খুঁজুন
শুক্রবার, ২৩শে মে, ২০২৫, ৯ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ : আবারও চ্যাম্পিয়ন ভারত

পবিত্র কুন্ডু প্রকাশিত: রবিবার, ৩০ জুন, ২০২৪, ২:৪৪ অপরাহ্ণ
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ : আবারও চ্যাম্পিয়ন ভারত

কেনসিংটন ওভালের পাশের সমুদ্রে রোহিত শর্মা ডুব দিয়েছেন কি না বলতে পারি না। দিয়ে থাকলে তা সৌরভ গাঙ্গুলীর অনুমান মতো ব্যর্থতার জ্বালা জুড়াতে নিশ্চয়ই নয়। বরং সাফল্যের আনন্দে এতদিনের তৃষিত হৃদয়কে সুনীল সলিলের অবগাহনে শান্ত করতে।

দক্ষিণ আফ্রিকার মতো পলাতক তকমাটা প্রায় সেঁটে যাচ্ছিল ভারতের গায়ে। তা প্রায় মৌরসী পাট্টা গেড়ে বসে যাওয়ার আগ মুহূর্তে খসিয়ে ফেলতে পারলেন রোহিতরা।

হ্যাঁ, রোহিতরাই। এখানে বহুবচন। সবার মিলিত অবদানেই দারুণ এক জয় ছিনিয়ে নিতে পারলো টিম ইন্ডিয়া। রোহিত অনেকটাই নিজের ব্যাটে চড়িয়ে ভারতকে এনে তোলেন ফাইনালে। যেখানে তার ব্যাটের অবদান মাত্র ৯ রান। কিন্তু তার প্রত্যাশা মতোই জমিয়ে রাখা রানগুলো ফাইনালের ২২ গজে ছেড়ে দিলেন বিরাট কোহলি।

আগের ৭ ম্যাচে যে কোহলির মোট রান মাত্র ৭৫, সেই কোহলিই একপ্রান্ত থেকে রোহিত-ঋষভ-সূর্যকুমারের অকাল বিদায়ের মিছিলে দাঁড়িয়ে একাই করলেন ৭৬ রান। তার সঙ্গে রানের আরেক জোগানদার হলেন অক্ষর প্যাটেল। তাতেই ভারত পেয়ে যায় লড়াই করার মতো রানের পুঁজি।

কিন্তু এই দক্ষিণ আফ্রিকা একটু অন্যরকম। এরা এতদিন সেমিফাইনালে গিয়ে হৃদয় ভাঙার অজস্র গল্প লিখে শোক থেকে জমিয়েছে শক্তি। এই বিশ্বকাপেও হারের কিনারায় গিয়ে প্রায় সবগুলো ম্যাচ জিতে দাঁড়িয়েছে ফাইনালে। তাই চাপ কাকে বলে তারা জানতো। জানতো সেই চাপ জয়ের মন্ত্রও। তাই বলার উপায় ছিল না যে ভারত কেক-ওয়াক করে ট্রফি নিয়ে যাবে কেনসিংটন ওভাল থেকে। রান তাড়ায় লড়াকু মানসিকতা প্রোটিয়ারা তাই দেখিয়ে দিয়েছে ভালোমতোই।

ভারত তাদের তৃতীয় ফাইনালে করলো টি-২০ বিশ্বকাপ ইতিহাসের সর্বোচ্চ ১৭৬ রান। শুরুটা খুব ভালো না হলেও মাঝ ওভারে গিয়ে ভারতীয় বোলারদের ওপর তাণ্ডব চালান মূলত হেনরিখ লারসেন, সঙ্গে কুইন্টন ডি কক। তাদের মিলিত ধ্বংসযজ্ঞে ভারত-বধ প্রায় যখন সম্পন্ন, খেলার মধ্যে মোচড় দেখা দিলো।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের জয়; ছবি : সংগৃহীত

