খুঁজুন
শুক্রবার, ২৩শে মে, ২০২৫, ৯ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২

মব জাস্টিস : আড়ালে ভুল তথ্যের প্রচার ও বিচারবহির্ভূত হত্যা

মাইশা তাবাসসুম অনিমা প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৪, ৯:১৭ পূর্বাহ্ণ
মব জাস্টিস : আড়ালে ভুল তথ্যের প্রচার ও বিচারবহির্ভূত হত্যা

ঢাকার বাড্ডার একটি গলিতে, ২০১৯ সালের এক ভয়াল দিনে বাতাসে এক ধরনের চাপা উত্তেজনা ভাসছিল। তাসলিমা বেগম রেনু তার সন্তানের ভর্তির খোঁজ নিতে একটি স্কুলের সামনে হাজির হন। ব্যস্ত জীবনের স্রোতে গা ভাসানো সেই এলাকার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছিল শিশু অপহরণের গুজব।

মুহূর্তের মধ্যেই সেই ফিসফাস রূপ নেয় কঠিন সন্দেহে, আর চোখের পলকে একদল লোক জড়ো হয়ে যায়। ভুল তথ্য বিশ্বাসে পরিণত হয়, সন্দেহ রূপান্তরিত হয় হিংস্রতায়, আর কয়েক মিনিটের মধ্যে রেনুকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা ছিল—একটি গুজব, একটি ত্রুটিপূর্ণ মানসিকতার ফল, যা ভয় এবং ভুল তথ্য দ্বারা উসকে ওঠে তাৎক্ষণিক বিচার দাবি করে।

এই ঘটনাটি বাংলাদেশের জন্য নতুন নয়। জনগণ দীর্ঘদিন ধরে কার্যকর আইন-শৃঙ্খলার অভাবে ভুগছিল। যে দাবি যাচাই করা হয়নি, তা দ্রুত সহিংসতায় পরিণত হয়, যেমন উত্তেজিত জনতার নিজেদের হাতে আইন তুলে নেওয়া।

রেনুর মৃত্যুটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের তফাজ্জল হোসেনের হত্যাকাণ্ডের মতোই, যেখানে তাকে চোর সন্দেহে ছাত্ররা পিটিয়ে হত্যা করে। প্রতিটি ঘটনাতেই, অভিযুক্তদের কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি তাদের নির্দোষ প্রমাণ করার, আর জনতার রায় ছিল দ্রুত এবং প্রাণঘাতী।

অনেকগুলো ঘটনার মধ্যে একটি সাধারণ সূত্র হচ্ছে ভুল তথ্যের ভূমিকা। মব জাস্টিস-এর উৎপত্তি খুঁজে পাওয়া যায় মানব সভ্যতার প্রাথমিক পর্যায়ে, যখন আনুষ্ঠানিক বিচারব্যবস্থা বিকশিত হয়নি বা অধিকাংশ জনগণের কাছে তা অপ্রাপ্য ছিল। সেই সময়, বিভিন্ন সম্প্রদায়, যারা কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল, নিজেদের উদ্যোগেই শৃঙ্খলা বজায় রাখত এবং অপরাধীদের শাস্তি দিত। এই ধরনের পরিস্থিতিতে বিচার প্রক্রিয়া ছিল দ্রুত, কিন্তু খুব কম ক্ষেত্রেই তা ন্যায্য ছিল। নিরপেক্ষতার অভাবে এই ধরনের বিচার প্রক্রিয়া প্রায়ই প্রতিশোধে পরিণত হতো, যেখানে ন্যায়বিচারের চেয়ে প্রতিহিংসাই ছিল চূড়ান্ত লক্ষ্য।

