খুঁজুন
শুক্রবার, ২৩শে মে, ২০২৫, ৯ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২

নতুন আতঙ্ক মাঙ্কিপক্স, ডব্লিউএইচওর জরুরি অবস্থা ঘোষণা

ডা. কাকলী হালদার প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট, ২০২৪, ১০:৩৫ অপরাহ্ণ
নতুন আতঙ্ক মাঙ্কিপক্স, ডব্লিউএইচওর জরুরি অবস্থা ঘোষণা

বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি শেষ না হতেই হানা দিয়েছে মাঙ্কিপক্স নামক আরেক রোগ। মাঙ্কিপক্স রোগ মাঙ্কিপক্স (এমপক্স) নামক ভাইরাস সংক্রমণে হয়ে থাকে যা খুবই ছোঁয়াচে। স্মলপক্স (১৯৮০ সালে নির্মূল ঘোষণা করা হয়) আর মাঙ্কিপক্স ভাইরাস সমগোত্রীয় হলে এটি চিকেনপক্স থেকে আলাদা।

তবে চিকেনপক্স আর মাঙ্কিপক্সের রোগলক্ষণ এবং চিকিৎসা পদ্ধতিতে অনেকটাই মিল রয়েছে। এমপক্স প্রধানত প্রাণীদের রোগ হলেও ২০২২ সাল থেকে এটি ব্যাপকভাবে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।

বছরের শুরু থেকেই মধ্য আফ্রিকার কঙ্গো, বুরুন্ডি, রুয়ান্ডা, উগান্ডা, কেনিয়ায় এই রোগ থাকলেও গত কয়েক মাসে ইউরোপের অনেক দেশে এটি ছড়িয়ে পড়েছে। এবার এশিয়ায়ও এমপক্স ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে।

হঠাৎ করেই আশঙ্কাজনকভাবে এই ভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ১৪ আগস্ট ২০২৪ সারাবিশ্বে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)। এর আগে ২০২২ সালে প্রথমবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মাঙ্কিপক্স নিয়ে সতর্কতা জারি করেছিল।

তথ্যমতে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত প্রায় ১৪ হাজার মানুষ ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গিয়েছে প্রায় ৫৩০ জন। ২০২৩ সালের তুলনায় এমপক্স ভাইরাসে আক্রান্তের হার ২০২৪ সালে ১৬০ শতাংশ বেড়েছে এবং মৃত্যুর হার বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। মাঙ্কিপক্সের মৃত্যুহার বিভিন্ন ঝুঁকির উপর নির্ভর করে ১-১০ শতাংশ হতে পারে (কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, দীর্ঘমেয়াদি রোগ, বৃদ্ধ এবং শিশু ইত্যাদি)।

নাম মাঙ্কিপক্স হলেও এমপক্স ভাইরাসটি ইঁদুর, কাঠবিড়ালি, বানর, কাঠবিড়ালি, বন্য কুকুর, সজারু এবং খরগোশের শরীর থেকে সংক্রমিত হতে পারে। তবে সর্বপ্রথম এই ভাইরাস বানরের শরীরে পাওয়া যায়।

রোগ সংক্রমণ কীভাবে হয়

১. সংক্রামিত ব্যক্তির সাথে সরাসরি যেকোনো ধরনের সংস্পর্শ, চুম্বন বা যৌনমিলনের মাধ্যমে।

২. আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি, ব্যবহার করা কাপড়, সুচ বা অন্যান্য জিনিসপত্রের মাধ্যমে।

৩. আক্রান্ত প্রাণীর কামড়, আঁচড়, শিকার করা, চামড়া ছাড়ানো, কাটা বা রান্না করার সময়।

৪. আক্রান্ত প্রাণীর মাংস কম তাপমাত্রায় বা কম সময়ে রান্না করে খেলে।

৫. আক্রান্ত গর্ভবতী মায়ের কাছ থেকেও অনাগত শিশু ভাইরাসটি দিয়ে আক্রান্ত হতে পারে।

৬. শরীরের পানিপূর্ণ ফোসকা বা ব্লিস্টার সম্পূর্ণরূপে শুকিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে এই ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে।

৭. আক্রান্ত ব্যক্তির রোগের লক্ষণ দেখা দেওয়ার এক থেকে চার দিন আগে থেকেই অন্যদের মধ্যে ভাইরাস ছড়াতে পারে।

