খুঁজুন
শুক্রবার, ২৩শে মে, ২০২৫, ৯ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২

ফিরে দেখা ২০২৪

বছরের আলোচিত নাম রংপুরের ‘আবু সাঈদ’

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, রংপুর প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৭:০৮ অপরাহ্ণ
বছরের আলোচিত নাম রংপুরের ‘আবু সাঈদ’

ঘটনাবহুল ২০২৪ সালে রংপুরে ঘটে গেছে বহু আলোচিত-সমালোচিত ঘটনা। এমনকি রংপুরের কয়েকটি ঘটনা দেশবাসীসহ বিশ্বজুড়ে নাড়াও দিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হলো কোটা সংস্কার আন্দোলন দমনে রাষ্ট্রযন্ত্রের নির্যাতন ও অন্যায়ের প্রতিবাদে পুলিশের গুলির সামনে বুক চিতিয়ে সাহস নিয়ে দাঁড়ানো আবু সাঈদের আত্মত্যাগ। ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আবু সাঈদের বুকে বিবেকবর্জিত নতজানু পুলিশের গুলি চালানোর সেই দৃশ্য দেখেছে বিশ্ববাসী।

পুলিশের ছোড়া একের পর এক রাবার বুলেটে ক্ষতবিক্ষত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়া আবু সাঈদের মৃত্যুর পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দ্রোহের আগুন হয়ে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। শেখ হাসিনার দমননীতি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নতুন মোড় নেয়। ছাত্র-জনতার ক্রোধ আর ক্ষোভের দীর্ঘ নিশ্বাস পরিণত হয় অপ্রতিরোধ্য শক্তিতে। তরান্বিত হয় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদায় ঘণ্টা। শেষ পর্যন্ত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে দলীয় নেতাকর্মীদের ফেলে রেখে নিজের জীবন বাঁচাতে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান টানা সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতার মসনদে থাকা শেখ হাসিনা।

ভোটযুদ্ধে জিএম কাদেরের প্রতিদ্বন্দ্বী হিজড়া জনগোষ্ঠীর রানী 

বছরের মাঝামঝি পতন ঘণ্টা বাজানোর সূচনাটা যে রংপুর থেকে রচিত হবে, তা হয়তো কল্পনাতেও আসেনি স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার। তবে ২০২৪ এর শুরুতে শেখ হাসিনার একদলীয় শাসনব্যবস্থা পাকাপোক্ত করার বিতর্কিত সংসদ নির্বাচনও ছিল আলোচনা-সমালোচনার টেবিলে। প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি-জামায়াতকে একঘরে রেখে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন।

এ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আলোচনা-সমালোচনা হয় রংপুর-৩ আসনের প্রার্থী জিএম কাদের ও হিজড়া জনগোষ্ঠীর আনোয়ারা ইসলাম রানীকে ঘিরে। যদিও শেষ পর্যন্ত আসন ভোটযুদ্ধে জিএম কাদেরই জয়ী হন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দুর্গখ্যাত রংপুরের ছয়টি আসনের মধ্যে শুধুমাত্র একটিতে জয় পেয়েছিল জাতীয় পার্টি।

‘ভোট রাত ৩টার দিকে হয়েছে’

বিতর্কিত এ নির্বাচনের ছয় দিন পর ১৩ জানুয়ারি রংপুর-২ আসনের পরাজিত কৃষক লীগ নেতার বিস্ফোরক মন্তব্য ছিল বেশ আলোচনায়। ‘ভোট রাত ৩টার দিকে হয়েছে’ বলে অভিযোগ করেছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ সরকার ওরফে বিটু।

জিআই পণ্য হিসেবে হাঁড়িভাঙার স্বীকৃতি

উত্তরের অর্থনীতিতে আশীর্বাদ হয়ে আসা হাঁড়িভাঙা আমকে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় ১২ ফেব্রুয়ারি। এর আগে ২০১৬ সালে রংপুরের শতরঞ্জি জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতে স্থান করে নেওয়া হাঁড়িভাঙা আম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় রংপুরের সম্মানের সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পেয়েছে।

এক দিনে শ্যামাসুন্দরী খালের ৫ কিলোমিটার পরিষ্কার

রংপুরের ঐতিহ্য শ্যামাসুন্দরী খালকে মরণ দশা থেকে পুনরুজ্জীবিত করতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও জনসচেতনতামূলক অভিযান পরিচালনা করে রংপুর সিটি কর্পোরেশন (রসিক)। ১১ মে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ৭ ঘণ্টায় শ্যামাসুন্দরী খালের ১৫ দশমিক ৮০ কিলোমিটারে মধ্যে ৫ কিলোমিটার বিডি ক্লিনের স্বেচ্ছাসেবীরা একযোগে পরিষ্কার করেন।

 একদিনেই পানিতে ডুবে ৫ শিশুর মৃত্যু

রংপুরে পৃথক ঘটনায় ২৬ জুন একদিনেই পানিতে ডুবে ৫ শিশুর মৃত্যু হয়। মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ এলাকায় ঘাঘট নদীতে ও নগরীর ভুরারঘাট এলাকায় একই নদীতে ডুবে চারজন এবং মিঠাপুকুরের পশ্চিম বড়বালা গ্রামে পুকুরের পানিতে ডুবে আরেক শিশুর মৃত্যু হয়।