ঔপনিবেশিক আমলে দক্ষিণ এশিয়ার আইন ও প্রশাসনিক ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয়েছিল, তবে জনগণের মাঝে সম্প্রদায়ভিত্তিক বিচারব্যবস্থার ওপর নির্ভরতা পুরোপুরি দূর হয়নি। কার্যকর এবং দ্রুত আইনি প্রক্রিয়া না থাকায়, গ্রামীণ জনগোষ্ঠী নিজেদের হাতে আইন তুলে নিত, যা তৎকালীন নামে গণপিটুনি (বর্তমান মব জাস্টিস) চলমান সমস্যাকে আরও জোরালো করেছে। আজকের বাংলাদেশ এখনো এই ঐতিহ্যের প্রভাব মোকাবিলা করছে, যেখানে বিচারবহির্ভূত শাস্তির ঘটনা বারবার ঘটছে এবং এটি সমাজের একটি গভীর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এটি কেবল দক্ষিণ এশিয়াতেই নয়, আঠারো থেকে উনিশ’শো শতাব্দীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত শহরগুলোয়ও এমন ঘটনা দেখা গিয়েছিল। এই সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলো, যা প্রতিষ্ঠিত সরকারি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা থেকে অনেক দূরে ছিল, প্রায়ই আইনহীনতার কবলে পড়ত।

উনিশ শতকের শেষ থেকে বিশ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত, হাজার হাজার আফ্রিকান আমেরিকানকে বিচার ছাড়াই গণপিটুনির মাধ্যমে হত্যা করা হয়—‘ন্যায়বিচার’-এর নামে এই নির্মম কাজগুলো সংঘটিত হতো।

এই পরিস্থিতিতে, ‘ভিজিল্যান্স কমিটি’ বা সজাগ কমিটি গঠন করা হয়, যেখানে নাগরিকরা নিজেরাই শৃঙ্খলা বজায় রাখার এবং অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার দায়িত্ব নেয়, প্রায়শই বিচারবহির্ভূত উপায়ে। যা শুরু হয়েছিল কমিউনিটি পুলিশের বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে, তা ধীরে ধীরে পরিণত হয়েছিল নিছক প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপে, যেখানে যুক্তি বা ন্যায়বিচারের চেয়ে আবেগ প্রবণতা বেশি প্রাধান্য পেয়েছিল।

মার্কিন ইতিহাসে মব জাস্টিস-এর সবচেয়ে কুখ্যাত উদাহরণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো কু ক্লাক্স ক্লান (Ku Klux Klan) এর উত্থান, যা ছিল একটি শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী সংগঠন, যারা গৃহযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে আফ্রিকান আমেরিকানদের ওপর ত্রাসের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল। কু ক্লাক্স ক্লান লিঞ্চিং এবং অন্যান্য ধরনের গণহিংসার আশ্রয় নেয়, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলে, জাতিগত শ্রেণিবিন্যাস বা আধিপত্য বজায় রাখার জন্য।

উনিশ শতকের শেষ থেকে বিশ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত, হাজার হাজার আফ্রিকান আমেরিকানকে বিচার ছাড়াই গণপিটুনির মাধ্যমে হত্যা করা হয়—‘ন্যায়বিচার’-এর নামে এই নির্মম কাজগুলো সংঘটিত হতো। এসব সহিংসতার পেছনে সুরক্ষার ছল থাকলেও, আসলে এগুলো ছিল বর্ণগত নিপীড়ন ও সন্ত্রাস কায়েম করার হাতিয়ার।

মব জাস্টিস ১৯৯৪ সালের রুয়ান্ডার গণহত্যার মাধ্যমে সবচেয়ে বিধ্বংসী রূপে পুনরায় আবির্ভূত হয়ে এক কালো অধ্যায় রচনা করে। এই মর্মান্তিক অধ্যায়ে পুরো সম্প্রদায় একে অপরের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, যা জাতিগত ঘৃণা ও ভয়ের দ্বারা প্ররোচিত হয়েছিল।

এই গণহত্যার সূচনা হয়েছিল রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে, যা হুতু এবং তুতসি জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী উত্তেজনাকে আরও উসকে দেয়। সহিংসতা যখন তীব্র আকার ধারণ করে, তখন উন্মত্ত জনতা রাস্তায় নেমে আসে এবং প্রতিবেশীদের নির্মমভাবে হত্যা করতে শুরু করে, যা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জঘন্য ঢেউ সৃষ্টি করে। এটি প্রমাণ করে যে কীভাবে গণপিটুনি, ভয়, ভুল তথ্য এবং রাজনৈতিক ম্যানিপুলেশনের ফল দ্রুত ব্যাপক হত্যাকাণ্ডে পরিণত হতে পারে।

