খুঁজুন
শুক্রবার, ২৩শে মে, ২০২৫, ৯ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২

কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

জনবল সংকটে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত

চয়ন দেবনাথ মুন্না, নেত্রকোণা প্রকাশিত: বুধবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৪, ১১:১৮ অপরাহ্ণ
জনবল সংকটে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত

মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে চিকিৎসা অন্যতম। কিন্তু কর্তৃপক্ষের উদাসীন মনোভাবের কারণে সেই চিকিৎসা থেকেই বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। নেত্রকোণার কেন্দুয়ায় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকট ও নানা অনিয়মে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে মারাত্মকভাবে। চিকিৎসা নিতে এসে, ডাক্তার সংকট, গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি বিকল, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, পানি সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যায় রোগীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা বলছেন, হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সরা মানসম্মত সেবা দিতে পারছেন না। অপ্রতুল ডাক্তার ও  রোগ নির্ণয়ের ন্যূনতম সুবিধা না থাকার কারণে রোগীদের ময়মনসিংহে রেফার্ড করার প্রবণতা প্রচুর। হাসপাতালে সিজারিয়ান বিভাগ চালু থাকলেও নেই আলট্রাসনোগ্রাম করার সুযোগ। কারণ আলট্রাসনোগ্রাম করার লোক নেই। পাশাপাশি খালি রয়েছে কার্ডিওলজি বিভাগও।

হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত সূত্র জানায়, কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তাসহ মোট ৩৪ জন ডাক্তারের মধ্যে রয়েছেন ১১ জন। মেডিকেল অফিসার ১৩ জনের স্থলে ৪ জন, কনসালটেন্ট ১০ জনের স্থলে কর্মরত আছেন মাত্র ৫ জন। ২৫ জন নার্সের জায়গায় দায়িত্ব পালন করছেন ১৮ জন।

তবে নার্সিং বিভাগের লোকজন বলছেন, হাসপাতালে মিডওয়াইফ নার্সসহ মোট ৩৪টি পদ রয়েছে। তার বিপরীতে কাজ করছেন ২০ জন।

এছাড়াও ল্যাব টেকনিশিয়ান, ফার্মাসিস্ট, স্টোর কিপার, অফিস সহকারী, ক্লিনারসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ পদ একেবারে শূন্য রয়েছে। বেতন নিয়েও দায়িত্ব পালন করছেন না অ্যাম্বুলেন্স চালকের মতো পদের লোকজন। ফলে চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি ব্যাহত হচ্ছে অফিসিয়াল কার্যকম। হাসপাতালে মঞ্জুরিকৃত ৫২ জন জনবলের পরিবর্তে কাজ করছেন ২৮ জন। যেখানে শূন্য পদ রয়ে গেছে ২৪টি।

সরেজমিনে গিয়ে জানা  যায়, আবাসিক মেডিকেল অফিসার, জুনিয়র কনসালটেন্ট (চর্ম ও যৌন), জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিওলজি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু), জুনিয়র কনসালটেন্ট (নাক কান গলা), সহকারী সার্জন (অ্যানেস্থেসিয়া), মেডিকেল অফিসার (পিএমও), মেডিকেল অফিসার (ইউনানি), নার্সিং সুপারভাইজার, সহকারী নার্স, পরিসংখ্যানবিদ, স্টোর কিপার, এমটি (ইপিআই), এমটি (ফিজিও থেরাপি) অফিস সহায়ক, মালি, ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট পদ শূন্য রয়েছে।

চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা অভিযোগ করে বলছেন, প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রের বেশির ভাগই বাহির থেকে কিনতে হয়। জরুরি প্রয়োজনে পাওয়া যায় না অ্যাম্বুলেন্স সেবাও।

হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেওয়া রোগী মো. কাজল বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসা যেমন-তেমন। একটা অ্যাম্বুলেন্স আছে, ড্রাইভার আছে, যিনি প্রতি মাসে বেতন নেন, কিন্তু ডিউটি করেন না। তাকে অ্যাম্বুলেন্সসহ কখনো পাওয়া যায় না। যার কারণে বাইরে থেকে রোগীদের তিন থেকে চার হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে ময়মনসিংহ যেতে হয় উন্নত চিকিৎসার জন্য।

অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে আসা নাজমুল হক বলেন, আমরা এখানে চিকিৎসা নিতে এলে তারা একটু ভালোভাবে পরীক্ষা না করেই ময়মনসিংহে প্রেরণ করে দেন। আর ওষুধের বিষয়ে যদি বলি, ওষুধ বেশিরভাগই বাইরে থেকে কিনতে বলেন তারা। হাসপাতালে শুধু অল্প দামের স্যালাইন ও অল্প কিছু ওষুধ পাওয়া যায়। বাকি সব ওষুধ বাইরে থেকেই কিনতে হয়।

আরেক রোগী মাহাবুব আলম বলেন, আমি গতকাল ভর্তি হয়েছি। ভর্তি হওয়ার পর বেশিরভাগ ওষুধই বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়েছে। আমরা যারা সাধারণ জনগণ, আমরা চাই সরকারি চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হতে। কিন্তু আমরা সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর পর্যাপ্ত চিকিৎসা ও ওষুধ পাই না। তাহলে আমরা সাধারণ জনগণ চিকিৎসা কীভাবে করব?

বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখাতে আসা আফিয়া আক্তার বলেন, যদি কোনো কারণে ভর্তি থাকা হয়, তাহলে হাসপাতালের অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের কারণে একটা অস্বস্তি কাজ করে। ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় আমাদের জন্য। জরুরি বিভাগে প্রচুর ভিড় থাকার কারণে ডাক্তাররা আমাদের গুরুত্ব দিতে চান না। নিয়মিত ডাক্তার থাকলে এত রোগীর চাপ থাকতো না। এত করে ডাক্তাররাও রোগীদের সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলে চিকিৎসা দিতে পারতেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একজন সিনিয়র নার্স জানান, এই হাসপাতাল মোট ৩৪ জন নার্সের পদ রয়েছে। তার মধ্যে ২০ জন নার্স দায়িত্ব পালন করছেন। কেন্দুয়া এলাকায় মারামারির ঘটনা একটু বেশি হয়। এখন সব স্বাভাবিক থাকলেও মাঝে মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আহত রোগী এসে হাজির হয়। তখন সামলানো খুব কষ্টসাধ্য হয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, এটা যেহেতু উপজেলা শহর, এখানে সব ওষুধ সব সময় থাকে না। অনেক সময় রোগীরা ওষুধ না পেয়ে খারাপ আচরণ করে আমাদের সাথে।

অপরিচ্ছন্নতার বিষয়ে এই নার্স বলেন, লোকবল সংকটের মধ্যেও তুলনামূলক পরিষ্কার থাকে আমাদের এই হাসপাতাল। কিন্তু রোগীরা সচেতন না হওয়ার কারণে তারা কিছুক্ষণের মধ্যে আবার নোংরা হয়ে যায়। এমনকি হাসপাতালে অনেকে ধূমপান করেন, তাদের কিছু বলতে গেলে উল্টো বিভিন্ন কথা শুনিয়ে দেন।

জনবল সংকটে চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন দায়িত্বরত ডাক্তাররা। কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি কনসালটেন্ট নাদিয়া মির্জা বলেন, আমাদের এখানে যে সকল সার্ভিস আছে তার মধ্যে নরমাল ডেলিভারি ও সিজারিয়ান সেকশন চালু আছে। সিজারিয়ান সেকশনের ক্ষেত্রে আমাদের ওটি বা ওষুধপত্র নিয়ে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে আমরা কাজের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বোধ করি একটি ব্লাড ব্যাংকের। যেমন আমাদের প্রায়ই প্রিভিয়াস সিজারিয়ান সেকশন করতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে ক্লিনিক্যালি অথবা ইনভেস্টিগেশনের ওপরে নির্ভর করতে হয়। সে ক্ষেত্রে দেখা যায় আমরা ব্লাড ডোনার রেডি রাখি। কিন্তু এখানে যদি একটা ব্লাড ব্যাংক থাকতো তাহলে আমরা নিশ্চিন্তে রোগীদের সেবা দিতে পারি। আমি অবশ্যই চাইবো এখানে যেন সিজারিয়ান সেকশনের সুবিধাটি অব্যাহত থাকে। পাশাপাশি একটা ওটির আইডিয়াল এনভায়রনমেন্টের যে বিষয়টা সেটা যদি নিশ্চিত করা হয় তাহলে খুব ভালো হয়। যেমন ছোট পরিসরে একটি ব্লাড ব্যাংক ও ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুতের জন্য জেনারেটরের ব্যবস্থা রাখা উচিত বলে মনে করে করি।