৩০ বলে ৩০ রান দরকার, হাতে ৬ উইকেট। কত বল আর কত উইকেট হাতে রেখে প্রোটিয়ারা তাদের ইতিহাসের প্রথম বিশ্বকাপ জিতবে, এর বাইরে আলোচনার বিষয়বস্তু আর কিছু হতে পারে না তখন। সেইখান থেকেই হেরে বসলো এইডেন মার্করামের দল।

ভারতের উইকেট কিপার ঋষভ পন্ত পায়ের পেশিতে চোট পেলেন। তার শুশ্রূষার জন্য ব্যয় হলো কয়েক মিনিট। এই বিষয়টাই ক্লাসেনের মনোসংযোগে বিঘ্ন ঘটিয়ে থাকতে পারে।

এই দক্ষিণ আফ্রিকা একটু অন্যরকম। এরা এতদিন সেমিফাইনালে গিয়ে হৃদয় ভাঙার অজস্র গল্প লিখে শোক থেকে জমিয়েছে শক্তি। এই বিশ্বকাপেও হারের কিনারায় গিয়ে প্রায় সবগুলো ম্যাচ জিতে দাঁড়িয়েছে ফাইনালে। তাই চাপ কাকে বলে তারা জানতো।

রোহিত শর্মা বল দিলেন হার্দিক পান্ডিয়াকে। ফুল লেন্থে করা পান্ডিয়ার প্রথম বলটিকেই শরীর থেকে একটু দূরে সরে ব্যাট চালিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ ক্লাসেন। তার ফেলে আসা ২৭ বলে ৫২ রানের ইনিংসটা তখন যেন কান্না ছাপিয়ে ভারতীয়দের সম্ভাবনার হাসি হয়ে ঝরছে।

এরপর শেষ স্পেলে ফিরে যশপ্রীত বুমরা ফেরান মার্কো ইয়ানসেনকে। তখনো আশা শেষ হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকার। আরেক প্রান্তে টিকে আছেন ডেভিড মিলার, সাদা বলে বোলারদের শিরদাঁড়ায় নিয়মিতই কাঁপন ধরান বলে যার পরিচিত ‘কিলার মিলার’। শেষ ওভারে দরকার ১৬ রান। চারটি বাউন্ডারি হলেই মামলা শেষ।

পান্ডিয়ার প্রথম বলটি ফুল টস, ওয়াইড। হাঁকালেন মিলার। লং অফ বাউন্ডারির বাইরেই তার ঠিকানা লেখা ছিল। কিন্তু অলৌকিকভাবে  ক্যাচ বানিয়ে ফেললেন সূর্যকুমার যাদব, যার ব্যাটে বরাবরই আস্থা খোঁজা ভারতকে টানা তিনটি সাদা বলের ফাইনালে কেবল হতাশাই উপহার দিয়েছেন।

ওয়াইড লং অফ থেকে দৌড়ে এসে শরীর ভাসিয়ে দেন হাওয়ায়, ভেসে থাকা অবস্থায় বল চালান করে দেন মাঠের মধ্যে। তারপর অদ্ভুতভাবে শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করে তালুবন্দি করেন ক্যাচ। এই ক্যাচটি কেমন তা শুনতে পারেন কপিল দেবের কাছে।

১৯৮৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে ভিভ রিচার্ডসের ক্যাচ নিয়েছিলেন কপিল অবিশ্বাস্যভাবে। ওই ক্যাচটিই ভারতকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করেছে কি না সেই ঘোর আজও পৃথিবীর কাটেনি। সূর্যকুমারের এই ক্যাচটিও অনন্তকাল থেকে যাবে টি-২০ ক্রিকেটের বিশ্ব জয়ের উপাখ্যানে।