রুয়ান্ডার ঘটনায়, কার্যকর সরকারি হস্তক্ষেপের অভাব এবং জবাবদিহিতার অনুপস্থিতি মব জাস্টিস এবং নিয়ন্ত্রণহীন গণহত্যায় পরিণত করেছিল, যার ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হয়েছে পুরো জাতি ও জনগণকে।

লিঞ্চিং এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সেইসব সমাজে ‘ন্যায়বিচার’ প্রতিষ্ঠার একটি উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে, যারা নিজেদের রাষ্ট্র কর্তৃক পরিত্যক্ত মনে করে। বাংলাদেশেও যেমনটি ঘটে, এখানে ভুল তথ্য এবং গুজব প্রায়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা দ্রুত সম্প্রদায়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং বিচার প্রক্রিয়া ছাড়াই ত্বরিত ও নির্মম শাস্তি কার্যকর করার চেষ্টা করে একটি উত্তেজিত জনতা।

মব সাইকোলজি হলো, ব্যক্তিরা যখন কোনো দলের অংশ হিসেবে থাকে, তখন তারা সাধারণত ভিন্নভাবে আচরণ করে, যা তাদের এককভাবে কাজ করার সময়ের আচরণের সঙ্গে বিপরীত হতে পারে। জনতার অংশ হিসেবে মানুষ ‘দায়িত্বের বিভাজন’ অনুভব করে, যার অর্থ হলো সহিংস কর্মকাণ্ডের জন্য অপরাধবোধ বা দায়িত্ব অনেক কম অনুভূত হয়, কারণ তা অনেকের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। যে ব্যক্তিগত বিবেক সাধারণত কাউকে সহিংস কর্মকাণ্ডে জড়াতে বাধা দেয়, তা জনতার সম্মিলিত ইচ্ছার ছায়ায় ম্লান হয়ে যায়।

মব জাস্টিস-এর ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুতর অধিকার লঙ্ঘনের একটি হলো মানবাধিকারের চরম অবমাননা। মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সুরক্ষা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা মব জাস্টিস এর মাধ্যমে নিয়মিত লঙ্ঘিত হয়: ন্যায়সঙ্গত বিচারের অধিকার (অনুচ্ছেদ ১০) এবং প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত নির্দোষ থাকার অধিকার (অনুচ্ছেদ ১১)। মব জাস্টিস এই সুরক্ষাগুলোর কোনোটিকেই সম্মান করে না; বরং অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আইনগত প্রতিরক্ষার সমস্ত সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে, তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ না দিয়ে নির্মম শাস্তি প্রদান করে।

মব জাস্টিস-এর স্থায়িত্ব আমাদের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচারব্যবস্থা এবং পুরো সমাজের ভূমিকা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করে। এই সমস্যার সমাধান করার জন্য প্রথমে মিথ্যা তথ্যের বিস্তার বন্ধ করতে হবে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

মানুষকে যাচাইবিহীন তথ্য ছড়ানোর বিপদ সম্পর্কে সচেতন করতে জনসচেতনতা কর্মসূচি চালু করা জরুরি, যা প্রায়ই মব জাস্টিস এর সহিংসতা উসকে দেয়। তাছাড়া, সমাজের মধ্যে সংলাপ এবং বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য জায়গা তৈরি করা যেতে পারে, যা উত্তেজনা সহিংসতায় পরিণত হওয়ার আগেই থামাতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে, সমাজ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং বিচারব্যবস্থার মধ্যে আস্থা তৈরি করাই মব জাস্টিস-এর মতো সমস্যার সমাধানের মূল চাবিকাঠি।