রোগের উপসর্গ

এমপক্স জীবাণু দিয়ে সংক্রমিত হওয়ার সাধারণত ৩ থেকে ২১ দিনের মধ্যে উপসর্গ শুরু হয় এবং সাধারণত ২ থেকে ৪ সপ্তাহ স্থায়ী হতে পারে। তবে বয়স্ক, শিশু, ক্যান্সার বা এইডস আক্রান্ত রোগী এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের উপসর্গ দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং রোগের তীব্রতাও বেশি হতে পারে।

এই রোগের লক্ষণগুলো সাধারণত শুরু হয় জ্বর, গলাব্যাথা, মাথাব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যথা দিয়ে। এরপর লিম্ফ নোড বা লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়া, দুর্বলতা, হাঁচি-কাশি এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানের ত্বকে জলভর্তি ফোসকা বা ব্লিস্টার হয়। ব্লিস্টার শুকিয়ে স্ক্যাব বা স্তর পড়ে যায় যা আস্তে আস্তে শুকিয়ে ঝরে পড়ে।

তবে এমপক্স ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হলে বা কম সংখ্যক জীবাণু দিয়ে আক্রান্ত হলে অনেক ক্ষেত্রে তিনি উপসর্গবিহীন থাকতে পারেন।

আক্রান্ত ব্যক্তির প্রথমেই ফোসকা দিয়েও রোগের লক্ষণ শুরু হতে পারে যা প্রথম দিকে সমান এবং লাল থাকলেও আস্তে আস্তে পানি ভর্তি হয়ে যায়। হাতের তালু, পায়ের পাতা, হাত, পা, বুক, মুখ, লিঙ্গ, অণ্ডকোষ, কুচকি, যোনির পাশে এবং মলদ্বারে এ ধরনের ফোসকা বেশি দেখা যায়।

ফোসকায় ব্যথা এবং চুলকানি হয়ে থাকে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব এবং সঠিক চিকিৎসা না পেলে এসব ফোসকায় সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হতে পারে।

চিকিৎসা

এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে রোগীকে অবশ্যই আলাদা রুমে বা হাসপাতালের আইসোলেশন সেন্টারে ক্ষত না শুকানো পর্যন্ত রাখতে হবে যেন অন্য কেউ আক্রান্ত না হয়। যেহেতু আমাদের দেশে এখনো এই রোগে আক্রান্ত কোনো রোগী পাওয়া যায়নি তাই এমন উপসর্গের রোগী পেলে সাথে সাথে কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।

এই রোগের কোনো সুনির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নেই। সাধারণত রোগের লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা, পুষ্টিকর সুষম খাবার এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা মেনে চলতে পারলে রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে যায়। রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শে জ্বর, গলাব্যাথা, মাথাব্যথা এবং পেশি ব্যথা কমানোর জন্য ওষুধ সেবন করা যেতে পারে।

কখনো কখনো রোগের তীব্রতা বেশি হলে এবং জটিলতা এড়াতে অ্যান্টিভাইরাল (টেকোভিরিম্যাট, সিডোফোবির) এবং অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের পরামর্শও দেওয়া হয়।

রোগ পরবর্তী জটিলতা

সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না হলে এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন রোগী হলে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত, বিকৃত দাগ, ফোসকায় সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন (Secondary Bacterial Infection), ব্রঙ্কোপনিউমোনিয়া (Bronchopneumonia), শ্বাসকষ্ট (Dyspnoea), সেপটিসেমিয়া (Septicemia), মেনিনজাইটিস (Meningitis), এনকেফালাইটিস (Encephalitis) ইত্যাদি হতে পারে।

রোগ প্রতিরোধে করণীয়

১। আক্রান্ত ব্যক্তিকে অবশ্যই আলাদা রুমে বা হাসপাতালে আইসোলেশনে রাখতে হবে। রোগীর সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে হবে। ব্যবহার করা কাপড় এবং অন্যান্য জিনিসপত্র স্পর্শ করা যাবে না।

২। স্বাস্থ্যকর্মী এবং পরিচর্যাকারীকে রোগীর কাছে যেতে অবশ্যই গ্লাভস, মাস্ক এবং এপ্রোন পরতে হবে।

৩। রোগীর থেকে ১ মিটার দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করতে হবে।