ভিন্ন গ্রুপের রক্তে রোগীর মৃত্যুতে রমেকে তোলপাড়

রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে চিকিৎসকদের ভুলে অস্ত্রোপচারের সময় এক রোগীকে ভিন্ন গ্রুপের রক্ত দেওয়া হয়। ঘটনার ১৮ দিন পর ১০ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফাতেমা বেগমের নামে ওই রোগীর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ভুক্তভোগী পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে তৎকালীন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেন ফাতেমার সন্তানরা।

আবু সাঈদের মৃত্যুতে তরান্বিত হাসিনার পতন

১৬ জুলাই কোটা সংষ্কার আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপর দফায় দফায় হামলা চালায় পুলিশসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা। ওইদিন প্রায় ২০০ রাউন্ড গুলি ও রাবার বুলেট ছোড়ে তারা। এতে পুলিশের গুলিতে মারা যান আবু সাঈদ। নিহত আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন। এর দুদিন পর ১৮ জুলাই পার্ক মোড় তাজহাট থানা এলাকায় পুলিশের গুলিতে মানিক মিয়া নামে এক অটোরিকশা চালকের মৃত্যু হয়।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সারা দেশে ২০ জুলাই কারফিউ দেয় হাসিনা সরকার। এরপরও দমানো যায়নি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একের পর এক কর্মসূচি। শেষ পর্যন্ত ৪ আগস্ট রংপুর নগরী অস্ত্রধারী আওয়ামী সন্ত্রাসীদের তাণ্ডবে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। হামলার শিকার হয়ে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে বিক্ষুদ্ধ ছাত্র-জনতা। এদিন রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা হারাধন রায় এবং তার গাড়িচালক কমল রায়সহ পাঁচজন মারা যান।

এত এত মৃত্যুর খবরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিল পুলিশের গুলির সামনে বুক চিতিয়ে সাহস নিয়ে দাঁড়ানো আবু সাঈদের আত্মত্যাগের বিরল দৃশ্যটি। যা বিশ্ববিবেককে নাড়া দিয়েছে, কেঁদেছে বহু মানুষ। অনুপ্রাণিত হয়েছে শেখ হাসিনার স্বৈরশাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে দেশ-বিদেশে আওয়াজ তোলা লাখ লাখ মানুষকে।

আবু সাঈদ হত্যা মামলায় কলেজছাত্র গ্রেপ্তার 

শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলায় আন্দোলনকারী কলেজছাত্র আলফি শাহরিয়ার মাহিমকে (১৬) আসামি দেখিয়ে গ্রেপ্তারের বিষয়টি ছিল বেশ আলোচিত। যদিও ১৯ জুলাই মাহিমকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি অগোচরেই ছিল। একমাত্র ছোট ভাইয়ের কোনো খোঁজ না মেলায় ৩১ জুলাই মাহিমের বোন সানজানা আখতার স্নেহা ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিলে বিষয়টি আলোচনায় আসে। কিশোর শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। পরবর্তীতে ১ আগস্ট আদালত তাকে জামিন আদেশ দেন।

পুলিশ সদস্যের ফেসবুক পোস্টে প্রশাসনে তোলপাড়

২০ আগস্ট রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরপিএমপি) এক উপপরিদর্শকের (এসআই) ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। স্ট্যাটাসে দাবি করা হয়- ‘গত ১৯ জুলাই রংপুর রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি), বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপার (এসপি) নিজেই রাইডকার দিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি ছোড়েন।’ এই ফেসবুক স্ট্যাটাসটি রংপুর জেলা ও মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেলেও শেয়ার করেন এসআই মজনু। এরপর সেটি নিয়ে রংপুরসহ সারাদেশে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

জামায়াতের হিন্দু শাখা গঠন নিয়ে বিতর্ক

পীরগাছায় ২৫ অক্টোবর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর হিন্দু শাখার কমিটি গঠনের খবরটিও ছিল বেশ আলোচনায়। যদিও পরবর্তীতে জামায়াত নেতারা দাবি করেন- হিন্দু শাখা নয়, অমুসলিম নাগরিক সেবা কমিটি গঠন করা হয়েছে।

ট্রেনের ধাক্কায় আহত কিশোরের অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া

২৬ অক্টোবর রংপুর নগরীর সিংগিমারী রেলসেতুতে টিকটক করতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় গুরুতর আহত কিশোরের অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়ার ঘটনা ছিল বেশ আলোচনায়। কারণ ওই দুর্ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এতে বলা হয় আহত কিশোরের মৃত্যু হয়েছে।