একাডেমিক ভাষায়, ন্যায়বিচার বলতে আমরা ‘ন্যায়সঙ্গত প্রক্রিয়া’ (due process), ‘দোষ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত নির্দোষ থাকার ধারণা’ (the presumption of innocence) এবং ‘আইনের শাসন’ (the rule of law) এর কথা বলি।

মব জাস্টিস-এর কারণে ব্যক্তিগত স্তরে, নির্দোষ প্রাণ হারায়, পরিবারগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং সমাজের মধ্যে ভয়ের বাতাবরণ সৃষ্টি হয়।

এগুলো কেবল আইনগত ধারণা নয়, সমাজের জনগণের কাছে করা প্রতিশ্রুতি—এমন প্রতিশ্রুতি যে তারা সুরক্ষিত থাকবে, তাদের অধিকার সংরক্ষিত হবে এবং কোনো ব্যক্তিকে ন্যায়বিচার ও নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থার বাইরে বিচার করা হবে না কিন্তু বাংলাদেশে, যেখানে এই প্রতিশ্রুতির ওপর থেকে মানুষের বিশ্বাস ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে, সেখানে অসংখ্য মানুষ তাদের শেষ মুহূর্ত কাটিয়েছে আদালতের পরিবর্তে জনতার হাতের আঘাতে। গণপিটুনি ন্যায়বিচার বা সমাধান কিছুই দেয় না। এটি দ্রুত হতে পারে, কিন্তু এটি অন্ধ—তথ্য বা সত্য নয়, বরং আবেগ, ভয় এবং প্রতিশোধ দ্বারা চালিত।

মব জাস্টিস-এর ভুক্তভোগীরা কেবল পরিসংখ্যান নয়; তারা ছিলেন কারও মা, বাবা পুত্র-কন্যারা—তাদের একটি মানবিক জীবন ছিল, যাদের একমাত্র ‘অপরাধ’ ছিল গণ-উন্মাদনার সহিংস ঝড়ে ধরা পড়া। তাদের মৃত্যু নিষ্ঠুর ও অকারণ, সমাজের বিবেকের ওপর এক অমোচনীয় দাগ, যেখানে ভয় এবং ভুল তথ্য যুক্তি ও মানবতার ওপর বিজয়ী হয়েছে। প্রত্যেকটি গণপিটুনির ঘটনা শুধু মানবাধিকারের লঙ্ঘন নয়, এটি আমাদের সম্মিলিত মানবতার চরম ব্যর্থতা।

ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে, আমাদের কঠিন সত্যের মুখোমুখি হতে হবে: যত গভীরই হোক না কেন তাৎক্ষণিক ন্যায়বিচারের প্রতি আমাদের আকাঙ্ক্ষা, কোনোভাবেই নির্দোষের রক্তপাতকে ন্যায়সঙ্গত করা যায় না। সামনের পথ সহজ নয়, কিন্তু স্পষ্ট। বাংলাদেশকে তার আইনি প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করতে হবে, দুর্নীতি ও অদক্ষতাকে সমূলে উৎপাটন করতে হবে, যাতে মানুষ আবারও জনতার পরিবর্তে আদালতের প্রতি আস্থা রাখতে পারে।

মাইশা তাবাসসুম অনিমা ।। প্রভাষক, ক্রিমিনোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

‘পদত্যাগের’ কথা ভাবছেন ড. ইউনূস, না করার অনুরোধ নাহিদের

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৩ মে, ২০২৫, ১২:৩১ পূর্বাহ্ণ
‘পদত্যাগের’ কথা ভাবছেন ড. ইউনূস, না করার অনুরোধ নাহিদের

দেশের সর্বত্র উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়েছে পদত্যাগের চিন্তা করছেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এমন গুঞ্জনের মধ্যে তার সঙ্গে দেখা করে আসলেই পদত্যাগ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ভাবছেন বলে নিশ্চিত করলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। অবশ্য তিনি যেন এমন সিদ্ধান্ত না নেন সেই অনুরোধ জানিয়েছেন সাবেক তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।