জনবল সংকটের ফলে চিকিৎসাসেবা ও দাফতরিক কাজসহ নানা রকম অসুবিধা হচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন ভারপ্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নিজাম উদ্দিন।

তিনি বলেন, আমাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ বেডের একটি হাসপাতাল। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং আবাসিক মেডিকেল অফিসারের মতো পদ খালি পড়ে আছে। সব মিলিয়ে ৩৪ জন চিকিৎসকের বিপরীতে রয়েছেন ১১ জন। ২৫ জন নার্সের মধ্যে রয়েছেন ১৮ জন। পাশাপাশি অন্যান্য লোকবল সংকটও রয়েছে। একটি অ্যাম্বুলেন্স আছে তার ড্রাইভার ডিউটিতে আসে না। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলো সে ডিউটিতে আসেনি।

তিনি আরও যোগ করে বলেন, আমাদের এখানে ওয়ার্ড বয় ও পরিচ্ছন্ন কর্মীরও ঘাটতি রয়েছে। পাশাপাশি প্রশাসনিক কর্মকর্তা কর্মকর্তাদের পদ খালি থাকায় ব্যাহত হচ্ছে হাসপাতালের কার্যক্রম। ডাক্তারের সংকট থাকায় আমরা চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছি। আমাদের এখানে এক্সরে, ইসিজি, রক্ত পরীক্ষা, আলট্রাসনোগ্রাম ও প্রস্রাব পরীক্ষার সুবিধা আছে। তবে আল্ট্রাসনোগ্রাম সুবিধা কিছু দিন যাবত বন্ধ আছে। জনবল সংকটের বিষয়টি সমাধানের জন্য আমরা সিভিল সার্জনকে ইতিমধ্যে অবহিত করেছি। তিনি সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।

নেত্রকোণার সিভিল সার্জন ডা. অনুপম ভট্টাচার্য বলেন, কেন্দুয়া হাসপাতালসহ সকল হাসপাতালেই চিকিৎসক সংকট রয়েছে। এ বিষয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। আশা করি অতি দ্রুততম সময়ের মধ্যেই চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি সমাধান হবে। তাছাড়া স্বাস্থ্যকর্মী ও অফিস স্টাফসহ আরও কিছু জনবলের ঘাটতি রয়েছে। আমাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান আছে, এই প্রক্রিয়া শেষ হলেই জনবল সংকটের বিষয়টি সমাধান হবে। এছাড়া অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার অনুপস্থিতির বিষয়টি আমি জেনেছি। তার বিষয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

প্রকৃতির ভাষা ও প্রাণের চাহিদা বোঝা বাজেট

এম জাকির হোসেন খান
প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৩ মে, ২০২৫, ১:৫৯ অপরাহ্ণ
প্রকৃতির ভাষা ও প্রাণের চাহিদা বোঝা বাজেট

মায়ের কোলে ঘুমিয়ে থাকা শিশুর নিঃশ্বাসে হয়তো ধুলাবালি নেই, হয়তো নেই নদী হারানোর দীর্ঘশ্বাস। কিন্তু তার ভবিষ্যৎ কি আমরা নিশ্চিত করে দিচ্ছি? হয়তো নয়। কারণ আমাদের জাতীয় বাজেটে প্রকৃতির কোনো স্বর নেই, নেই নদীর জন্য বরাদ্দ, বনাঞ্চলের কান্না বা একটি তপ্ত শহরের শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার সুযোগ।

২০২৪-২৫ অর্থ বছরের বাজেট আলোচনায় জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কিংবা নবায়নযোগ্য জ্বালানির কথা উঠে এসেছে-তবে গণমাধ্যমে। বাস্তবে, যে দেশ প্রতিবছর ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয় ঘূর্ণিঝড়ের কারণে, যে দেশে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার মানুষ শুধু পরিবেশ দূষণের কারণে অকালে মৃত্যুবরণ করে, সেই দেশের বাজেটে জলবায়ু ও পরিবেশ খাতে বরাদ্দ জিডিপির মাত্র ০.৭০৬ শতাংশ-এ কি উপহাস নয়?