যারা এই ফাইনালকে মহাকাব্যিক ব্যঞ্জনা দিলো স্নায়ুক্ষয়ী লড়াইয়ের আগুন জ্বেলে, তাদের চোকার্স বলাটা অন্যায্য হবে। তবে মিলারের বিদায়ের পর এটি নিশ্চিতই বলে দেওয়া গিয়েছিল, বাকি পাঁচ বল থেকে ১৬ রান তুলতে পারবে না দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ বলটিকে ডিপ মিডউইকেটে পাঠিয়ে নর্কিয়া একটি রান নেওয়ার পর সব শেষ।

প্রোটিয়ারা ডুবে গেছে পরাজয়ের বিষাদে। কিন্তু ভারতীয়দের চোখেও তো তখন জল আর জল। শ্রাবণধারা। রোহিত কাঁদছেন, হার্দিক কাঁদছেন। সিরাজের চোখে অশ্রু। বুমরার চোখ বাষ্পরুদ্ধ। রোহিত চুমু খাচ্ছেন হার্দিককে। আবেগে জড়িয়ে ধরেছেন স্ত্রীকে। শরীরের আড়ালে ঢাকা পড়ে গেছে তার অশ্রুভেজা চোখ। বুমরা আলিঙ্গনে বেঁধেছেন স্ত্রী সঞ্জনাকে। হার্দিক একা তেরঙা জাতীয় পতাকা নিয়ে ঘুরছেন মাঠময়। ব্রিজটাউন তখন সত্যিকারের আবেগপুর।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের জয়; ছবি : সংগৃহীত

আর আবেগের কথাটা গলায় তুলে এনে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিকে বিদায় বলে দিলেন বিরাট কোহলি। একই সঙ্গে বিদায় হলো ভারতীয় ক্রিকেটের আরেক মহীরুহের। তিনি রাহুল দ্রাবিড়। ভারতীয় ক্রিকেটের বিশ্বস্ত এই সেবকের ক্যারিয়ার শেষ হয়েছিল বড় এক অপূর্ণতা নিয়ে। কোনো বিশ্বকাপ ট্রফিতে হাত ছোঁয়াতে পারেননি।

ভারতীয়দের চোখেও তো তখন জল আর জল। শ্রাবণধারা। রোহিত কাঁদছেন, হার্দিক কাঁদছেন। সিরাজের চোখে অশ্রু। বুমরার চোখ বাষ্পরুদ্ধ। রোহিত চুমু খাচ্ছেন হার্দিককে।

এই ওয়েস্ট ইন্ডিজেই ২০০৭ সালে ভারত অধিনায়কের টুপি পরে গিয়েছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বকাপ ট্রফি জিতবেন বলে। গ্রুপ পর্বেই হেরে বড্ড গ্লানিময় ছিল তার এবং ভারতের বিদায়। কোচ হয়ে আরও তিনটি বিশ্বকাপের ফাইনাল থেকে ফিরেছেন খালি হাতে। এবার বিদায় বেলায় সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজই তাকে ভরিয়ে দিলো প্রাপ্তির আলোয়।

১৭ বছর পর ব্রিজটাউনে যেন জোহানেসবার্গ ফিরিয়ে এনে জিতল ভারত। ২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে প্রথম টি-২০ বিশ্বকাপের এমন স্নায়ুক্ষয়ী এক ফাইনালই জিতেছিল মহেন্দ্র সিং ধোনির ভারত। এবার রোহিত শর্মার ভারত জিতলো ৭ রানে।

প্রতিপক্ষ, সেই দক্ষিণ আফ্রিকা, যে দেশ থেকে সংক্ষিপ্ততম ক্রিকেটের প্রথম সেরার মুকুট উঠেছিল তাদের মাথায়। আর সেই জয়ের সরণি ধরেই পরে টি-২০ ক্রিকেটের রাজধানী হয়ে উঠেছে ভারত।

দ্বিতীয় ট্রফিটা ভারতের হাতে তাই বেমানান লাগছে না। ভ্রমণ সূচি থেকে শুরু করে ভেন্যু নির্বাচন—সবকিছুতেই ভারতকে সুবিধা দিয়েছে আইসিসি, পুরো ক্রিকেট বিশ্বের এমন সমালোচনার তাপে পুড়তে হয়েছে ভারতকে।