বৃহস্পতিবার (২২ মে) সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গিয়ে তার সাথে সাক্ষাৎ করেন নাহিদ ইসলাম। পরে বিবিসি বাংলাকে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘দেশের চলমান পরিস্থিতি, স্যারেরতো পদত্যাগের একটা খবর আমরা আজকে সকাল থেকে শুনছি। তো ওই বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে স্যারের সাথে দেখা করতে গেছিলাম। প্রধান উপদেষ্টা দেশের চলমান পরিস্থিতিতে কাজ করতে পারবেন না এমন শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।’

এসময় তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদও ছিলেন বলে জানা গেছে।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘স্যার বলছেন আমি যদি কাজ করতে না পারি… যে জায়গা থেকে তোমরা আমাকে আনছিলা একটা গণঅভ্যুত্থানের পর, দেশের পরিবর্তন, সংস্কার…। কিন্তু যেই পরিস্থিতি যেভাবে আন্দোলন বা যেভাবে আমাকে জিম্মি করা হচ্ছে। আমিতো এভাবে কাজ করতে পারবো না। তো রাজনৈতিক দলগুলা তোমরা সবাই একটা জায়গায়, কমন জায়গায় না পৌঁছাতে পারো।’

প্রধান উপদেষ্টাকে পদত্যাগের মতো সিদ্ধান্ত না নিতে আহ্বান জানিয়েছেন নাহিদ। এ প্রসঙ্গে নাহিদ বলেন, ‘আমাদের গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা এবং জাতীয় নিরাপত্তা ও দেশের ভবিষ্যৎ সবকিছু মিলিয়ে উনি যাতে শক্ত থাকেন এবং সব দলকে নিয়ে যাতে ঐক্যের জায়গায় থাকেন, সবাই তার সাথে আশা করি কো-অপারেট করবেন।’

প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগের বিষয়টি বিবেচনা করছেন জানিয়ে নাহিদ বলেন, ‘হ্যাঁ, যদি কাজ করতে না পারেন, থাকবেন, থেকে কী লাভ। উনি বলছেন উনি এ বিষয়ে ভাবছেন। ওনার কাছে মনে হয়েছে পরিস্থিতি এরকম যে তিনি কাজ করতে পারবেন না।’

পদত্যাগের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার এখনকার মনোভাবের বিষয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এখন ওনি যদি রাজনৈতিক দল তার পদত্যাগ চায়… সেই আস্থার জায়গা, আশ্বাসের জায়গা না পাইলে উনি থাকবেন কেন?’

জুলাই ঐক্য বিনষ্টের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ঢাবিতে বিক্ষোভ

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৩ মে, ২০২৫, ১২:২৮ পূর্বাহ্ণ
জুলাই ঐক্য বিনষ্টের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ঢাবিতে বিক্ষোভ

জুলাইয়ের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক শক্তির মধ্যে ফাটল তৈরি ও ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ র‍্যালি ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৮০টি সংগঠনের ঐকবদ্ধ প্লাটফর্ম ‘জুলাই ঐক্য’।

আজ বৃহস্পতিবার (২২ মে) রাত ১১ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে  প্রতিবাদ র‌্যালি শুরু হয়ে শাহবাগ মোড় ঘুরে আবারও রাজু ভাস্কর্যের এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

সমাবেশে অংশ নেওয়া সংগঠনগুলোর নেতারা বলেন, “যে ঐক্য নিয়ে আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থান করেছিলাম সে ঐক্য ভাঙতে দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্র হচ্ছে। যারা ষড়যন্ত্র করে জুলাই ঐক্যকে বিনষ্ট করতে চাইবে জুলাই জনতা তাদেরকে আবারও দিল্লিতে পাঠিয়ে দেবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে আমরা লড়ে যাবো। ভারতীয়, মার্কিন আগ্রাসনে ও দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জুলাই জনতা বুক পেতে আবার রাজপথে নেমে আসবে। আমরা আবারও বুকের তাজা রক্ত দেবো তবুও বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নষ্ট হতে দেবো না।”