৪। কোনো কিছু স্পর্শ করে হাত না ধুয়ে খাবার খাওয়া বা মুখে হাত দেওয়া যাবে না।

৫। সাবান পানি দিয়ে সঠিক নিয়মে ৩০-৪০ সেকেন্ড এবং অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে ২০-৩০ সেকেন্ড হাত ধুতে হবে।

৬। আক্রান্ত ব্যক্তিকে ঘরের বাইরে মাস্ক এবং হাত পা ঢাকা কাপড় পরতে হবে।

৭। আক্রান্ত প্রাণীর সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। সংস্পর্শে আসলে দ্রুত সাবান পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।

৮। যেকোনো প্রাণীর মাংস সঠিক তাপমাত্রায় এবং সঠিক সময় ধরে রান্না করে খেতে হবে।

৯। যদি রোগের লক্ষণ দেখা দেয়, তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

১০। বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে হবে।

প্রতিরোধে ভ্যাক্সিন

রোগ সংক্রমণের হার বেশি এরকম কয়েকটি দেশে এবং যাদের রিস্ক বেশি তাদের স্মলপক্সের ভ্যাক্সিন দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়াও ইতিমধ্যে যারা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছেন কিন্তু রোগের লক্ষণ এখনো প্রকাশ হয়নি তাদের টিকা দেওয়া যাবে। এমপক্সের বিরুদ্ধে এই টিকা ৮৫ শতাংশ সুরক্ষা দিতে সক্ষম।

বাংলাদেশে এখনো এই রোগে আক্রান্ত কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি। তবে পাকিস্তানে ৩ জন ব্যক্তির দেহে এ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে এই ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে ইতিমধ্যে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

কোনো ব্যক্তির শরীরে এরকম কোনো রোগের লক্ষ্মণ দেখা দিলে, বিদেশে থাকাকালীন আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে অথবা সংক্রমিত কোনো দেশ ভ্রমণের ২১ দিনের মধ্যে এই লক্ষ্মণ দেখা দিলে ১৬২৬৩ এবং ১০৬৫৫ নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

তবে শুধুমাত্র বিমান পথেই না সড়কপথ, নৌপথ এবং সব বর্ডারগুলোয় সতর্ক থাকতে হবে। কারণ এসব পথেও আক্রান্ত রোগী দেশে প্রবেশ করতে পারে। এছাড়া রেডিও, টেলিভিশন, পত্রিকা, মাইকিং, পোস্টার এবং অন্যান্য গণমাধ্যমের মাধ্যমে সর্বস্তরের মানুষকে সচেতন হতে আহ্বান জানাতে হবে।

যেহেতু রোগটি নতুন তাই ভয় না পেয়ে বা আতঙ্কিত না হয়ে রোগটি সম্পর্কে সবাইকে সঠিক তথ্য জানানো, সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

ডা. কাকলী হালদার ।। সহকারী অধ্যাপক, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ

প্রকৃতির ভাষা ও প্রাণের চাহিদা বোঝা বাজেট

এম জাকির হোসেন খান
প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৩ মে, ২০২৫, ১:৫৯ অপরাহ্ণ
প্রকৃতির ভাষা ও প্রাণের চাহিদা বোঝা বাজেট

মায়ের কোলে ঘুমিয়ে থাকা শিশুর নিঃশ্বাসে হয়তো ধুলাবালি নেই, হয়তো নেই নদী হারানোর দীর্ঘশ্বাস। কিন্তু তার ভবিষ্যৎ কি আমরা নিশ্চিত করে দিচ্ছি? হয়তো নয়। কারণ আমাদের জাতীয় বাজেটে প্রকৃতির কোনো স্বর নেই, নেই নদীর জন্য বরাদ্দ, বনাঞ্চলের কান্না বা একটি তপ্ত শহরের শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার সুযোগ।

২০২৪-২৫ অর্থ বছরের বাজেট আলোচনায় জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কিংবা নবায়নযোগ্য জ্বালানির কথা উঠে এসেছে-তবে গণমাধ্যমে। বাস্তবে, যে দেশ প্রতিবছর ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয় ঘূর্ণিঝড়ের কারণে, যে দেশে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার মানুষ শুধু পরিবেশ দূষণের কারণে অকালে মৃত্যুবরণ করে, সেই দেশের বাজেটে জলবায়ু ও পরিবেশ খাতে বরাদ্দ জিডিপির মাত্র ০.৭০৬ শতাংশ-এ কি উপহাস নয়?