তবে মাঠের সেরা ক্রিকেটে টি-২০ বিশ্বকাপের প্রথম অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েই সব সমালোচনার জবাব দিলো ভারত। আর ২৯ দিনের দীর্ঘ অভিযাত্রা শেষে দক্ষিণ আফ্রিকাও দেখালো তারাও যোগ্য ফাইনালিস্ট।

পবিত্র কুন্ডু ।। ক্রীড়া সাংবাদিক

প্রকৃতির ভাষা ও প্রাণের চাহিদা বোঝা বাজেট

এম জাকির হোসেন খান
প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৩ মে, ২০২৫, ১:৫৯ অপরাহ্ণ
প্রকৃতির ভাষা ও প্রাণের চাহিদা বোঝা বাজেট

মায়ের কোলে ঘুমিয়ে থাকা শিশুর নিঃশ্বাসে হয়তো ধুলাবালি নেই, হয়তো নেই নদী হারানোর দীর্ঘশ্বাস। কিন্তু তার ভবিষ্যৎ কি আমরা নিশ্চিত করে দিচ্ছি? হয়তো নয়। কারণ আমাদের জাতীয় বাজেটে প্রকৃতির কোনো স্বর নেই, নেই নদীর জন্য বরাদ্দ, বনাঞ্চলের কান্না বা একটি তপ্ত শহরের শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার সুযোগ।

২০২৪-২৫ অর্থ বছরের বাজেট আলোচনায় জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কিংবা নবায়নযোগ্য জ্বালানির কথা উঠে এসেছে-তবে গণমাধ্যমে। বাস্তবে, যে দেশ প্রতিবছর ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয় ঘূর্ণিঝড়ের কারণে, যে দেশে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার মানুষ শুধু পরিবেশ দূষণের কারণে অকালে মৃত্যুবরণ করে, সেই দেশের বাজেটে জলবায়ু ও পরিবেশ খাতে বরাদ্দ জিডিপির মাত্র ০.৭০৬ শতাংশ-এ কি উপহাস নয়?

এ অবস্থার পেছনে রয়েছে একটি ‘উন্নয়ন-বিনাশ ফাঁদ’ (Development-Destruction Trap)। উন্নয়নের নামে প্রকৃতি ধ্বংস হচ্ছে, অথচ প্রকৃতির উপর নির্ভর করেই টিকে আছে কৃষি, খাদ্য, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা। এ সংকট সমাধানে শুধুমাত্র খাতভিত্তিক বাজেট নয়, প্রয়োজন ন্যায্যতা ও অধিকার ভিত্তিক বাজেট কাঠামো, যেখানে প্রকৃতি ও জনগণের অধিকার সম্মান পায়।

চট্টগ্রামের উপকূলীয় এক গ্রামে ঘূর্ণিঝড় রেমালের পর একজন মাঝবয়সী নারী বলেছিলেন, ‘ঘর গেছে, জমি গেছে, এখন ছেলেমেয়েকে নিয়ে শুধু চাই—জীবনটা যেন একটু নিরাপদ হয়।’ কিন্তু বাজেট সেই নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিতে পারেনি।

বাংলাদেশের বাজেট প্রণয়ন ধারণাটি এখনো প্রকৃতিকে বোঝে না। প্রকৃতিকে ‘ব্যয়যোগ্য’ হিসেবে দেখা হয়, সংরক্ষণ নয়।

পানি উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ কমেছে; স্বাস্থ্য খাতে বাড়লেও তা নগণ্য; দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বরাদ্দ কমেছে মূল্যস্ফীতির হিসাব কষলে। আশ্চর্যজনক হলো, সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল যেমন রংপুর ও সুনামগঞ্জে জনপ্রতি বরাদ্দ সবচেয়ে কম, বরিশালের তুলনায় প্রায় ৯ গুণ কম। এই বৈষম্য কেবল অর্থনৈতিক নয়, এটি নৈতিক ব্যর্থতাও।