এ সময়  বক্তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “সচিবালয়ে ফ্যাসিবাদের অনেক দোসর বসে আছে। ৩১ মে এর মধ্যে সচিবালয় থেকে ফ্যাসিবাদের সকল দোসর  অপসারণ না করলে সচিবালয় ঘেরাও হবে।”

জুলাই ঐক্যের আপ বাংলাদেশের প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল মিনহাজ বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে যে সকল ভারতীদের পুনর্বাসন করা হয়েছে তাদের চিহ্নিত করে অতি দ্রুত অপসারণ করতে হবে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “জুলাইয়ের শহীদদের রক্তের ওপর আপনার সরকার গঠিত। আমরা আপনার ওপর আস্থা রাখতে চাই। জুলাইয়ের ঐক্যকে যারা নষ্ট করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। অতি দ্রুত জুলাই ঘোষণাপত্র ঘোষণা দেন এবং আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করুন।”

জুলাই ঐক্যের অন্যতম সংগঠক মোসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের সুচিকিৎসার না দিয়ে উপদেষ্টারা ক্ষমতা উদযাপন শুরু করেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে ভারতীয় আধিপত্যবদের দোসরা আবারও দেশকে ভারতের কাছে তুলে দিতে চায়। উপদেষ্টা পরিষদে ভারতীয় কোনো দালাল থাকতে পারবে না। জুলাই যোদ্ধারা বেঁচে থাকতে তা সফল হবে না। এবার রাজপথে নামতে হলে আপনাদের উৎখাত করে দেশ ছাড়া করা হবে। যারা জুলাই ঐক্যের ফাটল ধরানোর চেষ্টা করছে তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থা করুন।”

এছাড়াও জুলাই স্পিরিট ধরে রেখে নতুন বাংলাদেশ গড়তে সকল ভেদাভেদ ভুলে সকল রাজনৈতিক ও সমাজিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

এ সময় মোসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ জুলাই ঐক্যের পক্ষ থেকে তিন দফা দাবি জানান। জুলাই ঐক্যের ৩ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে—

ক) জুলাইয়ের সকল শক্তিকে বিনষ্ট করতে যে সকল ভারতীয় এজেন্ট কাজ করছে তাদের অবিলম্বে খুজে বের করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

খ) উপদেষ্টা পরিষদে যারা ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে ব্যাতিব্যাস্ত অবিলম্বে তাদের অপসারন করে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন করতে হবে।

গ) অবিলম্বে জুলাই ঘোষণাপত্র যথা সময়ে দিতে হবে।

উপদেষ্টা মাহফুজের পর হাসনাতেরও ঐক্যের ডাক

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৩ মে, ২০২৫, ১২:০৪ পূর্বাহ্ণ
উপদেষ্টা মাহফুজের পর হাসনাতেরও ঐক্যের ডাক

আগের সব ‘বিভাজনমূলক বক্তব্য ও শব্দচয়নের’ জন্য দুঃখ প্রকাশ করে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম দেশপ্রেমিক শক্তির ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন। তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে একই আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহও।

হাসনাত বলেছেন, “এ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য এবং পতিত ফ্যাসিবাদের নগ্ন, দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র থেকে মুক্তির জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।”

বৃহস্পতিবার (২২ মে) উপদেষ্টা মাহফুজ আব্দুল্লাহ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই নিজের ভেরিফায়েড আইডিতে এমন আহ্বান জানান হাসনাত আব্দুল্লাহ।

সেখানে তিনি লিখেচেন, “জুলাইয়ের ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তির প্রতি আহ্বান—যে বিভাজনটা অপ্রত্যাশিতভাবে আমাদের মধ্যে এসেছিল, সেই বিভাজনকে দেশ ও জাতির স্বার্থে মিটিয়ে ফেলতে হবে।”