এ অবস্থার পেছনে রয়েছে একটি ‘উন্নয়ন-বিনাশ ফাঁদ’ (Development-Destruction Trap)। উন্নয়নের নামে প্রকৃতি ধ্বংস হচ্ছে, অথচ প্রকৃতির উপর নির্ভর করেই টিকে আছে কৃষি, খাদ্য, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা। এ সংকট সমাধানে শুধুমাত্র খাতভিত্তিক বাজেট নয়, প্রয়োজন ন্যায্যতা ও অধিকার ভিত্তিক বাজেট কাঠামো, যেখানে প্রকৃতি ও জনগণের অধিকার সম্মান পায়।

চট্টগ্রামের উপকূলীয় এক গ্রামে ঘূর্ণিঝড় রেমালের পর একজন মাঝবয়সী নারী বলেছিলেন, ‘ঘর গেছে, জমি গেছে, এখন ছেলেমেয়েকে নিয়ে শুধু চাই—জীবনটা যেন একটু নিরাপদ হয়।’ কিন্তু বাজেট সেই নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিতে পারেনি।

বাংলাদেশের বাজেট প্রণয়ন ধারণাটি এখনো প্রকৃতিকে বোঝে না। প্রকৃতিকে ‘ব্যয়যোগ্য’ হিসেবে দেখা হয়, সংরক্ষণ নয়।

পানি উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ কমেছে; স্বাস্থ্য খাতে বাড়লেও তা নগণ্য; দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বরাদ্দ কমেছে মূল্যস্ফীতির হিসাব কষলে। আশ্চর্যজনক হলো, সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল যেমন রংপুর ও সুনামগঞ্জে জনপ্রতি বরাদ্দ সবচেয়ে কম, বরিশালের তুলনায় প্রায় ৯ গুণ কম। এই বৈষম্য কেবল অর্থনৈতিক নয়, এটি নৈতিক ব্যর্থতাও।

বাংলাদেশের বাজেট প্রণয়ন ধারণাটি এখনো প্রকৃতিকে বোঝে না। প্রকৃতিকে ‘ব্যয়যোগ্য’ হিসেবে দেখা হয়, সংরক্ষণ নয়। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন এজেন্সির মতে, $১ বিনিয়োগ করলে পরিবেশগত প্রতিরক্ষা থেকে $৩০ পর্যন্ত আর্থিক সুবিধা আসে—ব্যবসা ভাষায় যাকে বলে বিনিয়োগের রিটার্ন।

আমাদের মাটি, জল, বাতাস আর জীববৈচিত্র্য আজ বিনষ্ট। এ বিনাশের খরচ কেবল সরকারি হিসাব নয়, প্রতিটি পরিবারের নিত্য জীবনের ভোগান্তি। সুস্থ বাচ্চা জন্ম দিতে না পারা এক মায়ের কান্নায়, গর্ভবতী নারীর ফুসফুসে জমে থাকা ধুলোয়, মাছের খাঁচা ভেসে যাওয়া একজন মৎস্যজীবীর অসহায়তায় সেই খরচ ধরা পড়ে।

তাহলে কেমন হওয়া উচিত প্রকৃতি-পরিবেশ বান্ধব বাজেট?

আমাদের প্রস্তাব একটি কাঠামোগত সংস্কারের দৃষ্টিভঙ্গি:

ক) প্রকৃতিকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি: বাংলাদেশের উচ্চ আদালতের নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে প্রদত্ত রায়কে মেনে সরকারের দ্রুত সমুদ্র, বন, পাহাড়কে ‘জীবন্ত সত্তা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ‘প্রাকৃতিক অধিকার আইন’ প্রণয়ন করুন, যা প্রকৃতি ন্যায্যতাও। শুধু প্রকল্প বা কর্মসূচিতে প্রকৃতি নয়, প্রকৃতির নিজস্ব অস্তিত্বকে স্বীকার করুন এবং প্রাকৃতিক আইন মেনে অর্থায়ন করুন।

খ) ভূমি ও নদী ব্যবস্থাপনায় ন্যায্যতা: ঝুঁকির ভিত্তিতে অগ্রাধিকার দিন। সুনামগঞ্জ, রংপুর, কুড়িগ্রামের মতো জেলাগুলোয় পৃথক ‘ঝুঁকি সামলানো তহবিল’ গঠন করা দরকার।