চাকরি ছাড়লেন আবু সাঈদের দুই ভাই

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদের দুই ভাই রমজান আলী ও আবু হোসেনের চাকরি ছেড়ে দেওয়ার ঘটনাটিও আলোচিত ছিল। ৯ অক্টোবর রমজান আলীকে বাংলাদেশ প্রতিদিনের রংপুর ব্যুরো অফিসের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী এবং আবু হোসেনকে টিভি চ্যানেল নিউজ-২৪ এর রংপুর ব্যুরো অফিসের জ্যেষ্ঠ নির্বাহীর পদে নিয়োগ দিয়েছিল বসুন্ধরা গ্রুপ। ওই দিন আবু সাঈদের ছোট বোন সুমী খাতুনকে চাকরি দেয় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) কর্তৃপক্ষ। কিন্তু হঠাৎ করে নভেম্বরের শুরুতে আবু সাঈদের দুই ভাই চাকরি থেকে অব্যাহতি নেওয়ায় তা নিয়ে জনমনে ব্যাপক কৌতুহল তৈরি হয়।

রমেকে রিং বাণিজ্যে চিকিৎসক, তদন্ত কমিটি গঠন

অর্ধযুগ পর রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে চালু হয় হার্টের এনজিওগ্রাম, হার্টের রক্তনালীতে স্টেন্ট (রিং) বসানো এবং হার্টের পেসমেকার স্থাপনের মতো গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসাসেবা। এই হাসপাতালে ২০১১-১২ অর্থবছরে কার্ডিওলজি বিভাগে প্রথমবার চালু করা হয় ক্যাথল্যাব। তবে বিভিন্ন সময় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়েছে এটি। দীর্ঘ ছয় বছর পর ল্যাবটি চালু হলেও নভেম্বরে কার্ডিওলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. মো. মাহবুবুর রহমান নামে এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ওঠা ‘রিং বাণিজ্যসহ ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ সাড়া ফেলে সারা দেশে। রমেক হাপাতালের পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে গঠিত হয় তদন্ত কমিটি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সামনে রসিক মেয়রকে তুলোধুনো

এছাড়াও শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণ, সমর্থন ও আর্থিক সহযোগিতা করায় ২৫ জুলাই রংপুর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সামনে রংপুর সিটির সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে তুলোধুনো করেন আওয়ামী লীগ নেতারা। যা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।

আবু সাঈদের কবর জিয়ারতে সরকার ও রাজনৈতিক নেতারা

১ আগস্ট জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেন। এরপর ৭ আগস্ট আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করতে রংপুরে আসেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। ১০ আগস্ট রংপুরে এসেছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া। ১৪ আগস্ট বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ১৯ আগস্ট নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেন।

অধ্যক্ষের গলায় জুতার মালা, বিজয় মিছিলে বিএনপি নেতার গুলিবর্ষণ

এছাড়াও শহীদ আবু সাঈদের ক্যাম্পাসে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আগমন, বেরোবিতে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের সম্মাননা স্মারক প্রত্যাখান, আবু সাঈদ হত্যা মামলায় বেরোবির সাবেক প্রক্টর গ্রেপ্তার, পীরগাছায় ছাত্র-জনতার বিজয় মিছিলে বিএনপি নেতার গুলিবর্ষণের অভিযোগ, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে রংপুর কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মঞ্জুয়ারা পারভীনকে জুতার মালা দিয়ে পদত্যাগে বাধ্য করানোর ঘটনাটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রয়া সৃষ্টি হয়। সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহর সঙ্গে জাতীয় পার্টির দ্বন্দ্ব, রংপুরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা এবং গণঅধিকার পরিষদের বিরুদ্ধে জাতীয় পার্টির মুখোমুখি অবস্থানের বিষয়টিও রাজনৈতিক মহলে আলোচনায় ছিল।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে বিতর্কে বদিউল আলম

সর্বশেষ ১৯ ডিসেম্বর রংপুরে এসে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে ‘নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণে কোনো বাধা দেখছি না’ বলে সমালোচনার মুখে পড়েন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তার এ বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রচার হলে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যেবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সেটি প্রত্যাখান করে। যদিও ‘নির্বাচন নিয়ে বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে সংবাদ করা হয়েছে’ দাবি করে ঢাকায় ফিরে সংবাদ সম্মেলন করেন বদিউল আলম মজুমদার।

গাইবান্ধার আলোচিত যত ঘটনা

নানা কারণে ২০২৪ সালে গাইবান্ধাও ছিল আলোচনায়। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হলো, নবজাতক বিক্রির টাকায় ঋণ পরিশোধ করলেন বাবা-মা,  টাকা ভাগাভাগির দ্বন্দ্বে ৭২ ঘণ্টা পর মরদেহ দাফন, ত্রাণ নিতে গিয়ে চেয়ারম্যানের মারধরে আহত দিনমজুর, রেললাইনে নারীকে বাঁচাতে গিয়ে যুবকের মৃত্যু, টার্মিনাল থেকে হানিফের বাস চুরি।

বছরজুড়ে আলোচনায় ছিল দালাল সিন্ডিকেটের আঁতুড়ঘর গাইবান্ধার পাসপোর্ট অফিস। মিডিয়াতে দালাল সিন্ডিকেটের নিউজ প্রকাশিত হওয়ার পর অভিযানে নামে দুদক। তিনজনকে আটক করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