এ অবস্থার পেছনে রয়েছে একটি ‘উন্নয়ন-বিনাশ ফাঁদ’ (Development-Destruction Trap)। উন্নয়নের নামে প্রকৃতি ধ্বংস হচ্ছে, অথচ প্রকৃতির উপর নির্ভর করেই টিকে আছে কৃষি, খাদ্য, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা। এ সংকট সমাধানে শুধুমাত্র খাতভিত্তিক বাজেট নয়, প্রয়োজন ন্যায্যতা ও অধিকার ভিত্তিক বাজেট কাঠামো, যেখানে প্রকৃতি ও জনগণের অধিকার সম্মান পায়।

চট্টগ্রামের উপকূলীয় এক গ্রামে ঘূর্ণিঝড় রেমালের পর একজন মাঝবয়সী নারী বলেছিলেন, ‘ঘর গেছে, জমি গেছে, এখন ছেলেমেয়েকে নিয়ে শুধু চাই—জীবনটা যেন একটু নিরাপদ হয়।’ কিন্তু বাজেট সেই নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিতে পারেনি।

বাংলাদেশের বাজেট প্রণয়ন ধারণাটি এখনো প্রকৃতিকে বোঝে না। প্রকৃতিকে ‘ব্যয়যোগ্য’ হিসেবে দেখা হয়, সংরক্ষণ নয়।

পানি উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ কমেছে; স্বাস্থ্য খাতে বাড়লেও তা নগণ্য; দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বরাদ্দ কমেছে মূল্যস্ফীতির হিসাব কষলে। আশ্চর্যজনক হলো, সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল যেমন রংপুর ও সুনামগঞ্জে জনপ্রতি বরাদ্দ সবচেয়ে কম, বরিশালের তুলনায় প্রায় ৯ গুণ কম। এই বৈষম্য কেবল অর্থনৈতিক নয়, এটি নৈতিক ব্যর্থতাও।

বাংলাদেশের বাজেট প্রণয়ন ধারণাটি এখনো প্রকৃতিকে বোঝে না। প্রকৃতিকে ‘ব্যয়যোগ্য’ হিসেবে দেখা হয়, সংরক্ষণ নয়। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন এজেন্সির মতে, $১ বিনিয়োগ করলে পরিবেশগত প্রতিরক্ষা থেকে $৩০ পর্যন্ত আর্থিক সুবিধা আসে—ব্যবসা ভাষায় যাকে বলে বিনিয়োগের রিটার্ন।

আমাদের মাটি, জল, বাতাস আর জীববৈচিত্র্য আজ বিনষ্ট। এ বিনাশের খরচ কেবল সরকারি হিসাব নয়, প্রতিটি পরিবারের নিত্য জীবনের ভোগান্তি। সুস্থ বাচ্চা জন্ম দিতে না পারা এক মায়ের কান্নায়, গর্ভবতী নারীর ফুসফুসে জমে থাকা ধুলোয়, মাছের খাঁচা ভেসে যাওয়া একজন মৎস্যজীবীর অসহায়তায় সেই খরচ ধরা পড়ে।

তাহলে কেমন হওয়া উচিত প্রকৃতি-পরিবেশ বান্ধব বাজেট?

আমাদের প্রস্তাব একটি কাঠামোগত সংস্কারের দৃষ্টিভঙ্গি:

ক) প্রকৃতিকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি: বাংলাদেশের উচ্চ আদালতের নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে প্রদত্ত রায়কে মেনে সরকারের দ্রুত সমুদ্র, বন, পাহাড়কে ‘জীবন্ত সত্তা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ‘প্রাকৃতিক অধিকার আইন’ প্রণয়ন করুন, যা প্রকৃতি ন্যায্যতাও। শুধু প্রকল্প বা কর্মসূচিতে প্রকৃতি নয়, প্রকৃতির নিজস্ব অস্তিত্বকে স্বীকার করুন এবং প্রাকৃতিক আইন মেনে অর্থায়ন করুন।

খ) ভূমি ও নদী ব্যবস্থাপনায় ন্যায্যতা: ঝুঁকির ভিত্তিতে অগ্রাধিকার দিন। সুনামগঞ্জ, রংপুর, কুড়িগ্রামের মতো জেলাগুলোয় পৃথক ‘ঝুঁকি সামলানো তহবিল’ গঠন করা দরকার।