গ) রাজস্ব উৎস হিসেবে সবুজ কর: কার্বন কর, দূষণ ফি ও পরিবেশ সংরক্ষণ ফি থেকে বছরে ৩ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব আনা সম্ভব।

  • ইটভাটা, সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক, দূষণকারী পণ্য ও পরিবহন ও জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর পরিবেশ সুরক্ষা কর এবং কার্বন করারোপ করুন। মাত্র ১০ শতাংশ হারে এ ধরনের করারোপে প্রায় এক থেকে দেড় বিলিয়ন ডলার জোগান দেওয়া সম্ভব

(সূত্র: চেইঞ্জ ইনিশিয়েটিভ স্টাডি, ২০২৪)।

  • বরাদ্দের পরিমাণ: পরিবেশ, জলবায়ু ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে প্রকৃত বা পরিবেশ ও প্রকৃতির ক্ষয়-ক্ষতি বাদে প্রাক্কলিত নেট জিডিপির অন্তত ২০ শতাংশ বরাদ্দ দিতে হবে প্রকৃতির সুরক্ষা এবং কমিউনিটি নেতৃত্বাধীন রেজিলিয়েন্স নিশ্চিতে-

–               কৃষি খাতে: জিডিপির ৫ শতাংশ

–               পানি খাতে: ৫ শতাংশ

–               জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও পুষ্টি খাতে: ৫ শতাংশ

–               প্রাকৃতিক সুরক্ষা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়: ৫ শতাংশ

সুস্থ বাচ্চা জন্ম দিতে না পারা এক মায়ের কান্নায়, গর্ভবতী নারীর ফুসফুসে জমে থাকা ধুলোয়, মাছের খাঁচা ভেসে যাওয়া একজন মৎস্যজীবীর অসহায়তায় সেই খরচ ধরা পড়ে।

এই মুহূর্তে প্রশ্ন একটাই: আমরা কাকে বাঁচাতে চাই?

শুধু দালান, সড়ক আর মেগা প্রকল্পে কষ্টার্জিত বিনিয়োগ করলেও পানি, নিচে মাটি থাকবে তো? নদী কি থাকবে? মাছ এবং বীজ কি মাইক্রোপ্লাষ্টিক মুক্ত থাকবে?

প্রকৃতিকে বাদ দিয়ে তথাকথিত ধ্বংসাত্মক উন্নয়নকে বেছে নিলে পরিণতি কী হয় তা জানার জন্য সভ্যতাগুলো হারিয়ে যাওয়ার ইতিহাস পড়া উচিত ‘আমি সব জানি’ নীতিনির্ধারক এবং বিশেষজ্ঞদের।

প্রকৃতি প্রদত্ত সুজলা সুফলা বাংলাদেশের সাড়ে বারোশো নদী থেকে মাত্র ২৫০ এর মতো নদী বেচে থাকা, নির্মল বাতাসের ঢাকাকে বৈশ্বিক বায়ু দূষণের কেন্দ্রে পরিণত করা, নদীগুলো বিষের উৎসে পরিণত করাকে যারা উন্নয়ন হিসেবে দেখছেন সে সময় বেশি দূরে নয় যে, তাদের সামনে ভূতুরে অবকাঠামো দাঁড়িয়ে থাকবে-ঝড়ের মুখে, পানির সংকটে, বাতাসের বিষে প্রতিনিয়ত জীবন সংহার হবে।

একটি ন্যায্য, সহনশীল এবং প্রাকৃতিক অধিকার সুরক্ষাবান্ধব বাজেট বাজেট শুধু মানুষের নয়, প্রকৃতি ন্যায্যতা এবং স্থায়িত্বশীলতাও নিশ্চিত করবে।

এম জাকির হোসেন খান ।। প্রধান নির্বাহী, চেইঞ্জ ইনিশিয়েটিভ এবং প্রকৃতির সার্বভৌমত্ব, প্রাকৃতিক অধিকারভিত্তিক শাসন কাঠামার প্রণেতা

ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই নির্বাচন, এদিক-সেদিক যাওয়ার সুযোগ নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৩ মে, ২০২৫, ১:৫৬ অপরাহ্ণ
ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই নির্বাচন, এদিক-সেদিক যাওয়ার সুযোগ নেই

পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে। এই সময়সীমার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।