আলোচনায় ছিল টাকা ভাগাভাগির দ্বন্দ্বে ৭২ ঘণ্টা পর মরদেহ দাফন করার ঘটনা। জমি বিক্রির টাকার ভাগাভাগি নিয়ে ভাই ভাতিজার দ্বন্দ্বে উঠানে পড়ে থাকা বৃদ্ধ মোতাহার মুন্সির মরদেহ পুলিশি হস্তক্ষেপে ৭২ ঘণ্টা পর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

আলোচনায় ছিল সুজন প্রসাদ নামে সনাতন ধর্মের এক যুবক। নিজ বাঙলা হোটেলে পুরো রমজান মাসে রোজাদারদের জন্য ইফতারের ব্যবস্থা করেন তিনি। আলোচনায় ছিল গাইবান্ধা জেলা কারাগারে নারী কয়ে;র সঙ্গে প্রধান কারারক্ষীর অনৈতিক সম্পর্কের ঘটনাটিও। পরে এ ঘটনায় প্রধান কারারক্ষী আশরাফুল ইসলামসহ দুই কারারক্ষীকে অন্যত্র বদলি করা হয়।

এছাড়াও ২০২৪ সালে সুন্দরগঞ্জে ৬ পা বিশিষ্ট বাছুরের জন্ম, সাদুলাপুরে গ্রাম পুলিশের নাক ফাটিয়ে দেওয়ায় বিএনপির তিন নেতার দলীয় পদ স্থগিত, ‘হ্যাভ এ রিলাক্স ও সি ইউ নট ফর মাইন্ড’ খ্যাত ভাইরাল শ্যামল হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারের ঘটনাও ছিল আলোচনায়।

নীলফামারীতে আলোচিত যা ঘটেছে

ব্যবসায় আর্থিকভাবে ক্ষতির শিকার হয়ে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যার পর ব্যবসায়ীর আত্মহত্যার চেষ্টা, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ না বলায় সৈয়দপুরে সরকারি কলেজ অধ্যক্ষের কক্ষে ছাত্রলীগের তালা ঝুলিয়ে দেওয়া, জমির জন্য বাবার মরদেহ দাফনে বাধা, কবরেই শুয়ে পড়লেন ছেলে- এসব ঘটনা ছিল বছরের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা।

এছাড়াও আলোচনায় ছিল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন মা, সুস্থ আছে কোলে থাকা শিশু, ঢাকা যাওয়ার জন্য জেদ ধরায় নববধূকে হাত বেঁধে নদীতে ফেলে দেন স্বামী এবং সম্পত্তি লিখে না দেওয়ায় বাবার মরদেহ উঠানে ফেলে রাখার ঘটনা।  এসব ঘটনা পাঠক মনে নাড়াও দিয়েছিল।

আলোচনায় পঞ্চগড় যেসব ঘটনা

১৪ বছর আগে জিয়াউর রহমানকে ‘রাজাকার’ বলায় ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের  পর সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের, এক বছরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি তিনজনের মৃত্যু ঘটনা ছিল আলোচিত।

এছাড়াও সীমান্ত পেরিয়ে অবৈধভাবে ভারতীয় নাগরিকদের অনুপ্রবেশ, সাফজয়ী নারী খেলোয়াড় ইয়ারজানের চমক, নারী চিকিৎসকের আত্মহত্যা, বন্যহাতি আতঙ্ক, হত্যার পর চিতাবাঘ উদ্ধার, চার বছর পর ভারি শিল্প চিনিকল চালুর উদ্যোগ ও সীমান্ত থেকে পরিত্যক্ত অস্ত্র উদ্ধারসহ ছিল আলোচনায়।

তবে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ঘটনার মধ্যে ছিল ৪০ বছর পর নেপালি নাগরিকের ঘরে ফেরার বিষয়টি। চার দশক ধরে নেপালি নাগরিক বীর বাহাদুর রায় বাংলাদেশের বিভিন্ন হোটেল-রেস্টুরেন্টে কাজ করেন। নেপালি ওই নাগরিক সকল আইনি জটিলতা শেষে ২৩ মে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে তার স্বজনদের কাছে ফিরে যান।

এছাড়াও বাংলাদেশি মুসলিম তরুণের ভালোবাসার টানে ভারতীয় হিন্দু তরুণীর ধর্মান্তরিত হয়ে বিয়ে এবং সীমান্ত জটিলতা কাটিয়ে বিজিবি ও ইমিপ্রেশন পুলিশের সহায়তায় স্বামীর বাড়ি রংপুরে ফেরার ঘটনাটি ছিল আলোচনায়।

 যেসব ঘটনায় আলোচিত দিনাজপুর

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ দিনমজুর স্বামীর চিকিৎসায় তিনদিনের সন্তানকে ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করার ঘটনাটি ছিল বেশ আলোচনায়। বিভিন্ন মিডিয়ায় এ সংবাদটি প্রকাশ হলে টনক নড়ে স্থানীয় প্রশাসনের। পরে নবজাতককে কুড়িগ্রাম উদ্ধার নবজাতককে জন্মদাতা মা-বাবার কোলে তুলে দেওয়া হয়।