গ) রাজস্ব উৎস হিসেবে সবুজ কর: কার্বন কর, দূষণ ফি ও পরিবেশ সংরক্ষণ ফি থেকে বছরে ৩ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব আনা সম্ভব।

  • ইটভাটা, সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক, দূষণকারী পণ্য ও পরিবহন ও জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর পরিবেশ সুরক্ষা কর এবং কার্বন করারোপ করুন। মাত্র ১০ শতাংশ হারে এ ধরনের করারোপে প্রায় এক থেকে দেড় বিলিয়ন ডলার জোগান দেওয়া সম্ভব

(সূত্র: চেইঞ্জ ইনিশিয়েটিভ স্টাডি, ২০২৪)।

  • বরাদ্দের পরিমাণ: পরিবেশ, জলবায়ু ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে প্রকৃত বা পরিবেশ ও প্রকৃতির ক্ষয়-ক্ষতি বাদে প্রাক্কলিত নেট জিডিপির অন্তত ২০ শতাংশ বরাদ্দ দিতে হবে প্রকৃতির সুরক্ষা এবং কমিউনিটি নেতৃত্বাধীন রেজিলিয়েন্স নিশ্চিতে-

–               কৃষি খাতে: জিডিপির ৫ শতাংশ

–               পানি খাতে: ৫ শতাংশ

–               জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও পুষ্টি খাতে: ৫ শতাংশ

–               প্রাকৃতিক সুরক্ষা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়: ৫ শতাংশ

সুস্থ বাচ্চা জন্ম দিতে না পারা এক মায়ের কান্নায়, গর্ভবতী নারীর ফুসফুসে জমে থাকা ধুলোয়, মাছের খাঁচা ভেসে যাওয়া একজন মৎস্যজীবীর অসহায়তায় সেই খরচ ধরা পড়ে।

এই মুহূর্তে প্রশ্ন একটাই: আমরা কাকে বাঁচাতে চাই?

শুধু দালান, সড়ক আর মেগা প্রকল্পে কষ্টার্জিত বিনিয়োগ করলেও পানি, নিচে মাটি থাকবে তো? নদী কি থাকবে? মাছ এবং বীজ কি মাইক্রোপ্লাষ্টিক মুক্ত থাকবে?

প্রকৃতিকে বাদ দিয়ে তথাকথিত ধ্বংসাত্মক উন্নয়নকে বেছে নিলে পরিণতি কী হয় তা জানার জন্য সভ্যতাগুলো হারিয়ে যাওয়ার ইতিহাস পড়া উচিত ‘আমি সব জানি’ নীতিনির্ধারক এবং বিশেষজ্ঞদের।

প্রকৃতি প্রদত্ত সুজলা সুফলা বাংলাদেশের সাড়ে বারোশো নদী থেকে মাত্র ২৫০ এর মতো নদী বেচে থাকা, নির্মল বাতাসের ঢাকাকে বৈশ্বিক বায়ু দূষণের কেন্দ্রে পরিণত করা, নদীগুলো বিষের উৎসে পরিণত করাকে যারা উন্নয়ন হিসেবে দেখছেন সে সময় বেশি দূরে নয় যে, তাদের সামনে ভূতুরে অবকাঠামো দাঁড়িয়ে থাকবে-ঝড়ের মুখে, পানির সংকটে, বাতাসের বিষে প্রতিনিয়ত জীবন সংহার হবে।

একটি ন্যায্য, সহনশীল এবং প্রাকৃতিক অধিকার সুরক্ষাবান্ধব বাজেট বাজেট শুধু মানুষের নয়, প্রকৃতি ন্যায্যতা এবং স্থায়িত্বশীলতাও নিশ্চিত করবে।

এম জাকির হোসেন খান ।। প্রধান নির্বাহী, চেইঞ্জ ইনিশিয়েটিভ এবং প্রকৃতির সার্বভৌমত্ব, প্রাকৃতিক অধিকারভিত্তিক শাসন কাঠামার প্রণেতা

ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই নির্বাচন, এদিক-সেদিক যাওয়ার সুযোগ নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৩ মে, ২০২৫, ১:৫৬ অপরাহ্ণ
ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই নির্বাচন, এদিক-সেদিক যাওয়ার সুযোগ নেই

পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে। এই সময়সীমার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।

