞ্জে ট্রাক-মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৪ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু শেরপুরের বিমলের বাড়িতে মাদকের আখরা, যেন দেখার কেউ নেই! ভবানীপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের উদ্যোগে ফুটবল টুর্ণামেন্ট হবিগঞ্জের থানা পুলিশ অঞ্জাত কিশোরীর লাশ উদ্ধারের পরিচয় সনাক্তে ফেইসবুকে পোস্ট বীরগঞ্জে এনসিপি নেতা হাসনাতের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল নানা কর্মসূচীর মধ্যদিয়ে বীরগঞ্জে আন্তর্জাতিক মহান মে দিবস পালিত