প্রতি রমজানেই বাজারে শসার চাহিদা স্বাভাবিক দরের চেয়ে বেশি হলেও এ বছর দিনাজপুরের খানসামায় শসার দাম ছিল অবিশ্বাস্য। মাত্র ১ টাকা কেজিতে শসা বিক্রি করে মাথায় বাজ পড়ে চাষিদের। ঘটনাটি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে চাষিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেশের সেরা রিটেইল চেইন সুপারশপ ‘স্বপ্ন’।

এছাড়াও চিরিরবন্দরের স্কুলছাত্রী সোমার মাত্র ৮ মাসে হাতে লেখা পবিত্র কোরআন, ইটভাটায় অভিযানের সময় পরিবেশ অধিদপ্তরের গাড়ি ভাঙচুর, রানীরবন্দরে বিআরটিসি বাসের ধাক্কায় ৫ জনের মৃত্যু এবং নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে নৈশপ্রহরীর কাজে পার্বতীপুরের পারুল বেগমের চমকের ঘটনাটি ছিল বেশ আলোচনায়।

আলোচনা থেকে বাদ যায়নি ঠাকুরগাঁও

আয়া থেকে শত কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া মুক্তা রাণীকে নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছিল ঠাকুরগাঁওজুড়ে। স্বামীর মৃত্যুর পর সিভিল সার্জন অফিসে আয়া পদে চাকরি নেওয়া মুক্তা রাণীর সঙ্গে সখ্যতা ছিল সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেনের। এ কারণে বেশিদিন চাকরি করতে হয়নি তাকে। বরং সখ্যতার সম্পর্কে ভর করে মুক্তা রাণী ঠাকুরগাঁওয়ে এমপি রমেশ চন্দ্র সেনের দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে পরিচিতি পান। নাম পরিবর্তন করে তিনি হয়ে যান মুক্তা সেন, শুরু হয় তার উত্থান। সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের নওগাঁর অটো রাইস মিল কয়েক কোটি টাকায় কিনেছেন এই মুক্তা।

প্রকৃতির ভাষা ও প্রাণের চাহিদা বোঝা বাজেট

এম জাকির হোসেন খান
প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৩ মে, ২০২৫, ১:৫৯ অপরাহ্ণ
প্রকৃতির ভাষা ও প্রাণের চাহিদা বোঝা বাজেট

মায়ের কোলে ঘুমিয়ে থাকা শিশুর নিঃশ্বাসে হয়তো ধুলাবালি নেই, হয়তো নেই নদী হারানোর দীর্ঘশ্বাস। কিন্তু তার ভবিষ্যৎ কি আমরা নিশ্চিত করে দিচ্ছি? হয়তো নয়। কারণ আমাদের জাতীয় বাজেটে প্রকৃতির কোনো স্বর নেই, নেই নদীর জন্য বরাদ্দ, বনাঞ্চলের কান্না বা একটি তপ্ত শহরের শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার সুযোগ।

২০২৪-২৫ অর্থ বছরের বাজেট আলোচনায় জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কিংবা নবায়নযোগ্য জ্বালানির কথা উঠে এসেছে-তবে গণমাধ্যমে। বাস্তবে, যে দেশ প্রতিবছর ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয় ঘূর্ণিঝড়ের কারণে, যে দেশে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার মানুষ শুধু পরিবেশ দূষণের কারণে অকালে মৃত্যুবরণ করে, সেই দেশের বাজেটে জলবায়ু ও পরিবেশ খাতে বরাদ্দ জিডিপির মাত্র ০.৭০৬ শতাংশ-এ কি উপহাস নয়?

এ অবস্থার পেছনে রয়েছে একটি ‘উন্নয়ন-বিনাশ ফাঁদ’ (Development-Destruction Trap)। উন্নয়নের নামে প্রকৃতি ধ্বংস হচ্ছে, অথচ প্রকৃতির উপর নির্ভর করেই টিকে আছে কৃষি, খাদ্য, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা। এ সংকট সমাধানে শুধুমাত্র খাতভিত্তিক বাজেট নয়, প্রয়োজন ন্যায্যতা ও অধিকার ভিত্তিক বাজেট কাঠামো, যেখানে প্রকৃতি ও জনগণের অধিকার সম্মান পায়।

চট্টগ্রামের উপকূলীয় এক গ্রামে ঘূর্ণিঝড় রেমালের পর একজন মাঝবয়সী নারী বলেছিলেন, ‘ঘর গেছে, জমি গেছে, এখন ছেলেমেয়েকে নিয়ে শুধু চাই—জীবনটা যেন একটু নিরাপদ হয়।’ কিন্তু বাজেট সেই নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিতে পারেনি।

বাংলাদেশের বাজেট প্রণয়ন ধারণাটি এখনো প্রকৃতিকে বোঝে না। প্রকৃতিকে ‘ব্যয়যোগ্য’ হিসেবে দেখা হয়, সংরক্ষণ নয়।

পানি উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ কমেছে; স্বাস্থ্য খাতে বাড়লেও তা নগণ্য; দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বরাদ্দ কমেছে মূল্যস্ফীতির হিসাব কষলে। আশ্চর্যজনক হলো, সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল যেমন রংপুর ও সুনামগঞ্জে জনপ্রতি বরাদ্দ সবচেয়ে কম, বরিশালের তুলনায় প্রায় ৯ গুণ কম। এই বৈষম্য কেবল অর্থনৈতিক নয়, এটি নৈতিক ব্যর্থতাও।