বাংলাদেশের বাজেট প্রণয়ন ধারণাটি এখনো প্রকৃতিকে বোঝে না। প্রকৃতিকে ‘ব্যয়যোগ্য’ হিসেবে দেখা হয়, সংরক্ষণ নয়। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন এজেন্সির মতে, $১ বিনিয়োগ করলে পরিবেশগত প্রতিরক্ষা থেকে $৩০ পর্যন্ত আর্থিক সুবিধা আসে—ব্যবসা ভাষায় যাকে বলে বিনিয়োগের রিটার্ন।

আমাদের মাটি, জল, বাতাস আর জীববৈচিত্র্য আজ বিনষ্ট। এ বিনাশের খরচ কেবল সরকারি হিসাব নয়, প্রতিটি পরিবারের নিত্য জীবনের ভোগান্তি। সুস্থ বাচ্চা জন্ম দিতে না পারা এক মায়ের কান্নায়, গর্ভবতী নারীর ফুসফুসে জমে থাকা ধুলোয়, মাছের খাঁচা ভেসে যাওয়া একজন মৎস্যজীবীর অসহায়তায় সেই খরচ ধরা পড়ে।

তাহলে কেমন হওয়া উচিত প্রকৃতি-পরিবেশ বান্ধব বাজেট?

আমাদের প্রস্তাব একটি কাঠামোগত সংস্কারের দৃষ্টিভঙ্গি:

ক) প্রকৃতিকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি: বাংলাদেশের উচ্চ আদালতের নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে প্রদত্ত রায়কে মেনে সরকারের দ্রুত সমুদ্র, বন, পাহাড়কে ‘জীবন্ত সত্তা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ‘প্রাকৃতিক অধিকার আইন’ প্রণয়ন করুন, যা প্রকৃতি ন্যায্যতাও। শুধু প্রকল্প বা কর্মসূচিতে প্রকৃতি নয়, প্রকৃতির নিজস্ব অস্তিত্বকে স্বীকার করুন এবং প্রাকৃতিক আইন মেনে অর্থায়ন করুন।

খ) ভূমি ও নদী ব্যবস্থাপনায় ন্যায্যতা: ঝুঁকির ভিত্তিতে অগ্রাধিকার দিন। সুনামগঞ্জ, রংপুর, কুড়িগ্রামের মতো জেলাগুলোয় পৃথক ‘ঝুঁকি সামলানো তহবিল’ গঠন করা দরকার।

গ) রাজস্ব উৎস হিসেবে সবুজ কর: কার্বন কর, দূষণ ফি ও পরিবেশ সংরক্ষণ ফি থেকে বছরে ৩ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব আনা সম্ভব।

  • ইটভাটা, সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক, দূষণকারী পণ্য ও পরিবহন ও জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর পরিবেশ সুরক্ষা কর এবং কার্বন করারোপ করুন। মাত্র ১০ শতাংশ হারে এ ধরনের করারোপে প্রায় এক থেকে দেড় বিলিয়ন ডলার জোগান দেওয়া সম্ভব

(সূত্র: চেইঞ্জ ইনিশিয়েটিভ স্টাডি, ২০২৪)।

  • বরাদ্দের পরিমাণ: পরিবেশ, জলবায়ু ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে প্রকৃত বা পরিবেশ ও প্রকৃতির ক্ষয়-ক্ষতি বাদে প্রাক্কলিত নেট জিডিপির অন্তত ২০ শতাংশ বরাদ্দ দিতে হবে প্রকৃতির সুরক্ষা এবং কমিউনিটি নেতৃত্বাধীন রেজিলিয়েন্স নিশ্চিতে-