শুক্রবার (২৩ মে) দুপুরে রাজধানীতে একটি প্রোগ্রাম শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা জানান।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ইতোমধ্যে পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি বলেন, আমি প্রথম থেকেই বলে এসেছি যে উনি (প্রধান উপদেষ্টা) একটা সময় দিয়েছেন—ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তার একদিনও এদিক-সেদিক হওয়ার কোনো সুযোগ আমাদের পক্ষ থেকে নেই। কাজেই এগুলো নিয়ে অন্য ধরনের কোনো কথা বলারও কোনো সুযোগ হওয়া উচিত নয়।

ড. ইউনূসের পদত্যাগ নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় রিজওয়ানা হাসান বলেন, এখন কিছু কিছু গুরু দায়িত্ব আছে, সেগুলো পালনের সঙ্গেও তো মাসের একটা সম্পর্ক থাকতে পারে। যদি কোনো কিছু বলার থাকে, আমি নির্বাচনের প্রশ্নেও বলেছি, দায়িত্ব পালনের প্রশ্নেও বলেছি—ওটা আপনারা ওনার (প্রধান উপদেষ্টার) কাছ থেকেই শুনবেন।

চাপের প্রসঙ্গে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ধরুন, প্রত্যাশার একটা চাপ হচ্ছে যে আমরা পারফর্ম করতে পারছি কি না। আমাদের বিবেচনায় ওটাই একমাত্র চাপ। এর বাইরে আর কোনো চাপ নেই।

তিনি আরও বলেন, আপনি এখন এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় মিটিংয়ে যাবেন—সচিবালয় থেকে যমুনা—যেতে পারবেন না, রাস্তা বন্ধ। কেন রাস্তা বন্ধ? এরকম অনেক সমস্যা আছে, যেগুলো আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করা যায়। চাপ হচ্ছে আমাদের নিজেদের পারফরম্যান্সের। আমরা পারফর্ম করতে পারছি কি পারছি না।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমরা যদি আমাদের দায়িত্ব পালন করতে পারি, তাহলে আমাদের দায়িত্ব থাকাটা প্রাসঙ্গিক। আমরা যদি দায়িত্ব পালন করতে না পারি, আমাদের যার যার নিজস্ব কাজ আছে, তাহলে দায়িত্ব পালন করার আর প্রাসঙ্গিক থাকলো কি না?

আপনার কি দায়িত্ব পালন করতে পারছেন? এমন প্রশ্নের জবাব তিনি বলেন, অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে অনেক দূর এগিয়েছি। সংস্কার কমিশনগুলো তাদের প্রতিবেদন দিয়েছে, সেই প্রতিবেদনের ওপর রাজনৈতিক ঐক্য গড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সব রাজনৈতিক দল সেখানে পার্টিসিপেট করছে। এটা কি পারা না? এটাতো পারা। আমরা একটা নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বলে দিয়েছি যে, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে সেটাও একটা পারা। বিচার ট্রাইব্যুনাল একটা ছিল এখন দুইটা হয়েছে, আগামীকাল থেকে ট্রায়ালার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে, কিন্তু জিনিসগুলা স্মুথ যেতে হবে। এগুলোতে কোনো রকমের প্রতিবন্ধকতা না আসে, সেটা প্রথম থেকে একটা আহ্বান ছিল। এই কাজগুলো আমরা সঠিক প্রক্রিয়াতে শেষ করতে চাই।

‘গতকালকে আমাদের মিটিংয়ের পর অনেকক্ষণ আলোচনা করেছি। মোটা দাগে আমাদের দায়িত্ব তিনটা। তিনটায় কঠিন কঠিন দায়িত্ব। একটা দায়িত্ব হচ্ছে সংস্কার, আরেকটা দায়িত্ব হচ্ছে বিচার, আরেকটা দায়িত্ব হচ্ছে নির্বাচন। শুধুমাত্র নির্বাচন করার জন্য আমরা দায়িত্ব নেইনি।’