বাংলাদেশের বাজেট প্রণয়ন ধারণাটি এখনো প্রকৃতিকে বোঝে না। প্রকৃতিকে ‘ব্যয়যোগ্য’ হিসেবে দেখা হয়, সংরক্ষণ নয়। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন এজেন্সির মতে, $১ বিনিয়োগ করলে পরিবেশগত প্রতিরক্ষা থেকে $৩০ পর্যন্ত আর্থিক সুবিধা আসে—ব্যবসা ভাষায় যাকে বলে বিনিয়োগের রিটার্ন।

আমাদের মাটি, জল, বাতাস আর জীববৈচিত্র্য আজ বিনষ্ট। এ বিনাশের খরচ কেবল সরকারি হিসাব নয়, প্রতিটি পরিবারের নিত্য জীবনের ভোগান্তি। সুস্থ বাচ্চা জন্ম দিতে না পারা এক মায়ের কান্নায়, গর্ভবতী নারীর ফুসফুসে জমে থাকা ধুলোয়, মাছের খাঁচা ভেসে যাওয়া একজন মৎস্যজীবীর অসহায়তায় সেই খরচ ধরা পড়ে।

তাহলে কেমন হওয়া উচিত প্রকৃতি-পরিবেশ বান্ধব বাজেট?

আমাদের প্রস্তাব একটি কাঠামোগত সংস্কারের দৃষ্টিভঙ্গি:

ক) প্রকৃতিকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি: বাংলাদেশের উচ্চ আদালতের নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে প্রদত্ত রায়কে মেনে সরকারের দ্রুত সমুদ্র, বন, পাহাড়কে ‘জীবন্ত সত্তা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ‘প্রাকৃতিক অধিকার আইন’ প্রণয়ন করুন, যা প্রকৃতি ন্যায্যতাও। শুধু প্রকল্প বা কর্মসূচিতে প্রকৃতি নয়, প্রকৃতির নিজস্ব অস্তিত্বকে স্বীকার করুন এবং প্রাকৃতিক আইন মেনে অর্থায়ন করুন।

খ) ভূমি ও নদী ব্যবস্থাপনায় ন্যায্যতা: ঝুঁকির ভিত্তিতে অগ্রাধিকার দিন। সুনামগঞ্জ, রংপুর, কুড়িগ্রামের মতো জেলাগুলোয় পৃথক ‘ঝুঁকি সামলানো তহবিল’ গঠন করা দরকার।

গ) রাজস্ব উৎস হিসেবে সবুজ কর: কার্বন কর, দূষণ ফি ও পরিবেশ সংরক্ষণ ফি থেকে বছরে ৩ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব আনা সম্ভব।

  • ইটভাটা, সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক, দূষণকারী পণ্য ও পরিবহন ও জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর পরিবেশ সুরক্ষা কর এবং কার্বন করারোপ করুন। মাত্র ১০ শতাংশ হারে এ ধরনের করারোপে প্রায় এক থেকে দেড় বিলিয়ন ডলার জোগান দেওয়া সম্ভব

(সূত্র: চেইঞ্জ ইনিশিয়েটিভ স্টাডি, ২০২৪)।

  • বরাদ্দের পরিমাণ: পরিবেশ, জলবায়ু ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে প্রকৃত বা পরিবেশ ও প্রকৃতির ক্ষয়-ক্ষতি বাদে প্রাক্কলিত নেট জিডিপির অন্তত ২০ শতাংশ বরাদ্দ দিতে হবে প্রকৃতির সুরক্ষা এবং কমিউনিটি নেতৃত্বাধীন রেজিলিয়েন্স নিশ্চিতে-

–               কৃষি খাতে: জিডিপির ৫ শতাংশ

–               পানি খাতে: ৫ শতাংশ

–               জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও পুষ্টি খাতে: ৫ শতাংশ

–               প্রাকৃতিক সুরক্ষা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়: ৫ শতাংশ

সুস্থ বাচ্চা জন্ম দিতে না পারা এক মায়ের কান্নায়, গর্ভবতী নারীর ফুসফুসে জমে থাকা ধুলোয়, মাছের খাঁচা ভেসে যাওয়া একজন মৎস্যজীবীর অসহায়তায় সেই খরচ ধরা পড়ে।

এই মুহূর্তে প্রশ্ন একটাই: আমরা কাকে বাঁচাতে চাই?

শুধু দালান, সড়ক আর মেগা প্রকল্পে কষ্টার্জিত বিনিয়োগ করলেও পানি, নিচে মাটি থাকবে তো? নদী কি থাকবে? মাছ এবং বীজ কি মাইক্রোপ্লাষ্টিক মুক্ত থাকবে?