–               কৃষি খাতে: জিডিপির ৫ শতাংশ

–               পানি খাতে: ৫ শতাংশ

–               জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও পুষ্টি খাতে: ৫ শতাংশ

–               প্রাকৃতিক সুরক্ষা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়: ৫ শতাংশ

সুস্থ বাচ্চা জন্ম দিতে না পারা এক মায়ের কান্নায়, গর্ভবতী নারীর ফুসফুসে জমে থাকা ধুলোয়, মাছের খাঁচা ভেসে যাওয়া একজন মৎস্যজীবীর অসহায়তায় সেই খরচ ধরা পড়ে।

এই মুহূর্তে প্রশ্ন একটাই: আমরা কাকে বাঁচাতে চাই?

শুধু দালান, সড়ক আর মেগা প্রকল্পে কষ্টার্জিত বিনিয়োগ করলেও পানি, নিচে মাটি থাকবে তো? নদী কি থাকবে? মাছ এবং বীজ কি মাইক্রোপ্লাষ্টিক মুক্ত থাকবে?

প্রকৃতিকে বাদ দিয়ে তথাকথিত ধ্বংসাত্মক উন্নয়নকে বেছে নিলে পরিণতি কী হয় তা জানার জন্য সভ্যতাগুলো হারিয়ে যাওয়ার ইতিহাস পড়া উচিত ‘আমি সব জানি’ নীতিনির্ধারক এবং বিশেষজ্ঞদের।

প্রকৃতি প্রদত্ত সুজলা সুফলা বাংলাদেশের সাড়ে বারোশো নদী থেকে মাত্র ২৫০ এর মতো নদী বেচে থাকা, নির্মল বাতাসের ঢাকাকে বৈশ্বিক বায়ু দূষণের কেন্দ্রে পরিণত করা, নদীগুলো বিষের উৎসে পরিণত করাকে যারা উন্নয়ন হিসেবে দেখছেন সে সময় বেশি দূরে নয় যে, তাদের সামনে ভূতুরে অবকাঠামো দাঁড়িয়ে থাকবে-ঝড়ের মুখে, পানির সংকটে, বাতাসের বিষে প্রতিনিয়ত জীবন সংহার হবে।

একটি ন্যায্য, সহনশীল এবং প্রাকৃতিক অধিকার সুরক্ষাবান্ধব বাজেট বাজেট শুধু মানুষের নয়, প্রকৃতি ন্যায্যতা এবং স্থায়িত্বশীলতাও নিশ্চিত করবে।

এম জাকির হোসেন খান ।। প্রধান নির্বাহী, চেইঞ্জ ইনিশিয়েটিভ এবং প্রকৃতির সার্বভৌমত্ব, প্রাকৃতিক অধিকারভিত্তিক শাসন কাঠামার প্রণেতা

ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই নির্বাচন, এদিক-সেদিক যাওয়ার সুযোগ নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৩ মে, ২০২৫, ১:৫৬ অপরাহ্ণ
ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই নির্বাচন, এদিক-সেদিক যাওয়ার সুযোগ নেই

পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে। এই সময়সীমার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।

শুক্রবার (২৩ মে) দুপুরে রাজধানীতে একটি প্রোগ্রাম শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা জানান।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ইতোমধ্যে পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি বলেন, আমি প্রথম থেকেই বলে এসেছি যে উনি (প্রধান উপদেষ্টা) একটা সময় দিয়েছেন—ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তার একদিনও এদিক-সেদিক হওয়ার কোনো সুযোগ আমাদের পক্ষ থেকে নেই। কাজেই এগুলো নিয়ে অন্য ধরনের কোনো কথা বলারও কোনো সুযোগ হওয়া উচিত নয়।

ড. ইউনূসের পদত্যাগ নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় রিজওয়ানা হাসান বলেন, এখন কিছু কিছু গুরু দায়িত্ব আছে, সেগুলো পালনের সঙ্গেও তো মাসের একটা সম্পর্ক থাকতে পারে। যদি কোনো কিছু বলার থাকে, আমি নির্বাচনের প্রশ্নেও বলেছি, দায়িত্ব পালনের প্রশ্নেও বলেছি—ওটা আপনারা ওনার (প্রধান উপদেষ্টার) কাছ থেকেই শুনবেন।