শুক্রবার (২৩ মে) দুপুরে রাজধানীতে একটি প্রোগ্রাম শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা জানান।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ইতোমধ্যে পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি বলেন, আমি প্রথম থেকেই বলে এসেছি যে উনি (প্রধান উপদেষ্টা) একটা সময় দিয়েছেন—ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তার একদিনও এদিক-সেদিক হওয়ার কোনো সুযোগ আমাদের পক্ষ থেকে নেই। কাজেই এগুলো নিয়ে অন্য ধরনের কোনো কথা বলারও কোনো সুযোগ হওয়া উচিত নয়।

ড. ইউনূসের পদত্যাগ নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় রিজওয়ানা হাসান বলেন, এখন কিছু কিছু গুরু দায়িত্ব আছে, সেগুলো পালনের সঙ্গেও তো মাসের একটা সম্পর্ক থাকতে পারে। যদি কোনো কিছু বলার থাকে, আমি নির্বাচনের প্রশ্নেও বলেছি, দায়িত্ব পালনের প্রশ্নেও বলেছি—ওটা আপনারা ওনার (প্রধান উপদেষ্টার) কাছ থেকেই শুনবেন।

চাপের প্রসঙ্গে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ধরুন, প্রত্যাশার একটা চাপ হচ্ছে যে আমরা পারফর্ম করতে পারছি কি না। আমাদের বিবেচনায় ওটাই একমাত্র চাপ। এর বাইরে আর কোনো চাপ নেই।

তিনি আরও বলেন, আপনি এখন এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় মিটিংয়ে যাবেন—সচিবালয় থেকে যমুনা—যেতে পারবেন না, রাস্তা বন্ধ। কেন রাস্তা বন্ধ? এরকম অনেক সমস্যা আছে, যেগুলো আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করা যায়। চাপ হচ্ছে আমাদের নিজেদের পারফরম্যান্সের। আমরা পারফর্ম করতে পারছি কি পারছি না।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমরা যদি আমাদের দায়িত্ব পালন করতে পারি, তাহলে আমাদের দায়িত্ব থাকাটা প্রাসঙ্গিক। আমরা যদি দায়িত্ব পালন করতে না পারি, আমাদের যার যার নিজস্ব কাজ আছে, তাহলে দায়িত্ব পালন করার আর প্রাসঙ্গিক থাকলো কি না?

আপনার কি দায়িত্ব পালন করতে পারছেন? এমন প্রশ্নের জবাব তিনি বলেন, অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে অনেক দূর এগিয়েছি। সংস্কার কমিশনগুলো তাদের প্রতিবেদন দিয়েছে, সেই প্রতিবেদনের ওপর রাজনৈতিক ঐক্য গড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সব রাজনৈতিক দল সেখানে পার্টিসিপেট করছে। এটা কি পারা না? এটাতো পারা। আমরা একটা নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বলে দিয়েছি যে, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে সেটাও একটা পারা। বিচার ট্রাইব্যুনাল একটা ছিল এখন দুইটা হয়েছে, আগামীকাল থেকে ট্রায়ালার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে, কিন্তু জিনিসগুলা স্মুথ যেতে হবে। এগুলোতে কোনো রকমের প্রতিবন্ধকতা না আসে, সেটা প্রথম থেকে একটা আহ্বান ছিল। এই কাজগুলো আমরা সঠিক প্রক্রিয়াতে শেষ করতে চাই।

‘গতকালকে আমাদের মিটিংয়ের পর অনেকক্ষণ আলোচনা করেছি। মোটা দাগে আমাদের দায়িত্ব তিনটা। তিনটায় কঠিন কঠিন দায়িত্ব। একটা দায়িত্ব হচ্ছে সংস্কার, আরেকটা দায়িত্ব হচ্ছে বিচার, আরেকটা দায়িত্ব হচ্ছে নির্বাচন। শুধুমাত্র নির্বাচন করার জন্য আমরা দায়িত্ব নেইনি।’