প্রকৃতিকে বাদ দিয়ে তথাকথিত ধ্বংসাত্মক উন্নয়নকে বেছে নিলে পরিণতি কী হয় তা জানার জন্য সভ্যতাগুলো হারিয়ে যাওয়ার ইতিহাস পড়া উচিত ‘আমি সব জানি’ নীতিনির্ধারক এবং বিশেষজ্ঞদের।

প্রকৃতি প্রদত্ত সুজলা সুফলা বাংলাদেশের সাড়ে বারোশো নদী থেকে মাত্র ২৫০ এর মতো নদী বেচে থাকা, নির্মল বাতাসের ঢাকাকে বৈশ্বিক বায়ু দূষণের কেন্দ্রে পরিণত করা, নদীগুলো বিষের উৎসে পরিণত করাকে যারা উন্নয়ন হিসেবে দেখছেন সে সময় বেশি দূরে নয় যে, তাদের সামনে ভূতুরে অবকাঠামো দাঁড়িয়ে থাকবে-ঝড়ের মুখে, পানির সংকটে, বাতাসের বিষে প্রতিনিয়ত জীবন সংহার হবে।

একটি ন্যায্য, সহনশীল এবং প্রাকৃতিক অধিকার সুরক্ষাবান্ধব বাজেট বাজেট শুধু মানুষের নয়, প্রকৃতি ন্যায্যতা এবং স্থায়িত্বশীলতাও নিশ্চিত করবে।

এম জাকির হোসেন খান ।। প্রধান নির্বাহী, চেইঞ্জ ইনিশিয়েটিভ এবং প্রকৃতির সার্বভৌমত্ব, প্রাকৃতিক অধিকারভিত্তিক শাসন কাঠামার প্রণেতা

ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই নির্বাচন, এদিক-সেদিক যাওয়ার সুযোগ নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৩ মে, ২০২৫, ১:৫৬ অপরাহ্ণ
ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই নির্বাচন, এদিক-সেদিক যাওয়ার সুযোগ নেই

পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে। এই সময়সীমার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।

শুক্রবার (২৩ মে) দুপুরে রাজধানীতে একটি প্রোগ্রাম শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা জানান।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ইতোমধ্যে পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি বলেন, আমি প্রথম থেকেই বলে এসেছি যে উনি (প্রধান উপদেষ্টা) একটা সময় দিয়েছেন—ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তার একদিনও এদিক-সেদিক হওয়ার কোনো সুযোগ আমাদের পক্ষ থেকে নেই। কাজেই এগুলো নিয়ে অন্য ধরনের কোনো কথা বলারও কোনো সুযোগ হওয়া উচিত নয়।

ড. ইউনূসের পদত্যাগ নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় রিজওয়ানা হাসান বলেন, এখন কিছু কিছু গুরু দায়িত্ব আছে, সেগুলো পালনের সঙ্গেও তো মাসের একটা সম্পর্ক থাকতে পারে। যদি কোনো কিছু বলার থাকে, আমি নির্বাচনের প্রশ্নেও বলেছি, দায়িত্ব পালনের প্রশ্নেও বলেছি—ওটা আপনারা ওনার (প্রধান উপদেষ্টার) কাছ থেকেই শুনবেন।

চাপের প্রসঙ্গে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ধরুন, প্রত্যাশার একটা চাপ হচ্ছে যে আমরা পারফর্ম করতে পারছি কি না। আমাদের বিবেচনায় ওটাই একমাত্র চাপ। এর বাইরে আর কোনো চাপ নেই।

তিনি আরও বলেন, আপনি এখন এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় মিটিংয়ে যাবেন—সচিবালয় থেকে যমুনা—যেতে পারবেন না, রাস্তা বন্ধ। কেন রাস্তা বন্ধ? এরকম অনেক সমস্যা আছে, যেগুলো আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করা যায়। চাপ হচ্ছে আমাদের নিজেদের পারফরম্যান্সের। আমরা পারফর্ম করতে পারছি কি পারছি না।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমরা যদি আমাদের দায়িত্ব পালন করতে পারি, তাহলে আমাদের দায়িত্ব থাকাটা প্রাসঙ্গিক। আমরা যদি দায়িত্ব পালন করতে না পারি, আমাদের যার যার নিজস্ব কাজ আছে, তাহলে দায়িত্ব পালন করার আর প্রাসঙ্গিক থাকলো কি না?

আপনার কি দায়িত্ব পালন করতে পারছেন? এমন প্রশ্নের জবাব তিনি বলেন, অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে অনেক দূর এগিয়েছি। সংস্কার কমিশনগুলো তাদের প্রতিবেদন দিয়েছে, সেই প্রতিবেদনের ওপর রাজনৈতিক ঐক্য গড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সব রাজনৈতিক দল সেখানে পার্টিসিপেট করছে। এটা কি পারা না? এটাতো পারা। আমরা একটা নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বলে দিয়েছি যে, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে সেটাও একটা পারা। বিচার ট্রাইব্যুনাল একটা ছিল এখন দুইটা হয়েছে, আগামীকাল থেকে ট্রায়ালার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে, কিন্তু জিনিসগুলা স্মুথ যেতে হবে। এগুলোতে কোনো রকমের প্রতিবন্ধকতা না আসে, সেটা প্রথম থেকে একটা আহ্বান ছিল। এই কাজগুলো আমরা সঠিক প্রক্রিয়াতে শেষ করতে চাই।

