স্থায়িত্বশীল ও পরিবেশ বান্ধব বিশ্ব গঠনে
“ইকো ফ্রেইন্ডলী ডেভেলপমেন্ট এ্যাপ্রোচ” গ্রহন করা এখন নেয়া সময়ের দাবী


বৈশ্বিক জলবায়ু পরির্বতন হাজার হাজার প্রানীকুলের জীবন ও জীবিকা এবং প্রকৃতির বিরূপ প্রভাব বিস্তার করছে। উপযুক্ত পরিবেশ আমরা মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করতে পারিনা এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও অর্জন করতে পারিনা। সুতরাং পরিবেশ-বান্ধব পদ্ধতি পুনঃস্থাপন পরিবেশের জন্য সময় উপযোগী উদ্যোগ।
পরিবেশ সম্বন্ধীয় সার্বিক অবস্থা জানার জন্য বীরগঞ্জের ওয়ার্ল্ড ভিশন দুইশত মানুষের মধ্যে একটি জরিপ কাজ পরিচালনা করেন। ঐ জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ৫৮.৫০% পরিবার জৈব রাসায়নিক ব্যবহার করেনা এবং ১০০% পরিবারই মোটেও কম্পোস্ট তৈরি করেনা বরং ৯২.৫০% পরিবার কৃষিকাজে রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করে এবং ৯৩% পরিবার পলিথিন ব্যবহার করছে। ৭৬% পরিবার যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি অনুশীলন করেনা এবং ৩১.৫০% পরিবার স্যানিটারি ল্যাট্রিন ব্যবহার করেনা। ৮৫.৫০% পরিবার পরিবেশগত চুলা ব্যবহার করছে না।
এগুলো সবই জলবায়ু পরিবর্তন ও জাতির জন্য খুবই উদ্বেগ জনক বিষয়। এর নেতিবাচক প্রভাব হিসেবে পৃথিবীতে উষ্ণতা বৃদ্ধি, দারিদ্র্য, ভারী বৃষ্টি এবং বন্যা, খরা, ভেক্টর-বাহিত রোগ, পানি সম্পর্কিত অসুস্থতা, খাদ্য নিরাপত্তা, মানসিক স্বাস্থ্য ইত্যাদি বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষের সচেতনতার অভাব, বন উজাড়, অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা, অনুপযুক্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা ইত্যাদি মূলতঃ প্রতিকূল জলবায়ু পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দু। ইউনিসেফ বাংলাদেশ এর মতে, বাংলাদেশের শিশুরা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে আছে। তাই জলবায়ু পবিবর্তন রোধে জাতি ধর্ম, বর্ন নির্বিশেষে এক সাথে কাজ করা খুবই প্রয়োজন।
অন্যান্য প্রাসঙ্গিক গবেষণায় ও জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা, ঝুঁকি এবং বিপদ সম্পর্কে প্রায় একই রকম প্রমাণ পাওয়া গেছে। জার্মানির একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে কীটনাশক ব্যবহার মানুষের জনসংখ্যা বৃদ্ধি, বন্য জীবনের উপর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এবং ইকো সিস্টেম ইত্যাদির নেতিবাচক পরিণতি তৈরি করে। পলিথিন ব্যবহার বৈশ্বিক উষ্ণতা এবং জীবাশ্ম জ্বালানি হ্রাসের উল্লেখযোগ্য কারণ। যুক্তরাজ্যের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, কম্পোস্ট তৈরির সুবিধা থেকে জৈব অ্যারোসল এবং পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা থেকে উদ্দীপিত বর্জ্য তৈরী হচ্ছে, যাজন স্বাস্থ্য ও পুষ্টির জন্য মারাত্বক ঝুঁকি কারন হয়ে যাচ্ছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার আরেকটি গবেষণায় আরো জানা যায় যে, ইকো ফ্রেন্ডলি অ্যাপ্লিকেশন গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাস, মাটির স্বাস্থ্য ও উর্বরতা পুনরুদ্ধার