চাপের প্রসঙ্গে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ধরুন, প্রত্যাশার একটা চাপ হচ্ছে যে আমরা পারফর্ম করতে পারছি কি না। আমাদের বিবেচনায় ওটাই একমাত্র চাপ। এর বাইরে আর কোনো চাপ নেই।

তিনি আরও বলেন, আপনি এখন এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় মিটিংয়ে যাবেন—সচিবালয় থেকে যমুনা—যেতে পারবেন না, রাস্তা বন্ধ। কেন রাস্তা বন্ধ? এরকম অনেক সমস্যা আছে, যেগুলো আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করা যায়। চাপ হচ্ছে আমাদের নিজেদের পারফরম্যান্সের। আমরা পারফর্ম করতে পারছি কি পারছি না।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমরা যদি আমাদের দায়িত্ব পালন করতে পারি, তাহলে আমাদের দায়িত্ব থাকাটা প্রাসঙ্গিক। আমরা যদি দায়িত্ব পালন করতে না পারি, আমাদের যার যার নিজস্ব কাজ আছে, তাহলে দায়িত্ব পালন করার আর প্রাসঙ্গিক থাকলো কি না?

আপনার কি দায়িত্ব পালন করতে পারছেন? এমন প্রশ্নের জবাব তিনি বলেন, অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে অনেক দূর এগিয়েছি। সংস্কার কমিশনগুলো তাদের প্রতিবেদন দিয়েছে, সেই প্রতিবেদনের ওপর রাজনৈতিক ঐক্য গড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সব রাজনৈতিক দল সেখানে পার্টিসিপেট করছে। এটা কি পারা না? এটাতো পারা। আমরা একটা নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বলে দিয়েছি যে, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে সেটাও একটা পারা। বিচার ট্রাইব্যুনাল একটা ছিল এখন দুইটা হয়েছে, আগামীকাল থেকে ট্রায়ালার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে, কিন্তু জিনিসগুলা স্মুথ যেতে হবে। এগুলোতে কোনো রকমের প্রতিবন্ধকতা না আসে, সেটা প্রথম থেকে একটা আহ্বান ছিল। এই কাজগুলো আমরা সঠিক প্রক্রিয়াতে শেষ করতে চাই।

‘গতকালকে আমাদের মিটিংয়ের পর অনেকক্ষণ আলোচনা করেছি। মোটা দাগে আমাদের দায়িত্ব তিনটা। তিনটায় কঠিন কঠিন দায়িত্ব। একটা দায়িত্ব হচ্ছে সংস্কার, আরেকটা দায়িত্ব হচ্ছে বিচার, আরেকটা দায়িত্ব হচ্ছে নির্বাচন। শুধুমাত্র নির্বাচন করার জন্য আমরা দায়িত্ব নেইনি।’

তিনি বলেন, আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে যার যত দাবি আছে সবগুলো নিয়ে রাস্তায় বসে যাচ্ছে। রাস্তা আটকে দিচ্ছে, একদম ঢাকা শহর অচল করে দিচ্ছে। সে অচলাবস্থা নিরসনে আমরা কিছু করতে পারছি কি না? আমরা আগেও বলেছি আমরা ক্ষমতার নেইনি দায়িত্বে আছি। এই দায়িত্ব পালন করা তখনই আমাদের জন্য সম্ভব হবে, যখন আমরা সবার সহযোগিতা পাব। প্রত্যাশার বিষয়টা এক, আর দায়িত্ব পালন করার বিষয়টা আরেক। আমরা চিন্তা করেছি আসলে দায়িত্ব পালন করতে পারছে কি না।