তিনি বলেন, আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে যার যত দাবি আছে সবগুলো নিয়ে রাস্তায় বসে যাচ্ছে। রাস্তা আটকে দিচ্ছে, একদম ঢাকা শহর অচল করে দিচ্ছে। সে অচলাবস্থা নিরসনে আমরা কিছু করতে পারছি কি না? আমরা আগেও বলেছি আমরা ক্ষমতার নেইনি দায়িত্বে আছি। এই দায়িত্ব পালন করা তখনই আমাদের জন্য সম্ভব হবে, যখন আমরা সবার সহযোগিতা পাব। প্রত্যাশার বিষয়টা এক, আর দায়িত্ব পালন করার বিষয়টা আরেক। আমরা চিন্তা করেছি আসলে দায়িত্ব পালন করতে পারছে কি না।

গুজবে কান দেবেন না, বিভ্রান্ত হবেন না : সেনাবাহিনী

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৩ মে, ২০২৫, ১:৫৪ অপরাহ্ণ
গুজবে কান দেবেন না, বিভ্রান্ত হবেন না : সেনাবাহিনী

জনগণকে গুজবে কান না দেওয়ার অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

শুক্রবার দুপুরে ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সচেতনতামূলক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে লেখা এক পোস্টে এ আহ্বান জানায় বাহিনী।

সেনাবাহিনী বলছে, সম্প্রতি একটি স্বার্থান্বেষী মহল বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর লোগো ব্যবহার করে একটি ভুয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে, যার মাধ্যমে সাধারণ জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টির পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী ও জনগণের মধ্যে বিভেদ তৈরির অপচেষ্টা চলছে।

পোস্টে আরও লেখা হয়, গুজবে কান দেবেন না, বিভ্রান্ত হবেন না। সত্যতা যাচাই করুন, সচেতন থাকুন।

এ পোস্টের সঙ্গে ভুয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিটির ছবিও জুড়ে দেওয়া হয়।

"> ">
প্রকৃতির ভাষা ও প্রাণের চাহিদা বোঝা বাজেট ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই নির্বাচন, এদিক-সেদিক যাওয়ার সুযোগ নেই গুজবে কান দেবেন না, বিভ্রান্ত হবেন না : সেনাবাহিনী বীরগঞ্জে ভুয়া ফেসবুক আইডি থেকে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন ভারত এই পরাজয় কখনোই ভুলতে পারবে না : শেহবাজ লন্ডনে সালমান এফ রহমানের ছেলে শায়ানের সম্পত্তি জব্দ এখনই রাজনীতিতে আসছেন না ডা. জোবাইদা রহমান ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখেই বাঁচতে চায় মুরসালিম এবার প্রকৃতির তাণ্ডব কাশ্মিরে, তাপমাত্রার রেকর্ড ভাঙল ৫৭ বছরের গরুর মাংসে আগুন-মাছেও অস্বস্তি, মুরগিতে ঝুঁকছেন ক্রেতারা কানের উদ্দেশে রওনা দিলেন আলিয়া বাজারে সবজির দামে কিছুটা স্বস্তি ‘পদত্যাগের’ কথা ভাবছেন ড. ইউনূস, না করার অনুরোধ নাহিদের জুলাই ঐক্য বিনষ্টের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ঢাবিতে বিক্ষোভ উপদেষ্টা মাহফুজের পর হাসনাতেরও ঐক্যের ডাক প্রধান উপদেষ্টাকে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার আহ্বান জামায়াত আমিরের ব্রাইডাল লুকে মুগ্ধতা ছড়ালেন অপু বিশ্বাস না আছে মরার ভয় না আছে হারাবার কিছু : আসিফ মাহমুদ গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পেলেন ট্টাইব্যুনালের তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন নাহিদ ইসলাম সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়াদের পরিচয় প্রকাশ করল আইএসপিআর বীরগঞ্জে বীজ ডিলার ও কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত চলমান আন্দোলনের বিষয়ে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের প্রেস বিজ্ঞপ্তি নাগরিক ছাত্র ঐক্য সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা বীরগঞ্জে ট্রাক-মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৪ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু শেরপুরের বিমলের বাড়িতে মাদকের আখরা, যেন দেখার কেউ নেই! ভবানীপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের উদ্যোগে ফুটবল টুর্ণামেন্ট হবিগঞ্জের থানা পুলিশ অঞ্জাত কিশোরীর লাশ উদ্ধারের পরিচয় সনাক্তে ফেইসবুকে পোস্ট বীরগঞ্জে এনসিপি নেতা হাসনাতের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল নানা কর্মসূচীর মধ্যদিয়ে বীরগঞ্জে আন্তর্জাতিক মহান মে দিবস পালিত