এবং কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে বৈশ্বিক উষ্ণতা হ্রাসে উল্লেখ যোগ্য ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে। ডব্লিউএইচও ভিশন-২০৩০ এর প্রযুক্তিগত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা এবং বন্যা বৃদ্ধি পেয়েছে যা ভয়ঙ্কর উদ্বেগের কারণ। এটাও ইতিবাচক যে অন-সাইট স্যানিটেশন সিস্টেমের ব্যবহারে নিকাশী এবং বর্জ্য জল পরিশোধনের চেয়ে কম গ্রিনহাউস গ্যাস উৎপন্ন করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে উন্নত রান্নার চুলায় বন উজাড় কমানো, স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং ধীর জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে যা আশাব্যাঞ্জক।
জলবায়ুর দীর্ঘ মেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব এড়াতে এবং পরিবেশ পুনরুদ্ধারের জন্য এখন পরিবেশ বান্ধব পরিমাপ করার সময় এসেছে। অতএব, জনগনকে পারমা কালচার অনুশীলন করতে হবে এবং জৈব রাসায়নিকের পাশাপাশি জমিতে প্রাকৃতিক কীটনাশক এবং রাসায়নিক ব্যবহার করতে হবে। পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করা, সুষ্ঠ আবর্জনা ব্যবস্থাপনা (বর্জ্য হ্রাস, পুনঃব্যবহার ও পূর্নব্যবহার যোগ্য করা) ও মাসিকের উপযুক্ত স্বাস্থ্যবিধি ব্যবস্থাপনাকে উৎসাহিত করা এখন অপরিহার্য্য। শতভাগ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ল্যাট্রিন এবং পরিবেশ বান্ধব চুলা ব্যবহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি বনায়ন বৃদ্ধি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বৈশ্বিক এবং প্রকৃতি উন্নত করতে সরকারী-বেসরকারী সংস্থা, বেসরকারি উদ্যোক্তা, শিক্ষক, ধর্মীয় নেতা, শিশু, যুব এবং সম্প্রদায়ের সাথে যৌথভাবে সম্প্রদায় সচেতনতা, এ্যাডভোকেসী এবং অনুদান উদ্যোগ বাড়ানো সময়োপযোগী।
এই বিষয়গুলিকে বিবেচনায় রেখে ওর্য়াল্ড ভিশন বাংলাদেশ “ইকো ফ্রেন্ডলি ভিলেজ ডেভেলপমেন্ট” এ্যাপ্রোচ গ্রহন করেছে যা বিশ্বকে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ভাবে টিকিয়ে রাখার জন্য বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। তারই ধারাবাহিকতায় বীরগঞ্জ এপি, ওয়ার্ল্ড ভিশন কর্ম এলাকায় ইকো-ফ্রেইন্ডলী ডেভেলপমেন্ট এ্যাপ্রোচ কার্যক্রম আরম্ভ করেছেন।
ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ পরিবেশ বান্ধব কার্যক্রমের অংশ হিসেবে জনগনকে গাছলাগানো, পরিবেশ বান্ধব চুলা, পারমা কালচার অনুশীলন, কম্পোস্ট এবং জৈব কীটনাশক ব্যবহার, স্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার এবং বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবহার, পরিবেশবান্ধব উপাদানগুলি বিষয়ে শিক্ষণ, পরিবেশবান্ধব স্কুলটয়লেট নির্মাণ, সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সহ ইত্যাদি কার্য্যক্রম গ্রহন করতে উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছে। সরকারী-বেসরকারী সংস্থা, প্রাইভেট উদ্যোক্তা এবং জনগন সকলে ইকো ফ্রেন্ডলি ভিলেজ ডেভেলপমেন্ট এ্যাপ্রোচ অনুসরন করলে স্থায়িত্বশীল ও পরিবেশবান্ধব বিশ্ব গঠনে সম্ভব এবং তা একান্ত অব্যশক।
আপনার মতামত লিখুন