গুজবে কান দেবেন না, বিভ্রান্ত হবেন না : সেনাবাহিনী

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৩ মে, ২০২৫, ১:৫৪ অপরাহ্ণ
গুজবে কান দেবেন না, বিভ্রান্ত হবেন না : সেনাবাহিনী

জনগণকে গুজবে কান না দেওয়ার অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

শুক্রবার দুপুরে ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সচেতনতামূলক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে লেখা এক পোস্টে এ আহ্বান জানায় বাহিনী।

সেনাবাহিনী বলছে, সম্প্রতি একটি স্বার্থান্বেষী মহল বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর লোগো ব্যবহার করে একটি ভুয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে, যার মাধ্যমে সাধারণ জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টির পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী ও জনগণের মধ্যে বিভেদ তৈরির অপচেষ্টা চলছে।

পোস্টে আরও লেখা হয়, গুজবে কান দেবেন না, বিভ্রান্ত হবেন না। সত্যতা যাচাই করুন, সচেতন থাকুন।

এ পোস্টের সঙ্গে ভুয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিটির ছবিও জুড়ে দেওয়া হয়।

"> ">
প্রকৃতির ভাষা ও প্রাণের চাহিদা বোঝা বাজেট ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই নির্বাচন, এদিক-সেদিক যাওয়ার সুযোগ নেই গুজবে কান দেবেন না, বিভ্রান্ত হবেন না : সেনাবাহিনী বীরগঞ্জে ভুয়া ফেসবুক আইডি থেকে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন ভারত এই পরাজয় কখনোই ভুলতে পারবে না : শেহবাজ লন্ডনে সালমান এফ রহমানের ছেলে শায়ানের সম্পত্তি জব্দ এখনই রাজনীতিতে আসছেন না ডা. জোবাইদা রহমান ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখেই বাঁচতে চায় মুরসালিম এবার প্রকৃতির তাণ্ডব কাশ্মিরে, তাপমাত্রার রেকর্ড ভাঙল ৫৭ বছরের গরুর মাংসে আগুন-মাছেও অস্বস্তি, মুরগিতে ঝুঁকছেন ক্রেতারা কানের উদ্দেশে রওনা দিলেন আলিয়া বাজারে সবজির দামে কিছুটা স্বস্তি ‘পদত্যাগের’ কথা ভাবছেন ড. ইউনূস, না করার অনুরোধ নাহিদের জুলাই ঐক্য বিনষ্টের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ঢাবিতে বিক্ষোভ উপদেষ্টা মাহফুজের পর হাসনাতেরও ঐক্যের ডাক প্রধান উপদেষ্টাকে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার আহ্বান জামায়াত আমিরের ব্রাইডাল লুকে মুগ্ধতা ছড়ালেন অপু বিশ্বাস না আছে মরার ভয় না আছে হারাবার কিছু : আসিফ মাহমুদ গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পেলেন ট্টাইব্যুনালের তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন নাহিদ ইসলাম সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়াদের পরিচয় প্রকাশ করল আইএসপিআর বীরগঞ্জে বীজ ডিলার ও কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত চলমান আন্দোলনের বিষয়ে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের প্রেস বিজ্ঞপ্তি নাগরিক ছাত্র ঐক্য সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা বীরগঞ্জে ট্রাক-মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৪ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু শেরপুরের বিমলের বাড়িতে মাদকের আখরা, যেন দেখার কেউ নেই! ভবানীপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের উদ্যোগে ফুটবল টুর্ণামেন্ট হবিগঞ্জের থানা পুলিশ অঞ্জাত কিশোরীর লাশ উদ্ধারের পরিচয় সনাক্তে ফেইসবুকে পোস্ট বীরগঞ্জে এনসিপি নেতা হাসনাতের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল নানা কর্মসূচীর মধ্যদিয়ে বীরগঞ্জে আন্তর্জাতিক মহান মে দিবস পালিত