‘গতকালকে আমাদের মিটিংয়ের পর অনেকক্ষণ আলোচনা করেছি। মোটা দাগে আমাদের দায়িত্ব তিনটা। তিনটায় কঠিন কঠিন দায়িত্ব। একটা দায়িত্ব হচ্ছে সংস্কার, আরেকটা দায়িত্ব হচ্ছে বিচার, আরেকটা দায়িত্ব হচ্ছে নির্বাচন। শুধুমাত্র নির্বাচন করার জন্য আমরা দায়িত্ব নেইনি।’

তিনি বলেন, আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে যার যত দাবি আছে সবগুলো নিয়ে রাস্তায় বসে যাচ্ছে। রাস্তা আটকে দিচ্ছে, একদম ঢাকা শহর অচল করে দিচ্ছে। সে অচলাবস্থা নিরসনে আমরা কিছু করতে পারছি কি না? আমরা আগেও বলেছি আমরা ক্ষমতার নেইনি দায়িত্বে আছি। এই দায়িত্ব পালন করা তখনই আমাদের জন্য সম্ভব হবে, যখন আমরা সবার সহযোগিতা পাব। প্রত্যাশার বিষয়টা এক, আর দায়িত্ব পালন করার বিষয়টা আরেক। আমরা চিন্তা করেছি আসলে দায়িত্ব পালন করতে পারছে কি না।

গুজবে কান দেবেন না, বিভ্রান্ত হবেন না : সেনাবাহিনী

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৩ মে, ২০২৫, ১:৫৪ অপরাহ্ণ
গুজবে কান দেবেন না, বিভ্রান্ত হবেন না : সেনাবাহিনী

জনগণকে গুজবে কান না দেওয়ার অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

শুক্রবার দুপুরে ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সচেতনতামূলক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে লেখা এক পোস্টে এ আহ্বান জানায় বাহিনী।

সেনাবাহিনী বলছে, সম্প্রতি একটি স্বার্থান্বেষী মহল বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর লোগো ব্যবহার করে একটি ভুয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে, যার মাধ্যমে সাধারণ জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টির পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী ও জনগণের মধ্যে বিভেদ তৈরির অপচেষ্টা চলছে।

পোস্টে আরও লেখা হয়, গুজবে কান দেবেন না, বিভ্রান্ত হবেন না। সত্যতা যাচাই করুন, সচেতন থাকুন।

এ পোস্টের সঙ্গে ভুয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিটির ছবিও জুড়ে দেওয়া হয়।

"> ">
প্রকৃতির ভাষা ও প্রাণের চাহিদা বোঝা বাজেট ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই নির্বাচন, এদিক-সেদিক যাওয়ার সুযোগ নেই গুজবে কান দেবেন না, বিভ্রান্ত হবেন না : সেনাবাহিনী বীরগঞ্জে ভুয়া ফেসবুক আইডি থেকে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন ভারত এই পরাজয় কখনোই ভুলতে পারবে না : শেহবাজ লন্ডনে সালমান এফ রহমানের ছেলে শায়ানের সম্পত্তি জব্দ এখনই রাজনীতিতে আসছেন না ডা. জোবাইদা রহমান ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখেই বাঁচতে চায় মুরসালিম এবার প্রকৃতির তাণ্ডব কাশ্মিরে, তাপমাত্রার রেকর্ড ভাঙল ৫৭ বছরের গরুর মাংসে আগুন-মাছেও অস্বস্তি, মুরগিতে ঝুঁকছেন ক্রেতারা কানের উদ্দেশে রওনা দিলেন আলিয়া বাজারে সবজির দামে কিছুটা স্বস্তি ‘পদত্যাগের’ কথা ভাবছেন ড. ইউনূস, না করার অনুরোধ নাহিদের জুলাই ঐক্য বিনষ্টের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ঢাবিতে বিক্ষোভ উপদেষ্টা মাহফুজের পর হাসনাতেরও ঐক্যের ডাক প্রধান উপদেষ্টাকে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার আহ্বান জামায়াত আমিরের ব্রাইডাল লুকে মুগ্ধতা ছড়ালেন অপু বিশ্বাস না আছে মরার ভয় না আছে হারাবার কিছু : আসিফ মাহমুদ গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পেলেন ট্টাইব্যুনালের তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন নাহিদ ইসলাম সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়াদের পরিচয় প্রকাশ করল আইএসপিআর বীরগঞ্জে বীজ ডিলার ও কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত চলমান আন্দোলনের বিষয়ে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের প্রেস বিজ্ঞপ্তি নাগরিক ছাত্র ঐক্য সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা বীরগঞ্জে ট্রাক-মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৪ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু শেরপুরের বিমলের বাড়িতে মাদকের আখরা, যেন দেখার কেউ নেই! ভবানীপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের উদ্যোগে ফুটবল টুর্ণামেন্ট হবিগঞ্জের থানা পুলিশ অঞ্জাত কিশোরীর লাশ উদ্ধারের পরিচয় সনাক্তে ফেইসবুকে পোস্ট বীরগঞ্জে এনসিপি নেতা হাসনাতের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল নানা কর্মসূচীর মধ্যদিয়ে বীরগঞ্জে আন্তর্জাতিক মহান মে দিবস পালিত