তিনি বলেন, আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে যার যত দাবি আছে সবগুলো নিয়ে রাস্তায় বসে যাচ্ছে। রাস্তা আটকে দিচ্ছে, একদম ঢাকা শহর অচল করে দিচ্ছে। সে অচলাবস্থা নিরসনে আমরা কিছু করতে পারছি কি না? আমরা আগেও বলেছি আমরা ক্ষমতার নেইনি দায়িত্বে আছি। এই দায়িত্ব পালন করা তখনই আমাদের জন্য সম্ভব হবে, যখন আমরা সবার সহযোগিতা পাব। প্রত্যাশার বিষয়টা এক, আর দায়িত্ব পালন করার বিষয়টা আরেক। আমরা চিন্তা করেছি আসলে দায়িত্ব পালন করতে পারছে কি না।

গুজবে কান দেবেন না, বিভ্রান্ত হবেন না : সেনাবাহিনী

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৩ মে, ২০২৫, ১:৫৪ অপরাহ্ণ
গুজবে কান দেবেন না, বিভ্রান্ত হবেন না : সেনাবাহিনী

জনগণকে গুজবে কান না দেওয়ার অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

শুক্রবার দুপুরে ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সচেতনতামূলক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে লেখা এক পোস্টে এ আহ্বান জানায় বাহিনী।

সেনাবাহিনী বলছে, সম্প্রতি একটি স্বার্থান্বেষী মহল বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর লোগো ব্যবহার করে একটি ভুয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে, যার মাধ্যমে সাধারণ জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টির পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী ও জনগণের মধ্যে বিভেদ তৈরির অপচেষ্টা চলছে।

পোস্টে আরও লেখা হয়, গুজবে কান দেবেন না, বিভ্রান্ত হবেন না। সত্যতা যাচাই করুন, সচেতন থাকুন।

এ পোস্টের সঙ্গে ভুয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিটির ছবিও জুড়ে দেওয়া হয়।

"> ">
প্রকৃতির ভাষা ও প্রাণের চাহিদা বোঝা বাজেট ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই নির্বাচন, এদিক-সেদিক যাওয়ার সুযোগ নেই গুজবে কান দেবেন না, বিভ্রান্ত হবেন না : সেনাবাহিনী বীরগঞ্জে ভুয়া ফেসবুক আইডি থেকে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন ভারত এই পরাজয় কখনোই ভুলতে পারবে না : শেহবাজ লন্ডনে সালমান এফ রহমানের ছেলে শায়ানের সম্পত্তি জব্দ এখনই রাজনীতিতে আসছেন না ডা. জোবাইদা রহমান ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখেই বাঁচতে চায় মুরসালিম এবার প্রকৃতির তাণ্ডব কাশ্মিরে, তাপমাত্রার রেকর্ড ভাঙল ৫৭ বছরের গরুর মাংসে আগুন-মাছেও অস্বস্তি, মুরগিতে ঝুঁকছেন ক্রেতারা কানের উদ্দেশে রওনা দিলেন আলিয়া বাজারে সবজির দামে কিছুটা স্বস্তি ‘পদত্যাগের’ কথা ভাবছেন ড. ইউনূস, না করার অনুরোধ নাহিদের জুলাই ঐক্য বিনষ্টের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ঢাবিতে বিক্ষোভ উপদেষ্টা মাহফুজের পর হাসনাতেরও ঐক্যের ডাক প্রধান উপদেষ্টাকে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার আহ্বান জামায়াত আমিরের ব্রাইডাল লুকে মুগ্ধতা ছড়ালেন অপু বিশ্বাস না আছে মরার ভয় না আছে হারাবার কিছু : আসিফ মাহমুদ গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পেলেন ট্টাইব্যুনালের তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন নাহিদ ইসলাম সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়াদের পরিচয় প্রকাশ করল আইএসপিআর বীরগঞ্জে বীজ ডিলার ও কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত চলমান আন্দোলনের বিষয়ে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের প্রেস বিজ্ঞপ্তি নাগরিক ছাত্র ঐক্য সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা বীরগঞ্জে ট্রাক-মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৪ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু শেরপুরের বিমলের বাড়িতে মাদকের আখরা, যেন দেখার কেউ নেই! ভবানীপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের উদ্যোগে ফুটবল টুর্ণামেন্ট হবিগঞ্জের থানা পুলিশ অঞ্জাত কিশোরীর লাশ উদ্ধারের পরিচয় সনাক্তে ফেইসবুকে পোস্ট বীরগঞ্জে এনসিপি নেতা হাসনাতের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল নানা কর্মসূচীর মধ্যদিয়ে বীরগঞ্জে আন্তর্জাতিক মহান মে দিবস পালিত