তিনি সবাইকে সতর্ক করে বলেন, “মনে রাখবেন আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পতনে দেশে-বিদেশে অনেকে নাখোশ হয়ে আছে। এই নাখোশ বান্দারা আমাদের বিভাজনের সুযোগ নিতে নিতে আজকের এই অস্থিতিশীল দিন এনেছে। আমরা সবাই এক হয়েছিলাম বলেই দীর্ঘ দেড় যুগের শক্তিশালী ফ্যাসিবাদকে তছনছ করতে পেরেছিলাম। আমরা খণ্ড-বিখণ্ড হলে পতিত ফ্যাসিবাদ ও তার দেশি-বিদেশি দোসরেরা আমাদের তছনছ করার হীন পাঁয়তারা করবে।”

হাসনাত বলেন, “দেশ ও জাতির প্রতি দায় এবং দরদ আছে বলেই আমরা এক হয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়েছিলাম। দেশ ও জাতির জন্যই এবার আমাদের এক হয়ে আমাদের স্বদেশকে বিনির্মাণ করতে হবে। কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থের জন্য এই ঐক্য নয়, বরং আমাদের দেশের জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনও বিকল্প নেই।”

"> ">
‘পদত্যাগের’ কথা ভাবছেন ড. ইউনূস, না করার অনুরোধ নাহিদের জুলাই ঐক্য বিনষ্টের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ঢাবিতে বিক্ষোভ উপদেষ্টা মাহফুজের পর হাসনাতেরও ঐক্যের ডাক প্রধান উপদেষ্টাকে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার আহ্বান জামায়াত আমিরের ব্রাইডাল লুকে মুগ্ধতা ছড়ালেন অপু বিশ্বাস না আছে মরার ভয় না আছে হারাবার কিছু : আসিফ মাহমুদ গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পেলেন ট্টাইব্যুনালের তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন নাহিদ ইসলাম সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়াদের পরিচয় প্রকাশ করল আইএসপিআর বীরগঞ্জে বীজ ডিলার ও কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত চলমান আন্দোলনের বিষয়ে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের প্রেস বিজ্ঞপ্তি নাগরিক ছাত্র ঐক্য সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা বীরগঞ্জে ট্রাক-মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৪ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু শেরপুর সীমাবাড়ি ইউনিয়নের কদিম হাঁসড়া গ্রামে বিমলের বাড়িতে মাদকের আখরা, যেন দেখার কেউ নেই রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে গ্রাহক সেবার মানোন্নয়নে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে বড় ধরনের বদলি! ভবানীপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের উদ্যোগে আরাফাত রহমান কোকো ফুটবল টুর্ণামেন্ট উদ্বোধন হবিগঞ্জের বানিয়াচং থানা পুলিশ অঞ্জাত কিশোরীর লাশ উদ্ধারের পরিচয় সনাক্তে ফেইসবুকে পোস্ট বীরগঞ্জে এনসিপি নেতা হাসনাতের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল নানা কর্মসূচীর মধ্যদিয়ে বীরগঞ্জে আন্তর্জাতিক মহান মে দিবস পালিত বীরগঞ্জে মহান শ্রমিক দিবস পালিত ছোনকায় মহান মে দিবস উপলক্ষে বর্নাঢ্য র‌্যালী শেষে শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পন কাহারোলে স্কাউটস দিবস উপলক্ষে র‍্যালি,পরিষ্কার- পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারের যন্ত্রাংশ চুরি করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তির মৃত্যু দুদকের আকস্মিক অভিযান: বীরগঞ্জ হাসপাতালে দুর্নীতির চিত্র উন্মোচিত শেরপুরে চোরসহ টলিগাড়ি পাবনার ভাঙ্গুরায় আটক শেরপুরে ইউনিয়ন জামাতের সেক্রেটারীর ভাই ৭৫০ পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার শেরপুরে কলেজের অধ্যক্ষের দূর্ণীতির বিরুদ্ধে মানববন্ধন।। শেরপুরে সভাপতি কর্তৃক অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দূর্ণীতি তদন্ত করার কারনে সভাপতি পরিবর্তন নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে শেরপুর উপজেলা বিএনপি’র আনন্দ শোভাযাত্রা শেরপুরে মাদ্রাসা শিক্ষিকার আত্মহত্যা।